দুর্গাপুর: পুলিশের ছদ্মবেশ কেপমারি। তাও আবার দিনেদুপুরে। দুঃসাহসিক এই ছিনতাইবাজির সাক্ষী থাকল বৃহস্পতিবারের বেনাচিতি বাজার (Durgapur Benachiti Bazar)। একেবারে ফিল্মি কায়দায় এই ছিনতাই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার সোনার চেন ও আংটি খুইয়ে এখন আতঙ্কে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী তুষারকান্তি সরকার। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী তুষারকান্তি সরকার। ইস্পাত নগরীর গুরুনানক রোডের বাসিন্দা তিনি। বৃহস্পতিবার মোবাইল সারাই করাতে বেনাচিতি বাজারে গিয়েছিলে তুষারবাবু। বেনাচিতি বাজারের ঘোষ মার্কেটের কাছে একটি মোবাইলের দোকানে ঢুকেছিলেন তিনি। অভিযোগ, সে সময় দোকানে কোনও কর্মী না থাকায় দোকানের মালিক বাজারে অন্যান্য কাজ সেরে আসতে বলেন।
দোকানটি থেকে বেরোনোর পরই বছর তিরিশের এক দীর্ঘকায় যুবক তুষার সরকারের সামনে এসে দাঁড়ান। অভিযোগ, তিনি তুষারবাবুকে বলেন, ‘স্যার আপনাকে রাস্তার ওপারে ডাকছেন’। চোখ তুলে তুষারবাবু দেখেন তাঁর জন্য একজন দাঁড়িয়ে। অভিযোগ, তুষার সরকার ওপারে যেতেই নিজেকে পুলিশ বলে পরিচয় দেন ওই ব্যক্তি। একটি পরিচয় পত্রও দেখান।
এরপরই তুষার সরকারের তল্লাশি শুরু করেন বলে অভিযোগ। এমনকী তুষারবাবুর উপর ওই ‘পুলিশ’ রীতিমতো চোটপাটও করতে থাকেন। ধমকে বলেন, কেন সোনার চেন, আংটি পরে বাজারে এসেছেন? এরপরই দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর গলা থেকে সোনার চেন ও আঙুলের আংটি খুলে ফেলার অনুরোধ করেন ওই ছদ্মবেশী পুলিশ।
তুষারবাবু তা খুলেও ফেলেন। এর পর সেগুলি তুষারবাবুর কাছ থেকে নিয়ে একটি সাদা কাগজে মুড়িয়ে ফের তুষার সরকারের ব্যাগে ঢুকিয়ে দেন ওই ব্যক্তি। ব্যাগটি দড়ি দিয়ে বেঁধেও দেন তিনি। এরপরই তুষার সরকারকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যেতে বলেন। প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও কিছুক্ষণ পরেই ব্যাগ খুলে তুষারবাবু দেখেন কাগজে মুড়িয়ে রাখা সোনা দানা সবকিছু উধাও। রয়েছে কয়েকটি ছোট ছোট নুড়ি পাথর।
এদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে সেই ব্যক্তিকে খোঁজার আগেই বাইকে চেপে চম্পট দেন। কপালে হাত পড়ে যায় ওই ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তির। প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত ইস্পাত কর্মী তুষারকান্তি সরকার। তুষারবাবুর অভিযোগ, স্থানীয় প্রান্তিকা ফাঁড়িতে মিনিট পনেরোর মধ্যে পৌঁছন তিনি। অথচ পুলিশ চোর না ধরার উদ্যোগ নিয়ে তাঁকেই বকাবকি শুরু করে দেয়। দুর্গাপুর থানার অধীনে থাকা প্রান্তিকা ফাঁড়ির পুলিশ আপাতত বাজারের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তদন্ত শুরু করেছে। কিন্তু পুজোর আগে ভরা বাজারে দিনের আলোয় এমন ঘটনায় আতঙ্কিত এলাকার মানুষজন। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
তুষারকান্তি সরকার বলেন, “আমি মোবাইলের দোকানে গিয়েছিলাম। ওরা বলল এখনও কর্মচারি আসেনি, ১১টা নাগাদ আসুন। আমি দোকানটা থেকে বেরিয়ে অন্য কাজগুলি সারছিলাম। এরপর কী মনে হল ভাবলাম বাড়ি চলে যাই, দেরি হচ্ছে। এরপরই ফলপট্টির কাছে আসতেই একটি লম্বা চওড়া ছেলে আমাকে বলল স্যার ডাকছেন। আমি তো অবাক! এরপরই আমাকে ধরে রাস্তার ওপারে নিয়ে গেল। সেখানে একজন আমাকে পুলিশের লোক পরিচয় দিয়ে বলল, এত গোল্ড স্মাগলিং হচ্ছে, আপনি বাজারে সোনা পরে এসেছেন? এরপরই আমাকে বলল, ব্যাগে কী আছে! তল্লাশি করে আমাকে বলল, সোনার জিনিস খুলে ফেলুন। দেখে নিন কী আছে। এরপরই নিজেই একটা সাদা কাগজে ওগুলো মুড়িয়ে আমাকে দিল। এরই মধ্যে একটা বাইক এল আমার সামনে! ওই দু’জন তাতে চেপে বেরিয়ে গেল। এরপর ওই কাগজ খুলে দেখি কিছু নুড়ি পড়ে আছে।”
আরও পড়ুন: COVID-19: করোনা ও তার দুই দোসরই উৎসবের মরসুমে চিন্তার কারণ নবান্নের