AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

‘পেটে ধরিনি তো কী, বুকে আগলে যে বড় করলাম…’, ১২ বছর পর মেয়েকে কেড়ে নিয়ে যেতে এলেন অন্য ‘মা’

আইন কানুনের টানে পিউয়ের এখন ঠাঁই হয়েছে মেদিনীপুর সরকারি হোমে। পিউয়ের চলে যাওয়াতে দেবুর পরিবারে কান্নার রোল!

'পেটে ধরিনি তো কী, বুকে আগলে যে বড় করলাম...', ১২ বছর পর মেয়েকে কেড়ে নিয়ে যেতে এলেন অন্য 'মা'
ডান দিকে- ছবি দোলুই, বাঁ দিকে- ইতু
| Updated on: Jul 04, 2021 | 9:17 AM
Share

পশ্চিম মেদিনীপুর: এক মেয়ে, মা দুই! দু’ মায়ের টানাপোড়েনে রীতিমতো ঘরছাড়া হতে হল মেয়েকে। ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুরের (Paschim Medinipur) ঘাটালে (Ghatal)।

ঘটনার বিবরণ দিতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে বেশ কয়েকটা বছর। সালটা ২০০৮। গরমের কাঠফাটা দুপুর। সেদিন কাজ সেরে নিজের টলি নিয়ে চন্দ্রকোণা রাজ্য সড়কের ওপর থেকে ফিরছিলেন ঘাটালের অজব নগরের বাসিন্দা দেবু দোলই। ফেরার পথে দেবু শুনতে পান, ঘাটাল ময়রা পুকুর লাগোয়া রাজ্য সড়কের ধারে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ।

শব্দের উৎস খুঁজে গিয়ে দেখেন, গাছের নীচে পড়ে রয়েছে বাচ্চাটি। আশেপাশে কেউ নেই। দেবু সেদিন দেরি না করে সাত পাঁচ না ভেবে ওই ছোট্ট মেয়েটিকে কোলে তুলে নিয়ে সোজা বাড়ি চলে আসেন।

দেবু বাড়ি ফিরে স্ত্রী ছবির কোলে শিশুটিকে তুলে দেন। সেই সেদিন থেকেই তাঁকে বুকে আগলে মানুষ করেছেন তাঁরা। পাড়ায় রটেছে কুড়িয়ে পাওয়া বাচ্চা মানুষ করছেন দেব ও তাঁর স্ত্রী! প্রথম বেশ কিছু দিন শিশুটির বাবা-মায়ের খোঁজে তল্লাশি চলে। এদিক-ওদিক খোঁজ লাগান। কিন্তু খোঁজ পাননি। তারপর আর চেষ্টাও করেননি। মেয়েকে নিজের মতো করে বড় করতে থাকেন তিনি।

ছবি ও দেবুর সংসারে বড় হতে থাকে তাঁদের ‘কুড়িয়ে পাওয়া’র মেয়ে। নাম রাখা হয় পিউ। এক বছর পর তাঁরা ওই মেয়ের প্রশাসনিক দফতরে গিয়ে জন্ম সার্টিফিকেট থেকে শুরু করে আধার কার্ড সব কিছুই তৈরি করিয়ে নেন। স্কুলেও পড়া শুরু করে পিউ, ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে।

প্রায় ১২ বৎসর পর হঠাৎ একদিন ঘাটাল থানার খড়ার পৌরসভার বাসিন্দা রকি সামন্ত ও তাঁর স্ত্রী ইতু সামন্ত পৌঁছে যান দেবুর বাড়িতে। তাঁরা দাবি করেন, পিউ যখন ছোট তখন তাঁর ‘জন্মদাত্রী’ মা ইতুর মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। রাস্তার ধাকে ছোট্ট মেয়েটিকে ফেলে পালিয়ে যান ইতু। এতদিনে নাকি তাঁরা তাঁদের সেই সন্তানের খোঁজ পেয়েছেন। কয়েক মাস আগে থেকে এই সমস্যার সূত্রপাত! হঠাৎ করে দেবু ও ছবির মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়েছে। এতদিনে যাকে মেয়ে মনে করে এসেছেন, তাকে তুলে দিতে হবে অন্যের হাতে!

আইন কানুনের টানে পিউয়ের এখন ঠাঁই হয়েছে মেদিনীপুর সরকারি হোমে। পিউয়ের চলে যাওয়াতে দেবুর পরিবারে কান্নার রোল! কাঁদছেন গ্রামের প্রত্যেকটা মানুষ। তাঁদের সকলের একটাই দাবি, হোম থেকে ফিরিয়ে আনা হোক পিউকে!

আরও পড়ুন: দিদিগিরি! ট্রেনিং ছাড়াই টিকাদান যৌনকর্মীদের, কাঠগড়ায় তৃণমূলের বিদায়ী ডেপুটি মেয়র

অপরদিকে ইতুর দাবি করছেন, জন্মদাত্রী তিনি, পিউ থাকবে তাঁরই কাছে। বর্তমানে দুই মায়ের টানাপোড়েনে মেয়ের নাবালিকা হওয়ায় তার বাসস্থান সরকারি হোম! ছবি দোলুইয়ের কাতর আকুতি, যে কোনওভাবে তাঁকে ফিরিয়ে আনা হোক! মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তিনি।