দিদিগিরি! ট্রেনিং ছাড়াই টিকাদান যৌনকর্মীদের, কাঠগড়ায় তৃণমূলের বিদায়ী ডেপুটি মেয়র
COVID Vaccination: পদাধিকারে উচ্চ সরকারি আধিকারিক হলেও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া করোনা টিকা দেওয়ার নিয়ম নেই কারোর। তারপরেও কী করে তিনি টিকা দিলেন তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়: কোনও প্রশিক্ষণ নেই। কোনও স্বাস্থ্য়কর্মীও নন তিনি। তিনি বিদায়ী ডেপুটি মেয়র তাবাসুম আরার। প্রশিক্ষণ ছাড়াই যৌনকর্মীদের টিকা (COVID Vaccine) দিতে শুরু করলেন বিদায়ী মেয়র। আসানসোলের কুলটিতে যৌনপল্লির এই ছবি আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
বিদায়ী ডেপুটি মেয়র তাবাসুম আরারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রশিক্ষণ ছাড়াই যৌনকর্মীদের টিকা (COVID Vaccine) দিতে যান। শনিবার, কুলটির চাবকায় পুরসভার উদ্যোগে যৌনকর্মীদের টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হয়। সেখানে পৌঁছে যান বিদায়ী ডেপুটি মেয়র। তারপর নিজেই সিরিঞ্জ নিয়ে টিকা দিতে শুরু করেন। পাশে উপস্থিত স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে চিকিৎসকেরাও নীরব। কারোর মুখে টুঁ শব্দ নেই। তাবাসুমকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমার হাতে টিকা ধরা ছিল। স্কুলে থাকতে আমি ইনসুলিন দেওয়া শিখেছি। আমার ওইটুকু প্রশিক্ষণ নেওয়া রয়েছে।”
পদাধিকারে উচ্চ সরকারি আধিকারিক হলেও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া করোনা টিকা দেওয়ার নিয়ম নেই কারোর। তারপরেও কী করে তিনি টিকা দিলেন তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। তার চেয়েও বড় কথা, ওই কেন্দ্রে উপস্থিত স্বাস্থ্যকর্মীরা কেউই কোনও প্রতিবাদ করলেন না কেন? ঘটনায় মুখ খুলতে চায়নি ওই কেন্দ্রে উপস্থিত স্বাস্থ্যকর্মীরা। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, নার্সের হাত থেকে টিকা নিয়ে তাবাসুম আরার একরকম এক যৌনকর্মীর হাতে টিকা গেঁথে দিলেন প্রায় তিনি! ভয়ঙ্কর এই ছবি সামনে আসতেই নজর পড়েছে প্রশাসনের। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চড়তে শুরু করেছে রাজনৈতিক রঙ।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মহামারী আইনের নিয়মে এইভাবে কেউ টিকা (COVID Vaccine) দিতে পারেন না। একমাত্র প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী চিকিৎসকেরাই টিকা দিতে পারেন। অন্য কেউ এই কাজ করলে তাঁকে গ্রেফতার করা হতে পারে। চলে যেতে পারে পদও। চিকিৎসক মহলের দাবি, এইভাবে টিকা দান সম্পূর্ণ বেআইনি। এর জেরে নানা ক্ষতি হতে পারে। কারণ, করোনা টিকা দেওয়ার নানা পদ্ধতি আছে। মূলত পেশির মধ্যে এই টিকা পরিমাণমতো দিতে হবে। এদিক ওদিক হলে বিপত্তি দেখা দিতে পারে।
প্রশ্ন উঠছে, কেবল পদাধিকার বলেই কি এই কাজ করতে পারলেন তাবাসুম? ওয়াকিবহাল মহলের মতে, তাবাসুম আগে পুরসভার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি শাসক দলের নেত্রী। এলাকায় তাঁর দোর্দণ্ডপ্রতাপ! জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুবাদে তাঁর নির্দেশ হোক বা আবেদন কোনওটিই খারিজ করতে পারেন না কোনও সাধারণ স্বাস্থ্যকর্মী। ফলে, এই টিকাদান সম্ভব হয়েছে।
ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুঙ্গে রাজনীতির পারদ। একের পর এক টুইটে শাসক শিবিরকে নিশানা করেছেন বিজেপি নেতারা। আসানসোলের বিজেপি নেতা বাবুল সুপ্রিয় ও বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল টুইট করে এই ঘটনার বিরোধিতা করেছেন। আসানসোলের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল লেখেন, “মানুষের জীবন নিয়ে তৃণমূল সরকার এভাবে ছিনিমিনি খেলতে পারে না। তৃণমূল নেত্রী তাবাসুম আরার কী করে স্বাস্থ্যকর্মীদের উপস্থিতিতে এই কাজ করলেন? তাঁর কি যথাযোগ্য প্রশিক্ষণ আছে?”
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় ঘটনায় টুইট করে বলেন, “এর থেকে বোঝা যায়, তৃণমূল সরকারের তার নেতৃত্বের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। অসংখ্য মানুষের জীবন সঙ্কটে এনে এই কাজ কী করে করেন তাবাসুম? তাঁর দল কি তাঁকে রক্ষা করছে?”
TMC's manhandling of the lives of people knows no bounds..A non-medical official, TMC's Tabassum Ara, member of administrative board of AMC, chose to vaccinate the people herself, in spite of doctors and nurses being present there… Is she even medically authorised to do so? pic.twitter.com/3WSFqKw6hE
— Agnimitra Paul Official (@paulagnimitra1) July 3, 2021
Seems like TMC govt has no control over its administrators.TMC's Tabassum Ara, a member of the administrative body of AMC, has vaccinated people herself and risked hundreds of lives…Will her political colour shield her from stern punishment?@MamataOfficial pic.twitter.com/EaF3EsK9Bw
— Babul Supriyo (@SuPriyoBabul) July 3, 2021
তৃণমূল নেত্রীর এই কীর্তির বিরুদ্ধে সুর তুলেছেন সিপিএম নেতা ও চিকিৎসক ফুয়াদ হালিমও। ফোনে টিভি নাইন বাংলাকে তিনি বলেন, “জনপ্রতিনিধি হয়ে তাবাসুম যা করেছেন তা কেবল আইনবিরোধী নয়, মহা অপরাধও। এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হয়ে দোষীর শাস্তি হওয়া উচিত।”
পাল্টা, তৃণমূল নেতা সুখেন্দুশেখর রায় বলেছেন, “কোয়াক চিকিৎসকেরা যদি চিকিৎসা করতে পারেন তাহলে জনপ্রতিনিধি টিকা (COVID Vaccine) দিলে কেন অসুবিধা হবে! আর যদি ওই ঘটনা ঘটে থাকে তবে জেলা স্বাস্থ্য দফতর তা দেখে নেবে। এ নিয়ে বিশেষ মাতামাতির প্রয়োজন নেই।”
আরও পড়ুন: ‘৩১৫ টাকায় সরকার টিকা বিক্রি করছে’, সরাসরি কেন্দ্রকে চিঠি বিজেপি বিধায়কের