Big Danger for Bengal: আন্টার্কটিকা বরফ গললে কতটা ডুববে বাংলা? মেপে বুঝিয়ে দিলেন বিজ্ঞানীরা
Big Danger for Bengal: ভূবিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি দায়ী করছেন বিশ্ব উষ্ণায়নকে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য গলেই চলেছে তুষার। আন্টার্কটিকায় প্রতি দশকে বরফ ১২-১৩ শতাংশ কমছে। যা কখনও ঘটেনি। এদিকে ১৪.২ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত আন্টার্কটিকা। যা ৪০ মিলিয়ন বছর ধরে বরফের চাদরে ঢাকা।
দুনিয়ার ৯০ শতাংশ বরফ যে এলাকায়, পৃথিবীর সেই বরফক্ষেত্র গলেই চলেছে! আর তা যেন রকেটের গতিতে। উধাও হয়ে যাচ্ছে বিরাট বিরাট হিমবাহ! নাসার তথ্য বলছে, রোজ ৩৭ কোটি ২৮ লক্ষ কেজি বরফ গলছে আন্টার্কটিকায়। আর বছরে সেই পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ১৫০ বিলিয়ন টনে। পূব দিকের পরিস্থিতি খানিকটা ভাল থাকলেও, খুব খারাপ অবস্থা দক্ষিণ মেরুর পশ্চিম দিকে। সেখানেই হু হু করে বরফ গলছে। আর এই বিপুল পরিমাণ জল এসে পৌঁছেছে একের পর এক মহাসাগরে। এখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন আবহাওয়াবিদরা।
আন্টার্কটিকার উত্তরে রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগর। সেই ভারত মহাসাগরের জল বাড়তে থাকলে চাপ বাড়বে বঙ্গোপাসাগরে। বঙ্গোপাসগর আমাদের রাজ্যের দক্ষিণপ্রান্তে। তাই দক্ষিণ মেরুর সব বরফ যদি গলে যায় তাহলে তো বাংলার সমূহ বিপদ! আন্টার্কটিকা অভিযানে গিয়েছিলেন জলপাইগুড়ির আবহাওয়া বিজ্ঞানী প্রীতম চক্রবর্তী। প্রায় দেড় বছর সেখানে থেকে গবেষণা করেছেন। দক্ষিণ মেরুর বরফ গলা এবং বাংলায় এর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ধরা পড়েছে বাঙালি বিজ্ঞানীদের গলাতেও।
কেন গলছে টন টন বরফ?
ভূবিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি দায়ী করছেন বিশ্ব উষ্ণায়নকে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য গলেই চলেছে তুষার। আন্টার্কটিকায় প্রতি দশকে বরফ ১২-১৩ শতাংশ কমছে। যা কখনও ঘটেনি। এদিকে ১৪.২ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত আন্টার্কটিকা। যা ৪০ মিলিয়ন বছর ধরে বরফের চাদরে ঢাকা। পৃথিবীর ৭০ শতাংশ মিষ্টি জলের ভান্ডার সেখানে। সেই মিষ্টি জলের পুরোটাই বরফ আকারে বিদ্যমান। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, দক্ষিণ মেরু গলে গেলে সমুদ্রের জলস্তর ২০০ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় আইসবার্গ বা হিমশৈল হল A23a.। যার অবস্থান দক্ষিণ মেরুতে। এর আয়তন ৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার। মানে ৩টে নিউইয়র্ক সিটির সমান। এই বিশাল হিমশৈল ভেঙে গিয়ে সাগরের জলে ভাসতে ভাসতে এগোতে শুরু করেছে। একটু একটু করে সে এগোচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলের দিকে।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
সেই ১৯৮৩ সাল থেকে ভারতীয়রা গবেষকরা যাচ্ছেন দক্ষিণ মেরুতে। দক্ষিণ গঙ্গোত্রী নামের আর্থ স্টেশন কাজ শুরু করে ৪১ বছর আগে থেকে। আপাতত সেখানে মৈত্রী ও ভারতী নামে দুটি সায়েন্টিফিক রিসার্চ স্টেশন ভারতের। সেখানে অবস্থা ঠিক কী রকম তা নিজের চোখে দেখে এসেছেন জলপাইগুড়ির প্রীতম। এক কথায় ছক ভাঙা বাঙালি। গোটা বিশ্বের ৯০ শতাংশ বরফ যেখানে থাকে, সেখানেই ১৮ মাস গবেষণার জন্য কাটিয়েছেন তিনি। বিপদ যে আছে মানছেন তিনিও। দুনিয়ার শীতলতম, শুষ্কতম, ঝোড়ো এবং জনবসতিহীন মহাদেশে আবহাওয়া সংক্রান্ত গবেষণা সেরে ফিরেছেন তিনি। ফিরে এসেই বলছেন, “আন্টার্কটিকার বরফ যদি পুরো গলে যায় তাহলে পশ্চিমবঙ্গের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ এলাকা জলের নিচে চলে যাবে।”
ভারতীয় গবেষক হিসেবে তিনবার আন্টার্কটিকায় যাওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে দেবদীপ চক্রবর্তীর। দক্ষিণ মেরুর পশ্চিম দিকে যেভাবে হিমবাহ হাওয়া হয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে চিন্তিত তিনিও। বাঙালি আবহাওয়া বিজ্ঞানী বলছেন, এভাবে আন্টার্কটিকা গলে যেতে থাকলে অদূরে ভবিষ্যতে চিন্তা আছে উপকূল লাগোয়া বাংলারও। তাঁর কথায়, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে সুন্দরবন লাগোয়া যে অংশগুলি রয়েছে সেখানে কিন্তু বিপদ সবসময়ই রয়েছে। জল বাড়লেই প্রভাব পড়বে।
একই সুর সমুদ্রবিজ্ঞানী সুগত হাজরার গলাতেও। তিনি বলছেন, হিমবাহ গললে পৃথিবীর জলস্তর বাড়লে আমাদের চিন্তার কারণ অবশ্যই আছে। আমাদের এখানে তো পাহাড়াও নেই যে জল বাড়লে পাহাড়ের উপরে উঠে পড়ব। তাই চিন্তার কারণ অবশ্যই রয়েছে।
এদিকে আন্টাকর্টিকায় পৌঁছলে আপনাকে একটা কথাই বলতে হবে,উত্তরে চলুন। কিন্তু, আপনি তো দুনিয়ার দক্ষিণ প্রান্তে। যেদিকেই যান উত্তরে এগোতে হবে! আর বিশ্বের এই মহাদেশ এক কথায় আইসল্যান্ড। এই মহাদেশের কিছু অজানা, অচেনা তথ্য জানলে চোখ একেবারে কপালে উঠে যেতে পারে। বিপদ যে কত বড় তার আঁচও পাওয়া যেতে পারে বেশ কিছুটা।
অচেনা-অজানা আন্টার্কটিকা
আন্টাকর্টিকা ভারতের থেকে ৪.৩ গুণ বড়। ইতিহাস বলছে নরওয়ের রোনাল্ড আমুন্ডসেন প্রথম পা রাখেন এখানে। ১৯৭৯ সালে এক সন্তানসম্ভবা মহিলাকে পাঠায় আর্জেন্টিনা। জনমানবহীন এলাকায় বসতি তৈরির পরিকল্পনা ছিল মারাদোনার দেশের। এখানে রয়েছে বিভিন্ন দেশের ৭০টি রিসার্চ স্টেশন।
বিশ্বের সবথেকে বেশি পেঙ্গুইনের বাস এখানেই। পৃথিবীর শীতলতম স্থানও (-৯৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এখানেই। দুনিয়ার একমাত্র মহাদেশ যেখানে নেই কোনও সরীসৃপ। নেই কোনও টাইম জোন। কিন্তু, সেই আন্টাকর্টিকা এখন যেন বড় বিপদের কারণ।
বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম মহাদেশ আন্টার্কটিকা। পৃথিবীর শীতলতম অঞ্চল। ভূপৃষ্ঠের উপরে বরফ, নীচেও। কুমেরুর নিচে এত বরফ আছে যে মাউন্ট এভারেস্টের অর্ধেক ঢুকে যেতে পারে! প্রতি বছর সেখান থেকে কিনা ১৫০ বিলিয়ন টন বরফ গলছে! আন্টার্কটিকার এই বরফের চাদরে ঢাকা মিষ্টি জল, সমুদ্রের লবণাক্ততা কমায়। আর এই বরফ গলতে থাকলে, সমুদ্রে বসবাসকারী প্রাণীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর বসতি এলাকায় হানা দেবে সেই বাড়তি জল। তখন যে বিপদ!