বর্ধমান: রাজ্য জুড়ে সবুজ সাইক্লোন। বাড়ির বাইরে তৃণমূলের খেলা হবে গান, জয়ধ্বনি। যে মেয়েটা এতটাই সক্রিয়ভাবে তৃণমূল করতেন, তিনি কেন ঘরবন্দি? দেখতে ঘরের জানলা দিয়ে উঁকি দিয়েছিলেন দিদি। দেখেন, ঘরের ভিতর গলায় ওড়নার ফাঁস লাগিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছেন বোন! পুরনির্বাচনের ফলপ্রকাশের পরই এক তৃণমূল কর্মী তরুণীর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়াল বর্ধমান পৌরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাবুরবাগ মসজিদের নতুনপল্লি এলাকায়। নেপথ্যে উঠে আসছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব। মৃত তরুণীর নাম তুহিনা খাতুন (১৮)। প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, আত্মঘাতী হয়েছেন ওই তরুণী। কিন্তু কেন? সেটাই খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পরিবারের তরফে জানা যাচ্ছে, তুহিনা তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী। পরিবারের সকলেই তৃণমূলের সমর্থক বলে দাবি। তাঁরা ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের জয়হিন্দ বাহিনীর সভাপতি মুক্তার মিঞার অনুগামী বলে জানাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের জয়ী তৃণমূল কাউন্সিলর বসির আহমেদের বিপক্ষ গোষ্ঠী করেন তাঁরা। সেই কারণেই বুধবার জয়ের পর বসির আহমেদের অনুগামীরা তুহিনার বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেন বলে অভিযোগ। তার জেরেই তুহিনা আত্মঘাতী হয়েছেন বলে দাবি পরিবারের।
তুহিনার পরিবারের তরফে করা হচ্ছে বিস্ফোরক অভিযোগ। ভোটের ফল ঘোষণার পরই বসির আহমেদের অনুগামীরা নানাভাবে তুহিনার ওপর মানসিক চাপ বাড়াতে থাকে। আর সেই চাপ সহ্য করতে না পেরেই আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। জয়হিন্দ বাহিনীর ওয়ার্ড সভাপতি মুক্তার মিঞা বলেন, “প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বসির আহমেদ ওরফে বাদসা তুহিনাদের বাড়িতে হুমকি দেওয়া শুরু করেন। বাড়ির দেওয়ালে তুহিনা-সহ তাঁদের তিন বোনের ছবি এঁকে দিয়েও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। বুধবার বিকেলে দলবল নিয়ে বাদসা চড়াও হয় তুহিনাদের বাড়িতে । অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। সেই অপমানে তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন।”
তুহিনা বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। বরাবরই তৃণমূলের অনুগামী তিনি। ভোটের সময়েও দলের হয়ে প্রচুর খেটেছেন। মৃতার দিদি ঝর্ণা বেগম বলেন, ‘দলের মধ্যে নানা চাপ ছিল। নানারকমভাবে হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছিল ওকে। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল।’
যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বসির আহমেদ। তিনি বলেন, “কীভাবে এই ঘটনা ঘটল, সেই বিষয় নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। সঠিক তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। আমার বিরুদ্ধে হওয়া সমস্ত ঘটনা মিথ্যা। আমরা পরিবারের পাশে আছি।”
আরও পড়ুন: তাহেরপুর বামেদের দখলে যেতেই রাতারাতি বদল থানার ওসি!