পূর্ব বর্ধমান: দীর্ঘদিন পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। পুলিশ তাঁকে ধরতে পারেনি। নানাভাবেই আইনের চোখকেই ফাঁকি দিয়েই এদিক-ওদিক যাচ্ছিলেন তিনি। তিনি অর্থাত্ সোমনাথ মণ্ডল। সম্পর্কে, হাওড়ার ব্যবসায়ী সব্যসাচী মণ্ডলের ভাই। অবশেষে, মঙ্গলবার, আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করলেন সোমনাথ। নিজের খুড়তুতো ভাই সব্যসাচীকে খুনের (Murder) ঘটনায় তিনিই মূল অভিযুক্ত।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, আদালতের সিজেএমের কাছে আত্মসমর্পণ করে জামিনের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু বিচারক জামিন নাকজ করে জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন সোমনাথকে। আগামী ৩০ নভেম্বর তাঁকে ফের আদালতে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। খবর দেওয়া হয়েছে পুলিশকেও।
জানা গিয়েছে, সব্যসাচীকে খুনের নেপথ্যে মূল কাণ্ডারী ছিলেন সোমনাথই। তিনিই টাকা দিয়ে সুপারি কিলারদের নিয়োগ করেন। এমনকী, সব্যসাচীর গ্রামের বাড়ির হদিশ থেকে শুরু কীভাবে, কখন খুন করতে হবে সেই গোটা ছকটাই করেছিলেন সোমনাথ।
ইতিমধ্যেই, ব্যবসায়ী সব্যসাচী মণ্ডল খুনে গ্রেফতার হয়েছে আরও এক দুষ্কৃতী। ধৃতের নাম মহম্মদ জাভেদ আকতার। রবিবার রাতে কলকাতার ময়দান থানা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের একটি দল।
জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন জানান, ধৃত মহম্মদ জাভেদ আকতার সুপারি কিলার টিমের সদস্য ছিল। সোমবার অভিযুক্তকে বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। এর আগে এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় সুপারি কিলার রিকিকে। ইতিমধ্যেই রিকিকে নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করেছেন তদন্তকারীরা।
কীভাবে দেরিয়াপুরে গ্রামের বাড়িতে আসা সব্যসাচীকে পরিকল্পনা মাফিক খুন করা হয় তার বিবরণ দেন রিকি। তাঁকে নিয়ে গোটা ঘটনার পুনর্নির্মাণও করায় পুলিশ। এদিন মূল অভিযুক্ত জানিসার আলম ওরফে রিকিকে পুলিশ নিয়ে আসে সব্যসাচী মন্ডলের দেরিয়াপুরের বাড়িতে।
হাওড়ার ব্যবসায়ী সব্যসাচী মণ্ডলের খুনের ঘটনায় পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযুক্ত নিহতের কাকার ছেলেদের এখনও ধরা যায়নি। এ ছাড়াও ঘটনার দিন কালারাঘাট ব্রিজের সিসিটিভি ফুটেজ আসে পুলিশের হাতে। যা এই তদন্তে চাঞ্চল্যকর মোড় নিয়ে আসে।
এদিন দেরিয়াপুরে সব্যসাচী মণ্ডলের পৈতৃক বাড়িতে এসে প্রথমেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন অভিযুক্ত রিকি। রিকি সেসময় পুলিশকে জানান, ঘটনার দিন প্রথমে তাঁরা ঠাকুরদালানের কাছে এসে চাকু দেখিয়ে ড্রাইভারকে ভয় দেখান। তাঁর মোবাইল ফোনটিও কেড়ে নেন।
সব্যসাচীর গাড়ির চালক আনন্দ সাউকে বাধ্য করেন সব্যসাচীকে ডেকে আনতে। সব্যসাচী দোতলা থেকে নামার আগেই আততায়ীরা নিজের নিজের পজিশন নিয়ে তৈরি ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। এরপর সব্যসাচী ছাদ থেকে নেমে এলেই কোনও কিছু ভাবার আগেই তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালান রিকি বলে অভিযোগ।
সেই গুলি লেগেছে কি না তা রিকি বলতে পারেননি। এ সময় সব্যসাচী পালাতে যান। পালাতে গিয়ে সিঁড়ির মুখে পড়ে যান সব্যসাচী। রিকি জানান, সে সময় তিনি আরও এক রাউন্ড গুলি চালান। এরপর সব্যসাচীকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় সেখানেই পড়ে যান সব্যসাচী।
সেখানেই তাঁকে ওই অবস্থায় ফেলে চম্পট দেন রিকি ও তাঁর সঙ্গীরা। এ দিন গুলি চালানো ও কোপানোর কথা স্বীকার করেছেন রিকি, পুলিশ সূত্রে এমনটাই খবর। তাঁকে এদিন ভেঙে পড়তে দেখা যায়। তদন্তে রায়না থানার পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে ছিলেন রায়না থানার ওসি পুলক মণ্ডল।
পুলিশ সূত্রে খবর, জেরার মুখে রিকি জানিয়েছেন, তাঁকে ৫০ লক্ষ টাকায় ঠিক করেছিলেন সব্যসাচীর ছোট কাকার ছেলে সোমনাথ মণ্ডল। এর মধ্যে ২০ লক্ষ টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল। বাকিটা পরে দেওয়ার কথা ছিল। পুলিশ জানতে পেরেছে, রিকিদের বাড়ি চেনান সোমনাথই।
হাতে কিছুটা সময় থানায় এরপর বলাগড়ে গিয়ে একটি চায়ের দোকানে চা খান। তদন্তকারীদের অনুমান, সেখানেই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ব্লু প্রিন্ট ছকে নেন রিকি ও সঙ্গীরা।
গত মাসেই কলকাতার ব্যবসায়ী সব্যসাচী মণ্ডল খুন হয়েছিলেন পূর্ব বর্ধমানের রায়নার গ্রামের বাড়িতে। বছর চুয়াল্লিশের ওই ব্যবসায়ীর বাড়ি রায়নার দেরিয়াপুর গ্রামে। কাজের সূত্রে তিনি থাকতেন হাওড়ার শিবপুরে। সেখানে তাঁর পলিথিনের ব্যবসাও ছিল।
আরও পড়ুন: Bomb Blast: চলছিল বহুতল নির্মাণের কাজ, আচমকা পায়ে হেঁটে এসে বোমাবাজি ৩ দুষ্কৃতীর!