পূর্ব বর্ধমান: হুমকি দিয়েছিলেন বীরভূমের তৃণমূল (TMC) জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। দলীয় কর্মীর খুনের কিনারা না হলে ‘ভয়ঙ্কর খেলা’র নিদান দিয়েছিলেন তিনি। তারপরেই আউশগ্রামের যুব নেতা চঞ্চল বক্সী-হত্যাকাণ্ডে এলাকারই যুব তৃণমূল সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সদস্য আসানুর মণ্ডল-সহ আরও দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ বার সেই গ্রেফতারির তালিকা আরও দীর্ঘ হল। চঞ্চল-খুনে ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া থেকে বৃহস্পতিবার রাতে মহম্মদ পাপ্পু ও মহম্মদ ইমতিয়াজ নামে দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, তৃণমূল (TMC) যুব নেতা চঞ্চলকে (Chanchal Bakshi) খুন করতে ওই দুই দুষ্কৃতীকেই কাজে লাগানো হয়েছিল। ৬লক্ষ টাকার বদলে চঞ্চলকে খুন করার ‘মাস্টারপ্ল্যান’ তৈরি করে ওই দুই দুষ্কৃতী। প্ল্যানমাফিকই খুন করা হয় চঞ্চলকে। খুনের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র সরবরাহ করেছিল ধৃত ইমতিয়াজ ও পাপ্পু। খুনের সময় চারজন সুপারিকিলার আউশগ্রামেই ছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। চঞ্চলকে খুনের নেপথ্য়ে তৃণমূলেরই কারোর হাত রয়েছে বলে অনুমান করেছিল পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে পাপ্পু ও ইমতিয়াজকে গ্রেফতারের পর জেরায় তারা স্বীকার করে পঞ্চায়েত সদস্য আসানুর মণ্ডলের থেকে ৬ লক্ষ টাকা নিয়েছিল।
নিহত যুব তৃণমূল নেতার (TMC Leader) বাবা তথা দেবশালা পঞ্চায়েত প্রধান শ্যামল বক্সীর দাবি করেছিলেন, বিজেপি বা বিরোধীরা কেউ তাঁর ছেলেকে খুন করেনি। বরং দলের লোকেরাই চঞ্চলকে খুন করে। গত বৃহস্পতিবার নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। সেখানে কার্যত পুলিশের উদ্দেশে হুমকি দিয়ে অনুব্রত বলেন, “১৫ দিনের মধ্যে অপরাধীকে গ্রেফতার করা না হলে ভয়ঙ্কর খেলা খেলে দিয়ে যাব।” উল্লেখ্য, অনুব্রত কেবল বীরভূমের জেলা সভাপতি নন, তিনি আউশগ্রামের বিধানসভার পর্যবেক্ষকের দায়িত্বেও রয়েছেন।
গত ৭ সেপ্টেম্বর চঞ্চলের সঙ্গে মোটর বাইকে করে বাড়ি ফেরার সময় শ্যামল বক্সীদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় চার-পাঁচজন আততায়ী। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শ্যামলবাবুর ছেলে চঞ্চলের। দেবশালা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান শ্যামল বক্সীর ছেলে চঞ্চলকে খুন করে দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনার পরপরই ঘটনার দায় বিজেপির ওপর চাপিয়েছিল তৃণমূল। দলের টিকিটে নির্বাচিত আউশগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার দাবি করেছিলেন বিজেপির কর্মীরাই এই খুনের সঙ্গে জড়িত। তাদের দলের আশ্রয়ে বেড়ে ওঠা দুষ্কৃতীরাই এই অপকর্ম ঘটিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
যদিও, বিধায়কের এই তত্ত্ব কার্যত খারিজ করে দেন মৃতের বাবা শ্যামল বক্সী। অনুব্রতের হুঁশিয়ারি দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেবশালা অঞ্চল যুব তৃণমূল সভাপতি তথা পঞ্চায়েতের সদস্য আসানুর মণ্ডল, আর এক পঞ্চায়েত সদস্য মনির হোসেন মোল্লা এবং তৃণমূলের দেবশালা অঞ্চল সভাপতির ছেলে বিশ্বরূপ মণ্ডলকে চঞ্চল বক্সীকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই তিনজন ছাড়াও আসানুরের ছায়াসঙ্গী আয়ুব খানকে জেরা করে ভাতাকুণ্ডা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
যদিও, তা নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ আউশগ্রামের ২ নম্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি রামকৃষ্ণ ঘোষ। তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।” যুব তৃণমূল নেতা খুনে মুখে কুলুপ পুলিশকর্তাদেরও। পূর্ব বর্ধমান জেলার ডিএসপি (ডিএনটি) সৌরভ চৌধুরী বলেন, “তদন্তের স্বার্থে সব কিছু জানানো সম্ভব নয়। তদন্ত চলছে।”
আরও পড়ুন: Mysterious Fever: অজানা জ্বরের দাপট, শুক্রবারই উত্তরবঙ্গে স্বাস্থ্যভবনের ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল
আরও পড়ুন: Post Poll Violence: ‘পুরোটাই শুভেন্দুর চাল’, অধিকারী পুত্রকে তোপ, সিবিআইকে সহযোগিতা সুফিয়ানের