Digital Arrest: ‘২ ঘণ্টার মধ্যে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করা হবে’, ভয় পেতেই ফোনের ওপার থেকে ‘খেলা’ শুরু
Digital Arrest: প্রতারকরা তাপসবাবুকে হুঁশিয়ারি দেয়, তিনি যেন এই কথা দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা না করেন। করলে তাঁর ক্ষতি হয়ে যাবে। এরপর ফোনটা কেটে তাপসবাবু ক্ষণিকের বিহ্বলতা কাটিয়ে তাঁর ছেলেদের ফোনে সব জানান।

বর্ধমান: আবার প্রতারণার চেষ্টা। ডিজিটাল অ্যারেস্টের হুমকি। এবারে হুমকির শিকার একটি হাসপাতালের এক সাধারণ কর্মী। তাঁকে রীতিমতো ভীতি প্রদর্শন করে গতকাল বড় অঙ্কের টাকা পাঠাতে বলে প্রতারকরা। এমনকি পুলিশের পোশাক পরা এক ব্যক্তির সঙ্গে কথাও বলায়। শনিবার এই নিয়ে বর্ধমান সাইবার ক্রাইম পুলিশ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন ওই ব্যক্তি। সাইবার থানা এ ব্যাপারে একটি অভিযোগ নথিভুক্ত করে তদন্ত শুরু করেছে।
যিনি প্রতারিত হতে বসেছিলেন, তাঁর নাম তাপস কুমার হাজরা। তিনি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধীনস্থ অনাময় হাসপাতালের কিচেনের একজন কর্মী। তিনি জানান, শুক্রবার দুপুর ১১টা ৩০ মিনিট নাগাদ তাঁর কাছে অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। তারা তাপসবাবুকে বলে, তাঁর নামে মহারাষ্ট্রের পুনেতে একাধিক থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তাঁর নামে নাকি ২০ থেকে ২৫টা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় আড়াই কোটি টাকা বেআইনি লেনদেন হয়েছে।
তারা জানায়, তাপস হাজরার নামে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়েছে। ২ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করা হবে। তারা আরও জানায়, পুনেতে গিয়ে জামিন নিতে হবে। তাতে প্রায় ৩০-৪০ হাজার টাকা খরচ হবে।
এই খবরটিও পড়ুন




এরপর শুরু হয় প্রতারকের খেল। সে জানায়, “আমি স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। আপনি ২১ হাজার ৮৫০ টাকা এখনই পাঠিয়ে দিন। আপনার জামিন হয়ে যাবে। আর জামিন হয়ে গেলে ২০ হাজার টাকা ফেরত পেয়ে যাবেন।”
এরপরই সে ফোনটা কেটে দিয়ে তাপসবাবুকে ভিডিয়ো কল করে। এবং তাঁকে বলে ফাঁকা জায়গায় যেতে। সেই সময় অন্য প্রান্ত থেকে পুলিশের পোশাক পরা এক ব্যক্তি আবছা লেখায় তার নামের কানাড়া ব্যঙ্কের একটা এটিএম কার্ড দেখায় এবং আধার নম্বর বলে।
তাপসবাবুকে বলা হয়, সেটা তাঁর আধার কার্ডের সঙ্গে মিল আছে কি না, তা দেখানোর জন্য ক্যামেরার সামনে ধরতে। তাপসবাবু জানান, “আমি ভয় পেয়ে গিয়ে তার কথামতো আমার আধার কার্ড ক্যামেরার সামনে ধরে তা মিলিয়ে দেখি আমার কার্ডের নম্বর হুবহু একই। এরপর আমাকে বেশ কিছু ছবি ও কাগজ পাঠিয়ে বলে টাকা পাঠিয়ে দিন।”
তারা এও হুঁশিয়ারি দেয় যে, তিনি যেন এই কথা দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা না করেন। করলে তাঁর ক্ষতি হয়ে যাবে। এরপর ফোনটা কেটে তাপসবাবু ক্ষণিকের বিহ্বলতা কাটিয়ে তাঁর ছেলেদের ফোনে সব জানান। তাঁরা ওই ব্যক্তিকে ফোন করলে সঙ্গে সঙ্গে তাপসবাবুর হোয়াটঅ্যাপে প্রতারকরা যে সব ছবি পাঠিয়েছিল, তা মুহূর্তের মধ্যে ডিলিট করে দেয়। অপরদিকে তাঁর ছেলেকেও হুমকি দেয়, “তোর বাবার কী অবস্থা করি, দেখবি পরে।”
তাপস হাজরা জানান, তিনি এই ঘটনার পর বেশ ভয় পেয়ে যান। একটি বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সহ তাঁর বেশ কিছু নথি প্রতারকরা কীভাবে পেল, তা তিনি ভেবে পাচ্ছিলেন না। পরে বন্ধুবান্ধব এবং ছেলেদের কথায় তিনি সম্বিত ফিরে পান। সেই কারণেই তিনি সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এর আগেও বর্ধমানে এক সাধুকে প্রতারকরা জালে ফেলার চেষ্টা করেছিল। আবার দিন দুয়েক আগে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের এক মহিলার কাছ থেকে ৯০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা। এই নিয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক হতে বারবার প্রশাসনের তরফে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও জানিয়েছেন, ডিজিটাল অ্যারেস্ট বলে কিছু হয় না।





