পূর্ব মেদিনীপুর: নন্দীগ্রাম (Nandigram) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) ফিরিয়ে দিয়েছিল বলেই উপনির্বাচনে লড়ে মুখ্যমন্ত্রীর আসন অটল রাখতে হল তাঁকে। যদিও এই ভোটের ফলাফল নিয়ে বহু বিতর্ক দানা বেঁধেছে। আপাতত বিচারাধীন বিষয় নন্দীগ্রাম ভোটের ফলাফল। কিন্তু ভবানীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপনির্বাচন-জয় কী ভাবে দেখছেন সেখানকার আম-জনতা থেকে রাজনীতিকরা। টিভি নাইন বাংলা খোঁজ নিল তারই।
সাহিত্যিক সুকুমার মাইতি। পূর্ব মেদিনীপুরের মানুষ। নন্দীগ্রামের পুরো ভোট পর্বটাই চোখের সামনে দেখেছেন তিনি। সুকুমার মাইতির কথায়, “তৃণমূল কংগ্রেস ২০১১ সালে প্রথম যখন রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তার প্রেক্ষাপট ছিল সিঙ্গুরের আন্দোলন, নন্দীগ্রামের ভূমি আন্দোলন। এই দুই আন্দোলনের পর বামেদের সরাতে রাজ্যবাসী তৃণমূলকে ভোট দেয়। সে সময় এই ভবানীপুর কেন্দ্র থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জয়লাভ করেছিলেন। সেটাও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব ছেড়ে উপনির্বাচনে জেতা। তবে এবার নন্দীগ্রাম থেকে উনি যে আশা নিয়ে লড়েছিলেন হতে পারে নন্দীগ্রামের মানুষ তার গুরুত্ব নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। তাই সহযোগিতা করেননি। আর ওনার প্রতিপক্ষ শুভেন্দু অধিকারী ছিলেন। উনিও জমি আন্দোলনের নেতা। তাই হয়তো এই লড়াইটা মুখ্যমন্ত্রীর জন্য কঠিন ছিল।”
শম্ভুনাথ পাল নন্দীগ্রামেরই ভোটার। তাঁর কথায়, “নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারী ছাড়া কোনও কথাই নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হয়ত কেউ বুঝিয়েছিল, উনি এখানে এসে ভোটে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। নন্দীগ্রাম আন্দোলনে সকলে বলে ওনার ভূমিকা ছিল! কোনও ভূমিকাই তো ছিল না। বরং শুভেন্দুবাবু তো বলেইছেন সুষমা স্বরাজ, লালকৃষ্ণ আডবানি পাশে এসে না দাঁড়ালে সেই সময়, অনেক কিছু হয়ে যেত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো ওখানে পৌঁছতেই পারেননি। তাঁকে কেন মানুষ ভোট দেবেন বলুন তো?”
বিজেপির পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েকের কথায়, “নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্র শুভেন্দু অধিকারী। আজ যে তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছে তার সিংহভাগ অবদান তো শুভেন্দু অধিকারীর। সেখানে যে যাই করুক, ভূমিপুত্রের জয় তো নিশ্চিত। উনি ভূমিপুত্র হিসাবে জয়ীও হয়েছেন। ভবানীপুর তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড়। এর আগেও ওখানে জিতেছেন। যেহেতু এটা উপনির্বাচন, তাই তাঁর এলাকার মানুষ চেয়েছেন, তিনি জিতেছেন। তবে নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন, যেই আসুক কেউ ওনাকে হারাতে পারবেন না।”
যদিও জেলার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তে নন্দীগ্রামে হারেননি। তাই এসব প্রশ্ন ওঠারও কোনও কারণ নেই। সৌমেন মহাপাত্রের কথায়, “আমাদের এখানে কোনও খামতি ছিল না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও হারেননি। তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারচুপি করা হয়েছে। বিষয়টি যেহেতু বিচারাধীন, তাই এর বেশি আমি কিছু বলব না।”
রবিবার ভবানীপুরের উপনির্বাচনের ফল প্রকাশিত হয়। পোস্টাল ব্যালট নিয়ে মোট ৫৮ হাজার ৮৩২ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল পেয়েছেন ২৬ হাজার ৩২০ টি ভোট। অন্যদিকে সিপিএমের শ্রীজীব বিশ্বাস পেয়েছেন ৪ হাজার ২০১টি ভোট। ভবানীপুরে এই বিরাট ব্যবধানে এর আগে কেউ জয় পাননি।
আরও পড়ুন: Durga Puja: ঘুচল জল্পনা; এবারও পুজো করবে বিজেপি, তবে আয়োজন হবে ছোট! বৈঠক শেষে জানাল নেতৃত্ব