পূর্ব মেদিনীপুর: বাইরে থেকে লোক এনে নকল অধার কার্ড দিয়ে কলকাতায় রাখা হচ্ছে। এমন অভিযোগ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আগেও করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। বিজেপির তরফেও বারবার অভিযোগ করা হয়েছে এলাকার লোককে ভোটদানে বাধা দেওয়া হয়েছে। কলকাতায় আর ৪ দিন পরেই পুরভোট। তার আগে ফের একবার রাজ্য সরকারকে নিশানা করলেন অধিকারী পুত্র। অভিযোগ, কলকাতায় বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ঘটছে। হাইকোর্ট বিষয়টি নজরে রাখুক এমনটাই দাবি করলেন শুভেন্দু।
অধুনা বিজেপি বিধায়কের মন্তব্য, “মমতার-সরকারে রোহিঙ্গারা উড়ছে। যেখান থেকে পারছে এখানে এসে ঢুকছে। বিশেষ করে সুন্দরবনের দিকগুলোতে আটকানোই যাচ্ছে না অনুপ্রবেশ। ওখানে সর্বত্র বিএসএএফের চৌকি নেই। আব্দুল মান্নান, লাল্টু শেখের মতো এমন ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে এনআইএ। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ কিছুই করছে না। বিরোধী দলনেতার পেছনে পড়ে রয়েছে।”
শুভেন্দুর আরও সংযোজন, “হাইকোর্টের যা নির্দেশ তা স্বাগত। কিন্তু, কোনও রাজনৈতিক দল হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়ে ভোটে জিততে পারে না। হাইকোর্টের দেখা উচিত, বাংলাদেশের ভুয়ো ভোটার এসে যেন বোতাম না টিপে দিয়ে যায়। বিরোধী শিবির যেন বুথে এজেন্ট রাখতে পারে। তৃণমূল নেতারা যেন পাশে দাঁড়িয়ে ছাপ্পা না দিতে পারে।”
অন্যদিকে, পুরভোট নিয়ে শাসক শিবির আত্মবিশ্বাসী হলেও দলের ভাবমূর্তি যাতে কোনও ভাবেই ক্ষুন্ন না হয় সে দিকে বিশেষ নজর দিয়েছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তৃণমূল সূত্রে খবর, সুপ্রিমো নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতার আশেপাশে যাঁরা থাকেন, তাঁরা এসে প্রচার করতে পারেন। তবে প্রচারের কাজ যেন শুধু বক্তৃতাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। প্রচার ছাড়া তাঁরা আর কোনও কাজ করতে পারবেন না বলে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। সম্প্রতি, পুরভোটের দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে হওয়া বৈঠকেও কড়া বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোট দানে বাধা দেওয়া বা কোনও রকম বিশৃঙ্খলার অভিযোগ উঠলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বার্তা দিয়েছেন তিনি। প্রয়োজনে প্রার্থীকে বহিষ্কারও করা হতে পারে।
প্রসঙ্গত, সব পুরসভায় একসঙ্গে ভোট করার দাবি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল বিজেপি। সেই মামলায় অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। ১৯ ডিসেম্বর কলকাতা পুর নিগমের ভোট নিয়ে কোনও বাধা রইল না। তবে বাকি পুরসভাগুলিতে যাতে দ্রুত নির্বাচন করা যায়, সেই নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। কম দফাতে ভোট করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলাকারীদের দাবি ছিল, সবকটি পুরসভা ও পুর নিগমের ভোট একই দিনে করতে হবে। সব ভোটের গণনা করতেও হবে এক দিনেই। সেই সংক্রান্ত নির্দেশ দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে, বাকি পুরভোটগুলি দ্রুত করতে হবে। রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা আলোচনায় বসে দ্রুত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। কমিশনের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল যে পরিমাণ ইভিএম আছে, তাতে এক দফায় ভোট করতে অসুবিধা হবে। কমিশনের এই যুক্তিতে সন্তুষ্ট আদালত।
গতকালই পুরভোট সংক্রান্ত এন্য একটি মামলায় সব বুথে সিসিটিভি বসানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পুরভোটে এবার বুথের সংখ্যা বেড়েছে। প্রায় ১৫০০ বুথে হবে ভোটগ্রহণ। সেই সব বুথে সিসিটিভির প্রয়োজন আছে বলে আবেদন জানিয়েছিলেন বিজেপি নেতা দেবদত্ত মাঝি। তাঁর বক্তব্য, শেষ বিধানসভা নির্বাচনেও হিংসার ঘটনা ঘটেছে। ভোটের দিন যাই হোক না কেন, পরে আদালতে যেতে হলে আর কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় না। তখন এই ফুটেজগুলি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে আবেদনে উল্লেখ করেন তিনি। এই আর্জিতেই মামলা করেন বিজেপি নেতা দেবদত্ত মাঝি। স্ট্রংরুমেও সিসিটিভির বসানোর আর্জি জানানো হয়। মামলার শুনানিতে সব বুথে সিসিটিভি মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব।