ভগবানপুর: প্রবল বৃষ্টির (Heavy Rain) পর জল যন্ত্রণা এ রাজ্যের মানুষের কাছে নতুন নয়। বছরের পর বছর এভাবেই সমস্যার সঙ্গে মানিয়ে নিতে অভ্যস্ত হয়েছে রাজ্যবাসী। কিন্তু গত কয়েকদিনে যে ভাবে একের পর এক মর্মান্তিক ছবি উঠে আসছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, তা অবশ্যই দুর্ভাগ্যজনক। এমনই এক মর্মান্তিক ঘটনায় শোকের ছায়া নামল ভগবানপুরে (Bhagabanpur)। বাড়ির ভিতর জমে এক হাঁটু জল। আর ঘুমন্ত অবস্থায় বিছানা থেকে সেই জলে পড়ে গেল একরত্তি শিশু। জমে থাকা ওই জলে ডুবেই মৃত্যু হল দেড় বছরের শিশুকন্যার।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভগবানপুরের ঘটনা। জেলার অন্যান্য এলাকার মতোই ভগবানপুরের ১ ব্লকের কাজলাগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের হিংচাগেড়িয়া গ্রামেও গত কয়েকদিন ধরে জমে আছে জল। ঘরের ভিতরেও এক হাঁটু পর্যন্ত জল। স্বাভাবিক জীবন কার্যত বিপন্ন। তবে এ ভাবে মেয়েকে হারাতে হবে, তা ভাবেনি পরিবার। বিছানায় সন্তানকে কোলের কাছে নিয়েই শুয়ে ছিল মা। কখন যে কোল একেবারে খালি হয়ে গেল, তা টেরও পাননি তিনি। গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায় মায়ের। পাশে তাকিয়ে দেখেন তাঁর সন্তান সেখানে নেই। কিছু বুঝে উঠতে না পেরে চীৎকার শুরু করেন তিনি। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ছুটে আসেন। তখনই দেখা যায়, খাটের তলায় শিশুকন্যার নিথর দেহ ভাসছে।
ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। শোকস্তব্ধ শিশুকন্যার পরিবারের সদস্যরা। ভগবানপুর থানার পুলিশ মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়েছে। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনা নিয়ে জমা জলের কারণে মোট ৪ জনের মৃত্যু হল পূর্ব মেদিনীপুরে। এগরায় মৃত্যু হয়েছে একজনের। ভগবানপুরের ইটাবেড়িয়াতে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে আগেই।
বিধায়ক রবীন্দ্র নাথ মাইতি এই ঘটনার প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই ঘটনা খুবই মর্মান্তিক।’ তিনি জানান, কেলেঘাই নদীর পাড় ভেঙে যাওয়ার ফলে জমা জলে বিপত্তি তৈরি হয়েছে। পুরো বিধানসভা এলাকা কার্যত জলের তলায়। যেখানে সেখানে বিদ্যুতের লাইন রয়েছে বিপাকে পড়ছেন মানুষ। বিধায়ক বলেন, ‘খবর পেয়ে লোক পাঠিয়েছিলাম। কিছু বলার নেই। খুবই দুঃখ জনক ঘটনা। মায়ের কোল থেকে শিশুর চলে যাওয়া বেদনা দায়ক।’ পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
কেলেঘাইয়ের জলে প্লাবিত হয়েছে পটাশপুর, ভগবানপুর ও এগরার বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রতিদিনই জলের তলায় চলে যাচ্ছে নতুন নতুন জায়গা। এরই মধ্যে ফের লাল সতর্কতা জারি হওয়ায় প্রমাদ গুনছেন এলাকার মানুষ। শুধু জেলা নয়, কলকাতাতেও জল জমার ভয়ঙ্কর ছবি।
দমদমে জলা জল পেরিয়ে যাওয়ার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে দুই কিশোরীর। শ্রেয়া বণিক ও অনুষ্কা নন্দীর মৃত্যুর ঘটনা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। টিউশন পড়তে যাওয়ার সময় জমা জলে শ্রেয়া টাল সামলাতে না পেরে রাস্তার ধারে বাতিস্তম্ভ ধরে নেয়। বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় তার। কিছু না বুঝে শ্রেয়াকে ধরতে গিয়ে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয় অনুষ্কারও। এই ঘটনার পর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলেছে সরকার। যদিও ক্ষতিপূরণ নিতে নারাজ তাঁদের পরিবার।
আরও পড়ুন: Suicide: ‘কাজ থেকে এসে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল মা…’ ছোট্ট মেয়ের চোখের সামনেই আত্মাহত্যা মায়ের!