Clash in Moyna: ‘রাতে ভাত খাচ্ছিলাম ঘরে বসে…তারপরেই সব…’ পুলিশি ‘হামলায়’ চোখে জল বিজেপি কর্মীর
TMC BJP Clash in Purba Medinipur: যদিও বিজেপি কর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় এখনও তৃণমূলের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। ময়না থানার পুলিশ জানিয়েছে, গোটা ঘটনার তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কে বা কারা এর সঙ্গে জড়িত তা খতিয়ে দেখা হবে।
পূর্ব মেদিনীপুর: গোটা একদিনও পেরল না। ফের রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত ময়না। পুলিশের পোশাক পরে বাড়িতে এসে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে বিজেপি কর্মীদের (BJP Worker) উপর হামলা করার অভিযোগ উঠল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। সোমবার রাতে খিদিরপুর গ্রামের গোলপাতার ঘটনা।
ধারাল অস্ত্রের কোপে গুরুতর জখম এলাকারই দুই সক্রিয় বিজেপি কর্মী। আহত মধুসূদন রানা ও জয়দেব রানাকে ময়না ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। আক্রান্ত মধুসূদন রানার অভিযোগ, রাতের বেলা তিনি ঘরে বসে ভাত খাচ্ছিলেন। সেইসময়ে তাঁর বাড়ি এসে হামলা চালায় পুলিশ। তাঁকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপ মারা হয় বলে অভিযোগ। মধুসূদন ছাড়াও জয়দেব রানা নামে আরও এক কর্মীর বাড়িতে একইভাবে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ।
চোখের জলে ভাসতে ভাসতে আক্রান্ত মধুসূদন বলেন, “রাতের বেলা ঘরে বসে ভাত খাচ্ছিলাম। আচমকা বাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ি এল। হাতে এত অস্ত্র। কেন এল কীভাবে এল, কিছুই জানি না। তারপরেই সব ওলটপালট হয়ে গেল। আমাদের ভীষণ মারধর করেছে। কোনও ঝুটঝামেলায় আমরা থাকি না। বিজেপিতে যোগ দিয়েছি। তাইজন্যই কি হামলা করা হল? জানা নেই!”
গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই পুলিশের পোশাক পরে এসে হামলা চালিয়েছে। নয়ত, বেছে বেছে কেন কেবল বিজেপি কর্মীদেরই মারধর করা হবে বলে অনুযোগ পদ্মের। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের মন্তব্য, “মধুসূদন এবং জয়দেব দলের সাধারণ কর্মী। তাদের বাড়িতে ঢুকে পুলিশের পোশাক পরা কিছু লোক বেধড়ক মারধর করেছে এবং কুপিয়েছে। পুলিশকে বারবার বলা হয়েছে, যে ময়নায় বিশেষ করে এই বাচ্চা অঞ্চলে যেভাবে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব বাড়ছে তা কহতব্য় নয়। এভাবে বারবার বলার পরেও যদি পুলিশ কোনও পদক্ষেপ না করে তাহলে কিছু বলার নেই।”
যদিও বিজেপি কর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় এখনও তৃণমূলের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। ময়না থানার পুলিশ জানিয়েছে, গোটা ঘটনার তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কে বা কারা এর সঙ্গে জড়িত তা খতিয়ে দেখা হবে।
প্রসঙ্গত, রবিবার রাত থেকেই অশান্তির আগুন ছড়িয়েছিল ময়নায়। ওইদিন রাতেই টোটো ভাঙাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। অভিযোগ, টোটো ভাঙা নিয়ে শাসক ও বিরোধী শিবির (TMC BJP Clash) সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পৌঁছতেই পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের খণ্ডযুদ্ধ বাধে বলে অভিযোগ। সংঘর্ষের ঘটনায় ইতিমধ্যেই ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, রবিবার রাতে একটি টোটো ভাঙাকে কেন্দ্র করে ময়নার আড়ং কিয়ারানা গ্রামে উত্তেজনা ছড়ায়। সেই সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে আসে। কিন্তু, গ্রামের মধ্যে ঢুকে পুলিশকর্মীরা ধরপাকড় চালায় ও লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ। এমনকী, গ্রামের মহিলা ও শিশুদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
এদিকে, পাল্টা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, রবিবার রাতে টোটো ভাঙা নিয়ে এলাকার তৃণমূল-বিজেপি কর্মী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি ক্রমশ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠলে ঘটনাস্থলে যান পুলিশকর্মীরা। সেইসময় তাঁরা গ্রামে ঢুকতে গেলে মহিলারা দা, কাটারি, লাঠি, বঁটি নিয়ে পুলিশকে আটকায় বলে অভিযোগ। এরপরেই পুলিশের সঙ্গে তাঁদের কার্যত খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। তবে কোনওরকম লাঠিচার্জ করা হয়নি।
ময়না থানার পুলিশ আরও জানিয়েছে, এলাকায় শান্তি স্থাপন করতে ব্যারাকপুর ও দুর্গাপুর থেকে ৬০ জনের বিশেষ পুলিশ টিম নিয়ে আসা হয়। গোটা এলাকায় চলে পুলিশি পেট্রোলিং। জেলা পুলিশ সুপার অমরনাথ কে জানিয়েছেন, সংঘর্ষের ঘটনায় মোটা ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১২ জন বিজেপি সমর্থক। বাকি ৩জন তৃণমূল সমর্থক। সেই ১৫ জনের মধ্যে বেশ কিছু মহিলাও রয়েছেন। ধৃতদের মধ্যে ৬ বিজেপি সমর্থককে রবিবার রাতেই ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দেওয়া হয়েছে। বাকিদের সোমবার আদালতে তোলা হবে।
জেলা পুলিশ সুপার আরও জানিয়েছেন, ময়নায় বিক্ষিপ্তভাবে অশান্তি কিছুতেই প্রতিহত করা যাচ্ছে না। ভৌগোলিক পরিস্থিতির কারণেই এলাকায় ঢুকে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশকর্তারা। রবিবার রাতের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের পর এলাকা জুড়ে পুলিশ পেট্রোলিং চলছে। পরিস্থিতিও এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত বলেই জানিয়েছেন পুলিশকর্তারা। তারপরে ২৪ ঘণ্টা না পেরতেই ফের রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত ময়না।
আরও পড়ুন: ভাইরাল অডিয়ো: কুণাল ঘোষের হাত থেকে উত্তরীয় পরা ‘দাদার অনুগামী’-কে দলে নিতে নিমরাজি তৃণমূল!