নন্দীগ্রাম: ‘বেইমান’, ‘অকৃতজ্ঞ’, ‘জানোয়ার’ এবং ‘এক বাপের ব্যাটা’- নন্দীগ্রাম দিবসে (Nandigram Dibas) সেখানকারই মাটিতে দাঁড়িয়ে এ রকম একাধিক বিশেষণে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে (Suvendu Adhikari) আক্রমণ করলেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। নন্দীগ্রাম দিবসে কুণালের মন্তব্য ঘিরে দানা বাঁধল নতুন রাজনৈতিক বিতর্ক।
২০০৭ সাল থেকেই রাজ্য রাজনীতির অন্যতম নাম হয়ে নিজের জায়গা খোদাই করেছে জমি আন্দোলনের পীঠস্থান নন্দীগ্রাম। আর সেই জায়গার উপর ভর করে রাজ্যে পালা বদল। দু দফায় ঘাসফুলের আধিপত্য বজায় রাখার পর তৃতীয় দফাতেই এই আন্দোলনের সেনাপতি বেসুরো হওয়াতে বিপাকে পড়তে হয় শাসকদল তৃণমূলকে। এই প্রেক্ষিতেই আজ নন্দীগ্রাম দিবসে তৃণমূল ও বিজেপির তরফে একাধিক পৃথক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
এদিনের সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারীকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন কুণাল। সেক্ষেত্রে অনেকসময় রাজনৈতিক শালীনতার সীমাও লঙ্ঘিত হয়। কুণাল ঘোষ বলেন, “শুভেন্দু নন্দীগ্রামের মানুষকে ভাগ করেছেন। শুভেন্দুকে নন্দীগ্রাম থেকে উত্খাত করব আমরাই।” তাঁর কটাক্ষ, “শহিদ বেদীতে মালা দিয়ে আসতে চায় শুভেন্দু। হিন্দুত্বের এজেন্সি শুভেন্দুকে কেউ দেয়নি। বিজেপিতে গিয়ে হিন্দুত্বের বিষ ছড়াচ্ছে শুভেন্দু।”
কুণাল বলেন, “আমরা সমাজটাকে এক রাখতে চেয়েছি। বিজেপি ভাগ করতে চাইছে। সিপিএম কী করেছিল? গা জোয়ারি করে জমি নিতে চেয়েছিল। তখন শুভেন্দু কোথায় ছিল? ও তো কাঁথিতে এসি ঘরে বসেছিল। লড়াই তো আপনারা করেছিলেন। ভূমি উচ্ছেদ কমিটি এখান থেকে তৈরি হয়েছে। শহিদের রক্ত বেঁচে নিজে রাজনৈতিক কেরিয়ার তৈরি করেছে শুভেন্দু।”
কুণাল ঘোষ এদিন মঞ্চে দাঁড়িয়ে জানান, শুভেন্দু অধিকারী এবং তাঁর পরিবারের রাজনৈতিক জন্ম দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কুণাল এদিন শুরুটা করেছিলেন ভূমি আন্দোলনের প্রেক্ষাপট দিয়েই। তিনি বলেন, “ভূমি আন্দোলনের সময়ে আমি তো তখন খুব সক্রিয় রাজনীতিতে ছিলাম না। কিন্তু তখন মমতাদির সঙ্গে আসতাম, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আসতাম। মিটিং মিছিল আপনারা করেছিলেন।”
এরপরই তিনি বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী একটা অকৃতজ্ঞ, বেইমান, জানোয়ার- সে বলে পাঠিয়েছে শহিদ বেদিতে মালা দিতে চান। বিজেপিতে নাম লেখানোর পর হঠাত্ হিন্দু হয়ে গেল।” তিনি বলেন, “শুভেন্দু তো মুসলমানদের জেহাদি বলেছে। এখন কেন শহিদ বেদিতে মালা দিতে আসবে? এই শহিদ বেদিতে তো মুসলমানেরও রক্ত রয়েছে। কোন লজ্জায় তুমি আসবে? আমরা ফিরোজা বিবিকে শহিদ মাতা বলি, তুমি কী বলবে জেহাদির মা? এই সব মানুষ নরকের কীট।” এই প্রসঙ্গের প্রেক্ষিতেই শুভেন্দু জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে একের পর এক কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন কুণাল ঘোষ।
কুণাল ঘোষ যখন এই সব মন্তব্য করেছেন, আক্রমণ শানিয়েছেন, তখন হাততালির জোয়ার সভামঞ্চে। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক শৃষ্টাচার, শালীনতার সীমা লঙ্ঘিত হয়েছে তাতে।
প্রসঙ্গত, গদিতে আসার আগে থেকেই প্রতিবছর নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীকে সামনে রেখেই কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূল। তবে ২০২১-এ ছবিটা উল্টো। তৃণমূলের দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতা শুভেন্দু অধিকারী এখন বিজেপির টিকিটে জিতে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। বুধবার, তাঁরই নেতৃত্বে বিজেপির তরফে পালিত হচ্ছে নন্দীগ্রাম দিবস। যে শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্র বলা হত, সেখানেই তাঁকে একের পর এক বাণে বিদ্ধ করলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দিনভর সরগরম থাকল নন্দীগ্রামের মাটি।