পূর্ব মেদিনীপুর: ভোট পরবর্তী হিংসা তদন্তে নন্দীগ্রামের চিল্লাগ্রামে নিহত বিজেপি (BJP) কর্মী দেবব্রত মাইতির মৃত্য়ু মামলায় তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের (Mamata Banerjee) এজেন্ট শেখ সুফিয়ান-সহ আরও দুই তৃণমূল নেতাকে তলব করেছে সিবিআই। বৃহস্পতিবার, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হলদিয়ার ক্যাম্পে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্তকারীদের (CBI) মুখোমুখি হন সুফিয়ান। জেরা শেষে স্পষ্টই জানান, সিবিআইকে সবরকম সহযোগিতা করতে তিনি তৈরি। পাশাপাশি নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীকেও (Suvendu Adhikari) তোপ দাগেন মমতার এজেন্ট।
প্রায় সাড়ে চারঘণ্টার ম্যারাথন জেরার পর হলদিয়ায় সিবিআইয়ের(CBI) ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে এদিন তৃণমূল নেতা বলেন, “আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। সিবিআই আমায় যতবার ডাকবে আমি আসব। দেবব্রতর পরিবার তৃণমূল সমর্থক ছিল। দেবব্রতও তৃণমূলের লোক। ওঁর বাড়ির লোককে বিজেপি কর্মীরা ভয় দেখিয়ে হাত করেছে। আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য জোগাড় করার চেষ্টা করছে। কিন্তু, আমরা পিছিয়ে যাওয়ার লোক নেই। সিবিআইকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করব। আমি প্রথম থেকেই বলে এসেছি এটা বিজেপির রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। শুভেন্দুর চাল এটা। তবে এতে আমরা কেউ ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাওয়ার নই। আজও সিবিআই যা যা প্রশ্ন করেছে সবকিছুর ঠিকঠাক উত্তর দিয়েছি।”
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর গত ৩ মে দেবব্রত মাইতির উপর হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা দেবব্রতকে পিটিয়ে মারে। হামলার পরে আহত দেবব্রতকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই গত ১৩ মে তাঁর মৃত্যু ঘটে। দেবব্রতের মৃত্যুর পর নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ্য জনসভায় হুমকি দিয়ে বলেন, “দেবব্রতকে যারা মেরেছে সকলকে খুঁজে খুঁজে বের করা হবে।” এরপর, নন্দীগ্রাম-চিল্লাগ্রামে দেবব্রতের বসতভিটেতে যান খোদ রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।
ভোট পরবর্তী হিংসা তদন্তের দায়ভার কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআইয়ের (CBI) হাতে তুলে দেওয়ার পর, রাজ্য জুড়ে চষে বেড়াতে শুরু করেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। বিজেপি কর্মী দেবব্রতের খুনের ঘটনায় বিধানসভা নির্বাচনের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য এজেন্ট শেখ সুফিয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। সিবিআই সূত্রে খবর, শুধু শেখ সুফিয়ান নন, জিজ্ঞাসাবাদের তালিকায় রয়েছে আরও একাধিক তৃণমূল নেতার। সেই মোতাবেক শেখ সালম ও শেখ তফিজুলকে ডেকে পাঠানো হয়। কিন্তু শেখ সালম উপস্থিত না থাকায় তাঁর স্ত্রী হাজির হন হলদিয়ায় সিবিআই ক্যাম্পে। উপস্থিত হন খোদ সুফিয়ানও।
তৃণমূল নেতাদের এই তলব প্রসঙ্গে যদিও সুফিয়ানের দাবি, বিজেপি কর্মী দেবব্রত মাইতির মৃত্যুর ঘটনায় তাঁরা কেউ যুক্ত নন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই বিজেপি এই ষড়যন্ত্র করেছে বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতার। বিজেপি-র তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি প্রলয় পাল পাল্টা বলেন, “নির্বাচনের পর দিন চিল্লোগ্রামে দেবব্রত মাইতির বাড়ি গিয়ে তাঁকে মারধর করেছিল তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। গুরুতর জখম অবস্থায় দেবব্রতকে কলকাতায় নিয়ে গেলে দু’দিন বাদে মৃত্যু হয় তাঁর।’’
বিজেপি নেতা আরও বলেন, ‘‘নন্দীগ্রাম থানায় সেই মুহূর্তে মামলা করা যায়নি। কারণ তৃণমূলের লোকেরা চার দিক ঘিরে রেখেছিল। পুলিশও নিষ্ক্রিয় ছিল। পরে মানবাধিকার কমিশন নন্দীগ্রামে এলে তাঁদের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়। ওই ঘটনায় সেখ সুফিয়ান-সহ নন্দীগ্রামের বেশ কয়েক জন প্রথম সারির তৃণমূল নেতার নাম রয়েছে। এরপরেও যদি সুফিয়ানবাবু বলেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে, তাহলে বলব, তিনি নিজের স্বপক্ষে যুক্তি তৈরি করুন। কারণ সবটাই আইন মেনে হচ্ছে।”
আরও পড়ুন: Post Poll Violence: ফের তৃণমূলের কার্যালয়ে সিবিআই, শাসক দলের একাধিক নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ