পূর্ব মেদিনীপুর: কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে টাকার বিনিময়ে ভর্তির অভিযোগ বারবার করে এসছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আর এবার খোদ তৃণমূল বিধায়কের ‘স্বীকারোক্তি’ ঘিরে চরম অস্বস্তিতে ঘাসফুল শিবির। এক ফোনালাপে বিধায়ক তরুণ মাইতি কার্যত স্বীকার করে নেন টাকার বিনিময়ে পূর্ব মেদিনীপুরের কলেজগুলিতে ভর্তি হন একাধিক পড়ুয়া (যদিও এই অডিয়ো ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি টিভি নাইন বাংলা)।
এগরা সারদা-শশীভূষণ কলেজের পরিচালন কমিটির সভাপতি তথা এগরার বিধায়ক ও কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি তরুণ মাইতি। তাঁর সঙ্গে সারদা-শশীভূষণ কলেজের প্রথম বর্ষের এক ছাত্র এবং ছাত্র সংসদের এক সদস্যের সঙ্গে তরুণবাবুর ফোনালাপের জোড়া রেকর্ড ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে বিব্রতকর এক পরিস্থিতির। সেই সঙ্গে ফোনালাপে তরুণবাবুর বেফাঁস মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে গোটা জেলায়। কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধী শিবির।
কী রয়েছে অডিয়ো ক্লিপে?
তৃণমূল বিধায়ক তরুণবাবুর সঙ্গে এগরা সারদা শশীভূষণ কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র শুভদীপ পণ্ডার ফোনালাপের যে রেকর্ডটি ছড়িয়েছে তাতে কলেজে ভর্তি হতে গেলে নির্ধারিত ভর্তি-ফি’র বাইরেও কলেজের ছাত্র সংসদকে অতিরিক্ত ৫-৬ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ওই ছাত্র। যার পাল্টা যুক্তি দেখাতে গিয়ে তরুণবাবু ওই ছাত্রের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কোনও কলেজ ভর্তির জন্য পয়সা নেয় না। ভর্তি ফি বাদে কাঁথি কলেজ ৪০ হাজার নেয়। রামনগর কলেজ অনার্স দিতে ৭৫ হাজার নেয়।’
আর ফোনালাপের সেই অডিও রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ার পর তরুণবাবুর এমন মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। জেলার কলেজ ছাত্র সংসদগুলি বর্তমানে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরিচালনা করে থাকে।
স্বাভাবিকভাবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি, বিধায়ক এবং কলেজ গভর্নিং বডির প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যকে ঘিরে প্রশ্নের মুখে পড়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। এগরা কলেজের ছাত্র সংসদের সদস্য রাহুল প্রধান এ ব্যাপারে কথা বলেন তরুণবাবুর সঙ্গে। বিতর্কিত মন্তব্য করার জন্য দলের ওই ছাত্র নেতাকে চরম ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়। ৭ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের সেই ফোনালাপের অডিয়ো রেকর্ডও পরে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। ফলে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়েন তরুণবাবু। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি শতদল বেরার হস্তক্ষেপে মীমাংসা হয় বলে খবর।
এ বিষয়ে তরুণবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘দুটো অডিয়ো-র কোনওটাই আমার অফিশিয়াল স্টেটমেন্ট নয়। দুটোই ব্যক্তিগত ফোনালাপ। বিরোধীরা যে অভিযোগ করে থাকেন সেই অভিযোগই করার চেষ্টা করেছিল শুভদীপ পণ্ডা নামের এক ছাত্র। ও বারবার বলেছে, আমি তৃণমূল ছাত্র পরিষদ করিনা। সে কারণে বিরোধীদের অভিযোগের কথা ওই ছাত্রকে বোঝাতে চেয়ে ছিলাম আমি।”
পাশাপাশি তাঁর আরও সাফাই, ‘আমাদের যিনি ছাত্র পরিষদের নতুন জেলা সভাপতি হয়েছেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর দলের নির্দেশে জেলার সমস্ত কলেজে এই অভিযোগ (ভর্তি-ফি ছাড়াও অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ) অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। সামান্যতম অভিযোগ এলেও তিনি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। কোথাও কোনও কলেজে এমন হয় না।’ তাঁর অভিযোগ, ব্যক্তিগত ফোনালাপ ছড়িয়ে দেওয়াটা সাইবার ক্রাইমের মধ্যে পড়ে। এ ব্যাপারে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
কটাক্ষ বিরোধীদের:
এ নিয়ে কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি শতদল বেরা বলেন, ‘কে কাকে ব্যক্তিগত ভাবে কী বলেছেন, তা নিয়ে মন্তব্য করব না। আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে কলেজে কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। এই ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
কিন্তু বিষয়টি এখানেই থেমে থাকছে না। ভর্তি ফি বাদে বিভিন্ন কলেজের ছাত্র সংসদগুলি যে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে পড়ুয়াদের কাছে, তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক তরুণ মাইতির ওই মন্তব্যকে হাতিয়ার করছে বিরোধী ছাত্র সংঠনগুলিও।
তরুণবাবুর মন্তব্যের বিরোধিতা না করেই সিপিএমের ছাত্র সংঠন এসএফআই-র পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির সম্পাদক জাকির হোসেন মল্লিক বলেন, ‘অবশেষে ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়ল। তৃণমূল সেটাকে ঢাকা দিতে পারল না। আমরা বারবার অভিযোগ করে এসেছি, কলেজ ইউনিয়নগুলোর নির্বাচন না করে তৃণমূলের যে লোকাল নেতা-কর্মী তারা কলেজগুলিতে জাঁকিয়ে বসে আছে। এটা যে তৃণমূলের একটা অর্থনেতিক দিক বহন করছে তা জেলা তৃণমূল সভাপতির মন্তব্যেই স্পষ্ট। তার সঙ্গে আমাদের অভিযোগও প্রমাণিত হল।”
আর বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক অসীম মিশ্রের কটাক্ষ, “এত দিন আমাদের নেতা শুভেন্দু অধিকারী বিভিন্ন সভা সমিতিতে বলে থাকে আজ তা প্রমাণিত হল। ওঁনার এই মন্তব্য আবার প্রমাণ করে দিল যে তৃণমূল মানেই তোলামূল। রাজনীতিটা কে শাসক দল নিজেদের ইনকামের জায়গা তৈরি করেছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “দুঃখের বিষয় ওরা (পড়ুন তৃণমূল) ছাত্র সমাজটাকেও কলুষিত করে দিল। তৃণমূলের জেলা সভাপতির ওই অডিয়ো প্রমাণ করে দিল যে এ রাজ্যে মেধা কোনও কাজ নেই। রাস্তা থেকে শুরু করে কলেজ সর্বত্রই টাকা দরকার ওদের। ছাত্র সমাজের লজ্জা মেধার ভিত্তিতে ভর্তি না হয়ে তোলা দিয়ে ভর্তি হচ্ছে। একদিন না একদিন বেরোনোর কথা ছিল আজ বেরিয়ে পড়লো। সত্য কোনো দিন চাপা থাকে না কতদিন আর চাপিয়ে রাখবেন!”
আরও পড়ুন: Acid Attack: সম্পর্ক থেকে বেরোতে চাওয়ায় ‘শাস্তি’! শিক্ষা দিতে মহিলার মুখে অ্যাসিড ছু়ড়ল যুবক