
তমলুক: নিয়োগ দুর্নীতিতে দলের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে সরব হয়ে সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে কান ধরে ওঠবস করেছিলেন। ভিডিয়ো করে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই ছেড়েছিলেন। ভাইরাল হয়েছিল সেই ভিডিয়ো। তারপরও একাধিকবার সরব হয়েছেন তমলুকের তৃণমূল কাউন্সিলর পার্থসারথি মাইতি। কিন্তু, ২ দিন আগে আইপ্যাকের লোকজনকে গাছে বেঁধে মারধরের নিদান দেওয়ার পরই তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছে রাজ্যের শাসকদল। তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আর দল সাসপেন্ড করতেই বিস্ফোরক পার্থসারথি মাইতি। তাঁকে খুন করা হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করলেন।
সম্প্রতি তমলুক পৌরসভার তৃণমূলের চেয়ারম্যান দীপেন্দ্র নারায়ণ রায় দলীয় নির্দেশে পদত্যাগ করেছেন। দলীয় নির্দেশে তমলুক পৌরসভার অস্থায়ী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন চঞ্চল খাড়া। এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আইপ্যাকের বিরুদ্ধে সরব হন পার্থসারথি মাইতি। তিনি লেখেন, “আইপ্যাক টাকা কামিয়ে চলে যাবে। কর্মীদের বলব রেজাল্ট খারাপ হলে আইপ্যাককে গাছে বেঁধে পিটুন।”
এই মন্তব্যের পর তৃণমূল তাঁকে দল থেকে সাসপেন্ড করেছে। আর দল সাসপেন্ড করতেই ফুঁসে উঠলেন তিনি। বললেন, “আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছি বলে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমার ও বাবার নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যাহার করা হয়েছে। এবার হয়ত জেলেও ঢোকাতে পারে পুলিশ।” পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল নেতা সুজিত রায়ের বিরুদ্ধে সরব হলেন। বললেন, সুজিত রায় তাঁকে ফোনে হুমকি দিয়েছেন। বারবার খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও তাঁর অভিযোগ। তারপর পুলিশ সুপারকে জানিয়েও তাঁর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়নি। বরং সাসপেন্ডের পর তাঁর নিরাপত্তা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পার্থসারথি আরও বলেন, তিনি খুন হলে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব ও পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার দায়ী থাকবেন।
পার্থসারথি বিজেপিতে যোগ দেবেন কি না, এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তারও জবাব দিয়েছেন তৃণমূল এই কাউন্সিলর। তিনি লেখেন, “অনেকেই বলছ, আপনি কি বিজেপি করবেন? সে তো সময় বলবে। কিন্তু, এখন তৃণমূলের সমর্থকই আছি।”
পার্থসারথিকে সাসপেন্ডের সিদ্ধান্ত দলের বলে মন্তব্য করেও ঘুরিয়ে ছেলের পাশে দাঁড়ালেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা চিত্তরঞ্জন মাইতি। তাঁরও নিরাপত্তা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তিনি। ছেলের মুখ খোলা উচিত হয়নি জানিয়ে একটি ‘উদাহরণ’ তুলে ধরেন চিত্তরঞ্জন মাইতি। বলেন, “ধরুন একটি সংস্থায় ১০০ জনের মধ্যে ৯০ জন চোর। ১০ জন যদি প্রতিবাদ করতে যায়, বাকিরা তো তাদের বিষ খাইয়ে মেরে দেবে। কেনও প্রতিবাদ করতে গিয়েছে?আমরা পারতাম না প্রতিবাদ করতে? আগের ভোটেই জানিয়েছিলাম, দলের মধ্যে বিশ্বাসঘাতক আছে। দল পাত্তা দেয়নি।” পার্থসারথিকে সাসপেন্ড করা নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক সুকান্ত চৌধুরী বলেন, তৃণমূলের মধ্যে থেকে দুর্নীতির প্রতিবাদ করাতেই সাসপেন্ড করা হয়েছে তৃণমূল কাউন্সিলরকে।