
পূর্ব মেদিনীপুর: পাশাপাশি দু’টি মঞ্চ। একটি তৃণমূলের, অন্যটি বিজেপির। দু’টির মধ্য়ে ব্য়বধান কয়েক হাত মাত্র। এটা কি সৌজন্য নাকি যুদ্ধের অন্য এক রূপ। স্থানীয়রা বলছেন, ২০২০ সালের পর থেকে প্রতি বছর এই ছবি দেখতে-দেখতে তাঁরা এখন অভ্যস্ত। বাম জমানায় এই ১০ই নভেম্বর ছিল ‘অপারেশন সূর্যোদয়’-এর একটা অংশ। কিন্তু আজ তা নন্দীগ্রামের ‘শহিদ দিবস’। যা পালন করা ঘিরে বরাবরই যুযুধান দুই পক্ষ। বিশেষ করে শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগদানের পর থেকে কে আগে শহিদ বেদীতে পৌঁছবে, তৃণমূল নাকি বিজেপি, এই নিয়েই লেগে থাকে তরজা। এই দু’টি মঞ্চ তারই নজির মাত্র।
তবে দুই দল পাশাপাশি স্লোগান তুলতে গিয়ে যাতে কোনও বিবাদ না বাঁধে তাই কর্মসূচির জন্য প্রতিবার সময় বেঁধে দেয় প্রশাসন। সোমবার সকাল ৮টা থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। তার কর্মসূচি শেষ হলে, শুরু হবে তৃণমূলের কর্মসূচি। যাবেন পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী।
এদিন সকালে সময় মতো শহিদ বেদীতে পৌঁছে যান রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কোনও দলীয় পতাকা নয়, বাম জমানা ‘অপারেশন সূর্যোদয়ের’ বিরোধিতায় হাতে কালো পতাকা নিয়ে যেতে দেখা যায় তাঁকে। মঞ্চে ওঠার পূর্বে নন্দীগ্রাম আন্দোলনে বিজেপির অবদান স্মরণ করান শুভেন্দু। বলেন, ‘নন্দীগ্রামে আন্দোলনে বিজেপি ছিল। লালকৃষ্ণ আডবাণীর অবদান ভোলার মতো নয়। তিনিই তো অবরোধ তুলেছিলেন।’
নন্দীগ্রামের ‘শহিদ দিবস’ পালনের জন্য় সংশ্লিষ্ট দুই পক্ষকে সময় বেঁধে দিয়েছে প্রশাসন। সেই সময়ের কথা মাথায় রেখেছেন খোদ শুভেন্দু অধিকারীও। মঞ্চে উঠেছেন কিন্তু বেশি সময় নেননি তিনি। ‘নাগরিক কর্তব্যের’ কথা মনে করিয়ে সময় মতো নেমে পড়েন শুভেন্দু।
‘শহিদ দিবসের’ দিনে স্বাভাবিক নিয়মেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ শুভেন্দুর। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি পূরণ করেননি বলেই দাবি তাঁর। রাজ্যের বিরোধী দলনেতার কথায়, ‘উনি বলেছিলেন রেসিডেন্সিয়াল স্কুল দেবেন। কিন্তু তা করেননি। আপনাকে শহিদ মিনারে উদ্বোধনে ডাকিনি বলে, আপনার রাগ হয়েছিল। চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু আপনাকে দিয়ে উদ্বোধন করব কেন? আমি ফিরোজা বিবি ও রাধারাণী আড়িকে দিয়ে উদ্বোধন করিয়েছি। আমি-আপনি তো ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছিলাম। ওনারা কিছুই পাননি। একজন সন্তান হারিয়েছিলেন, অন্য জন নির্যাতনের শিকার।’
শুধু তাই নয়, শহিদ পরিবারের লোকেরা ডেথ সার্টিফিকেট পাননি বলেও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, ‘আপনি সবার মুখ্য়মন্ত্রী হতে পারেননি। চার জন আজও ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। কারণ ওরা বিজেপিতে এসেছিল। কিন্তু আমি ওদের টাকা মিটিয়েছি। এই ঘটনাগুলো তো আপনি অস্বীকার করতে পারবেন। আসল পরিবর্তন ২০১১ সালে হয়নি। আমরা ভুল করেছি। জনগণকে নিয়ে আমরাই আসল পরিবর্তন আনব।’