
রামনগর: রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরিকে এলাকায় ঢুকলে দেখে নেওয়ার হুঁশিয়ারি। বিরোধী দল নয়। শাসকদল তৃণমূলেরই নেতা দিলেন এই ‘হমকি’। তাঁর এই ‘হুমকি’ ঘিরে শোরগোল পড়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনৈতিক মহলে। শাসকদলের গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। অস্বস্তিতে পড়েছে শাসকদলও। তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের বক্তব্য, বিষয়টি তাঁরা খোঁজ নিয়ে দেখছেন।
সম্প্রতি তৃণমূলের বিভিন্ন পদে রদবদল হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরেও শাসকদলে নেতৃত্ব বদল হয়েছে। আর তা নিয়েই সরব হয়েছেন রামনগর ১ পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধক্ষ খালেক কাজী। তিনি বলেন, “আমরা ১৯৯৮ সাল থেকে পঞ্চায়েতটা ধরে রেখেছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আমরা দল করি। কিন্তু, আমাদের বার্তাটা বোধহয় তাঁরা শুনতে পাচ্ছেন না। হাঁটুর নিচের ছেলেদের পদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। আমাদের মতো পোড়খাওয়া মানুষদের জিজ্ঞাসাবাদও করে না। তাই, বিধানসভা নির্বাচনের আগে আমরা ভেবেছি, রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে চুপচাপ বসে থাকব।”
এরপরই রামনগরের তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরিকে নিশানা করেন তিনি। বলেন, “রামনগর বিধানসভার বিধায়ককে দিদি কী রাবার স্ট্যাম্প মেরে দিয়েছেন যে উনি কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করেন না। হাঁটুর নিচের ছেলেদের নিয়ে নাচছেন। যাঁর ভাই বিজেপি করছেন, তিনি ব্লক সভাপতি। সিপিএম পরিবারের ছেলে যুব সভাপতি। অখিল ভেবে নিয়েছেন, তিনি যতদিন বাঁচবেন, রামনগরে দাঁড়াবেন। পৈতৃক সম্পত্তি ভেবে নিয়েছেন। সব ছাপ্পা ভোট হয়ে যাবে, কোনও নেতৃত্বের প্রয়োজন নেই।”
অখিলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে খালেক কাজী বলেন, “নিজেকে সামলে নিয়েছি। না হলে সাইজ করে দিতাম। বাঁধিয়া অঞ্চলে কোনও নেতৃত্ব ঢুকতে পারবে না। এটা আমার চ্যালেঞ্জ। আর একবার ঢুকুক, আমি সাইজ করে দেব।” অখিল গিরি ছাব্বিশের নির্বাচনে হারবেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তাঁকে হুঁশিয়ারি দেওয়া নিয়ে অখিল গিরি মুখ খুলতে চাইলেন না। তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পীযুষ পন্ডা বলেন, “কী ঘটনা হয়েছে, আমি খোঁজ নিয়ে বলতে পারব।”
তবে এই নিয়ে শাসকদলকে কটাক্ষ করেছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সহসভাপতি অসীম মিশ্র বলেন, “ভোট যত এগোচ্ছে, তৃণমূলের আসল চেহারা বাংলাজুড়ে প্রকাশ পাচ্ছে। এসআইআর নিয়ে চারিদিকে বিভিন্নরকম আক্রমণ শুরু করেছে। আসলে দলটা হার্মাদ, উন্মাদ, সমাজবিরোধীদের দ্বারা পরিচালিত। তৃণমূলকে দল না বলে সমাজবিরোধীদের সিন্ডিকেট বলা ভাল। আর রামনগরে বিধায়ক বলুন কিংবা তৃণমূল কংগ্রেস বলুন, সেখানে কাটমানি তোলা, এলাকা দখলের লড়াই দীর্ঘদিন শুরু হয়েছে। রামনগরের বিধায়ক কী কাজ করেছেন, সেখানকার মানুষ জানেন না। তিনি ব্যর্থ বিধায়ক। তিনি যে ছাপ্পা ভোটে জিতেছেন, তা তাঁর দলের নেতাই বলছেন। তিনি বলছেন, আবার জেতার জন্য ছাপ্পা ভোট করবেন। তৃণমূলের বিধায়ক এলাকায় এলে দেখে নেওয়ার কথা বলছেন সেই দলেরই নেতা।” তবে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের আঁতাতের অভিযোগ খারিজ করে দেন তিনি। ছাব্বিশের নির্বাচনে রামনগরে তৃণমূল হারবে বলে অসীম মিশ্রের দাবি।