‘তুমি সুন্দরী, আমাদের সঙ্গে গেলে অনেক টাকা রোজগার করতে পারবে’, টোপ গিললেই ঠিকানা অন্ধকার গলি

Sundarban: আর্থ সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া সুন্দরবনে নারী পাচারের অভিযোগ প্রায়শই শিরোনামে উঠে আসে।

'তুমি সুন্দরী, আমাদের সঙ্গে গেলে অনেক টাকা রোজগার করতে পারবে', টোপ গিললেই ঠিকানা অন্ধকার গলি
সন্দেহভাজন চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 09, 2021 | 8:42 AM

দক্ষিণ ২৪ পরগনা: প্রাকৃতিক দুর্যোগে কার্যত ফালা ফালা সুন্দরবন (Sundarban)। এরই মধ্যে আবার করোনার কারণে কাজ নেই মানুষের। চরম অনটন সংসারে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই বাড়ির মেয়ে-বউদের টার্গেট করত পড়শি রাজ্যের একদল যুবক। বাইরে নাচের সুযোগ করে দেওয়ার টোপ দিয়ে অন্যত্র ‘চালানের’ কুমতলবের অভিযোগে তিন যুবক ও এক মহিলাকে গ্রেফতার করা হয় বুধবার। গ্রেফতার করে সুন্দরবন উপকূল থানার পুলিশ। বৃহস্পতিবার ধৃতদের আদালতে তোলা হবে।

আর্থ সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া সুন্দরবনে নারী পাচারের (Human Trafficking) অভিযোগ প্রায়শই শিরোনামে উঠে আসে। মূলত, গরিব ঘরের মেয়েদের বিয়ের প্রলোভন কিংবা ভাল কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও ইদানিং জেলা পুলিশের তৎপরতায় একাধিক নারী পাচার চক্র ধরাও পড়েছে। পুলিশি উদ্যোগে নানা সচেতনতা প্রচারও বেশ কাজে দিচ্ছে। তবু এসবের ফাঁক ফোকর গলে মাঝে মধ্যেই ঢুকে পড়ে পাচারকারীরা।

করোনার কারণে মানুষ কর্মহীন। তার উপর একের পর এক ঘটে গিয়েছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ফলে দারিদ্র আরও প্রকট হয়েছে। আর সেই সুযোগেই আবারও গরান, গেঁও, সুন্দরীর জেলায় সক্রিয় হয়েছে নারী পাচার চক্র। যদিও এখন আর বিয়ের প্রলোভন নয়, ভিন রাজ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচ করানোর নাম করে মেয়েদের নিয়ে গিয়ে বিক্রি করার চক্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সম্প্রতি এমনই এক চক্রের খোঁজ পায় গোসাবা ব্লকের সুন্দরবন উপকূল থানার পুলিশ।

বুধবার আমতলি এলাকা থেকে একটি অভিযোগ আসে সুন্দরবন উপকূল থানার পুলিশের কাছে। ছোট মোল্লাখালির এক বাসিন্দা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন যে, তাঁর স্ত্রী আগে বিহারে নাচের জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে বুঝতে পারেন, এই কাজ মোটেই সহজ পথের নয়। এরপরই কোনওরকমে বাড়িতে ফিরে আসেন। এদিকে যাঁরা ছোট মোল্লাখালির ওই গৃহবধূকে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁরাও ফের সুন্দরবনে এসে হাজির হন। ওই মহিলাকে তাঁরা ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান বলেও মহিলার স্বামীর পুলিশকে জানান। রীতিমতো জোরাজুরি করছে। আর এতেই ওই ব্যক্তি চারজনকে সন্দেহ করছেন।

ওই ব্যক্তির অভিযোগ, তাঁর স্ত্রীকে বিক্রি করে দেওয়ার তাল ঠুকছেন ওই মহিলা-সহ চারজন। চারজন যুবক একই সঙ্গে তাঁর এলাকায় চলে এসেছেন বিহার থেকে। এই গুরুতর অভিযোগ পেয়ে সুন্দরবন উপকূল থানার পুলিশ আমতলি এলাকায় হানা দিয়ে বিহারের সিওয়ান জেলার বাসিন্দা রাকেশ তিওয়ারি ও তার স্ত্রী রত্না সর্দার, পবন গুপ্ত ও অরিজিৎ মাজিকে গ্রেফতার করে।

এই রত্না সর্দারের আবার বাপের বাড়ি সুন্দরবনের হাসনাবাদ এলাকায়। পুলিশি জেরায় জানা গিয়েছে, ধৃতরা আমতলির ছোট মোল্লাখালির ওই অভিযোগকারীর স্ত্রীর পাশাপাশি পাশের কুমিরমারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়েছিলেন। সেখানেও একাধিক নাবালিকাকে নাচের সুযোগ করে দেওয়ার কথা বলেন। এতে ভাল রোজগারের আশ্বাস দেন।

ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য এদিন সুন্দরবন উপকূল থানায় যান এসডিপিও (ক্যানিং) গোবিন্দ সিকদার ও বারুইপুর মহিলা থানার আইসি কাকলি ঘোষ কুণ্ডু। বৃহস্পতিবার ধৃতদের আলিপুর আদালতে তোলা হবে।

আরও পড়ুন: দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে ‘আপন মতে’ চলা, ১২ জন তৃণমূল নেতাকে বহিষ্কারের পথে দল