দক্ষিণ ২৪ পরগনা: রাজ্য আপাতত নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে স্কুল শুরু করেছে। কিন্তু রাজ্যেরই মধ্যে একটি স্কুলে দেখা গেল অন্য চিত্র। সরকারি নির্দেশিকাকে অমান্য করেই শিশুদের নিয়ে পঠনপাঠন শুরু করেছে একটি স্কুল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের নিকারিঘাটা স্বনির্ভর শিক্ষা নিকেতনের ঘটনা।
সরকারি নির্দেশ অমান্য করে কীভাবে ওই স্কুলে পঠনপাঠন শুরু হতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ওই স্কুলে গিয়ে দেখা গেল অন্য চিত্র। পড়ুয়াদের কারোর বয়স পাঁচ, কারোর সাত! মুখে তারা মাস্ক পরেছে বটে, স্কুলে ঢোকার আগে স্যানিটাইজেশনের সেরকম কোনও ব্যাপার চোখে পড়েনি। ক্যানিংয়ের নিকারিঘাটা স্বনির্ভর শিক্ষা নিকেতনে এক একটা ক্লাসরুমে বেশ অনেক জন পড়ুয়াই ক্লাস করছে।
এক-একটি বেঞ্চে বসেছে দুজন করে ছাত্র। একেবারে প্রশাসনের নির্দেশকে অমান্য করেই চলছে ক্লাস। দিনের-পর-দিন এভাবেই ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরাও। তবে এ বিষয়ে স্কুলশিক্ষকের দাবি, সমস্ত করোনার বিধি মেনেই স্কুল চালানো হচ্ছেl প্রতিনিয়ত স্যানিটাইজেশনও করা হচ্ছে।
তবে শিক্ষকদের কথাও ফেলে দেওয়ার মতো একেবারেই নয়। এক শিক্ষক বলেই ফেললেন, “দুবছর আগে বাচ্চাদের যা শিখিয়েছিলাম, এখন ক্লাস নিতে গিয়ে দেখছি, তাঁরা সব ভুলে গিয়েছে। অনেকটাই পিছিয়ে পড়ছে ওরা। তাই সপ্তাহে অন্তত চার দিন করে ক্লাস নিলে ওরা চর্চায় থাকবে।”
আসলে স্থানীয়রাই জানাচ্ছেন, যে অঞ্চলে ওই স্কুলটি সেখানে নিম্ন মধ্যবিত্ত, দিনমজুর পরিবারেরই আধিক্য। যে সমস্ত পরিবারের সন্তানরা ওই স্কুলে যায়, তাদের বাড়িতে পড়াশোনার চর্চা সেভাবে নেই। ফলে স্কুলই তাদের একমাত্র ভরসা। স্কুলে যা শেখানো হত, সেগুলিই বাড়িতে তারা চর্চা করত। শিক্ষকরা একেবারে নিজেদের মতো করে পড়ান ওদের। কারণ বাড়তি গৃহশিক্ষককে টিউশন ফিজ় দেওয়ার মতো ক্ষমতা ওদের বাবা-মায়ের নেই।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলছেন, “অভিভাবকদের কাছ থেকে সম্মতি নিয়েছি। এলাকার মানুষের দাবি ছিল স্কুল চালানোর। বাচ্চাগুলো অনেক আগ্রহ সহকারে আসছে। ওদের স্কুল ভালো লাগে, ক্লাস করতে ভালো লাগে। বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে পারছে, খেলতে পারছে। খুবই ভালো লাগছে ওদের।”
আরেক শিক্ষক বলেন, “বাচ্চাদের অভিভাবকরাই এসে বলেছিলেন, বাচ্চারা স্কুলে আসতে চাইছে। আমাদের স্কুল কর্তৃপক্ষ মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেয়, প্রত্যেক ক্লাসের অল্প সংখ্যক বাচ্চা নিয়ে এসে ক্লাস করানোর। করোনার সমস্ত বিধি মানা হচ্ছে।”
অভিভাবক বললেন, “শিক্ষকরা আমাদের করোনা বিধি মেনেই ক্লাস করাচ্ছেন। শিক্ষকরা আমাদের বলেছেন বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে।” পরিস্থিতি কঠিন, এটা বোঝাই যাচ্ছে। করোনায় হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব, ক্লাসরুম, ব্ল্যাক বোর্ড, চক পেনসিল! কিন্তু সেই শৈশবকে ধরে রাখতে আবার খুদেদেরই বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন না তো বড়রা! প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: Shibpur Engineering College: তিন দফা দাবিতে শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অশিক্ষক কর্মীদের বিক্ষোভ