Sundarbans Royal Bengal Tiger: ডোরাকাটার ডেরায় ফাঁদ পাতে কীভাবে? জানুন ‘সুন্দরবনের রাজা’ খাচাবন্দির রোমহর্ষক কৌশল
Gosaba Royal Bengal Sighting: জানেন কি কীভাবে ফাঁদ পাতা হয় বাঘ ধরতে? সেই রোমহর্ষক ফাঁদ পাতার গল্প গ্রাউন্ড জিরো থেকে আপনাদের জন্য তুলে আনছে TV9 বাংলা।
ত ন্ম য় প্রা মা ণি ক
সুন্দরবন। বাঘে মানুষে একসঙ্গে বাস এখানে। মাঝে মধ্যেই বাঘে মানুষে মুখোমুখি হতে হয় এখানে। প্রতি মুহূর্তে বিপদের হাতছানি। এই বীভিষিকাময় দিনগুলির কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা সুন্দরবনের বাঘ-বিধবাদের ওই করুণ মুখগুলির দিকে তাঁকালেই বোঝা যায়।
আজ থেকে কয়েক বছর আগে পর্যন্ত বাঘ গ্রামে ঢুকে পড়লে, কারও উপর আক্রমণ করলে – গ্রামবাসীরা বাঘকে তাড়া করত, কখনও কখনও মেরেও ফেলত। তবে এখন দিন পাল্টেছে। বন দফতরের আধিকারিকদের, রেঞ্জারদের সৌজন্যে এখন সুন্দরবনে সচেতনতা ফিরেছে। এখন বাঘ গ্রামে ঢুকে পড়লে আর তাড়া নয়, কীভাবে বাঘটিকে আবার নিজের ‘ঘরে’ ফেরত পাঠানো যায়, সেটাই চান সুন্দরবনবাসী।
কোথাও কিছু ঘটলেই, পায়ের ছাপ দেখলেই খবর দেওয়া হয় বন আধিকারিকদের। জঙ্গল ছেড়ে বেরিয়ে আসা বাঘটিকে ধরে আবার ফেরত পাঠানো হয় জঙ্গলে। কিন্তু, বাঘ ধরা তো আর মুখের কথা নয়! বাঘের ডেরায় ঢুকে ফাঁদ পাততে হয়। একটু এদিক থেকে ওদিক হলেই নিশ্চিত মৃত্যু। বাঘের এক থাবাতেই ভবলীলা সাঙ্গ হওয়ার জোগাড়। কিন্তু জানেন কি কীভাবে ফাঁদ পাতা হয় বাঘ ধরতে? সেই রোমহর্ষক ফাঁদ পাতার গল্প গ্রাউন্ড জিরো থেকে আপনাদের জন্য তুলে আনছে TV9 বাংলা।
বাঘ ধরতে ফাঁদ তৈরির বিশেষ কৌশল রয়েছে। আর সেই কৌশল যাঁরা জানেন, একমাত্র তাঁরাই পারেন বাঘের ডেরায় ঢুকে ফাঁদ পাততে। প্রতিটি মুহূর্তে বিপদের হাতছানি। হয়ত কয়েক মিটারের মধ্যেই ওঁৎ পেতে লুকিয়ে আছে রয়্যাল বেঙ্গল। হয়ত খালি চোখে আপনি তাকে দেখতে পাচ্ছেন না। কিন্তু সবুজের ঘেরাটোপে লুকিয়ে ‘সুন্দরবনের রাজা’ কিন্তু নিষ্পলক নজর রাখছে আপনার উপর। একটি ছোট্ট অসাবধানতা, আর নিমেষে বাঘের পেটে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা।
কিন্তু তার মধ্যেই নিজের অস্তিত্বের কিছু চিহ্ন ছেড়ে যায় রয়্যাল বেঙ্গল। পায়ের ছাপ, বাঘের গায়ের গন্ধ, গাছ ও ঘাসের মধ্যে কোনও চিহ্ন – এই সব দিয়ে নিমেষে একজন অভিজ্ঞ বনকর্মী খুঁজে বের করতে পারেন, বাঘের সম্ভব্য আনাগোনা। আর এই কাজে বনকর্মীদের সাহায্য করেন এক দল স্থানীয় বাসিন্দাও। সুন্দরবনে তাঁরা বাঘ ধরার ‘ওস্তাদ’ নামেই বেশি পরিচিত। কোথাও বাঘের আতঙ্ক দেখা দিলেই, ডাক পড়ে তাঁদের। আসলে, বন দফতরের হাতে পর্যাপ্ত কর্মী নেই। আর তার উপর এত বিশাল এক কর্মকাণ্ডে স্থানীয়দের সাহায্য়ও দরকার হয়।
বন বিভাগের কর্মীরা এবং সুন্দরবনের বাঘ ধরার ওস্তাদরা একসঙ্গে ঢোকেন ডোরাকাটার ডেরায়। দৃষ্টি রাখতে হয় ৩৬০ ডিগ্রি। হাতে লাঠি বা অন্য কোনও আত্মরক্ষার জিনিস নিয়ে তৈরি হয় গোল বলয়। সেই গোল বলয় করেই বনের আরও গভীরে প্রবেশ করেন তাঁরা। যেখানে বাঘটি গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে, সেদিকে এগোতে থাকেন গোল বলয় করেই। বলয়ের মাঝে থাকেন কয়েকজন বনকর্মী। তাঁদের হাতে থাকে দড়ি, লোহার খাঁচা।
নির্দিষ্ট জায়গায় সেই খাঁচা রাখা হয়। তারপর খাঁচার ভিতরে ঝোলানো হয় টোপ। এ ক্ষেত্রে টোপ হিসেবে ছাগল বা সমতুল্য কোনও প্রাণীকে ব্যবহার করা হয়। খাঁচা, টোপ সব গুছিয়ে আবার ধীরে ধীরে ওই একইরকমভাবে গোল বলয় তৈরি করে ফিরে আসেন বনকর্মী ও ওস্তাদরা। আজ গোসাবাতে সেই পদ্ধতিতেই খাঁচা পাতা হয় সুন্দরবনের রাজাকে ধরার জন্য।
বাঘ বিশারদ অনিল মিস্ত্রি বলেন, “এখানকার মাটির লোকেরা বাঘের চরিত্র জানেন। মাটি চেনেন। প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে তাঁরা অভিজ্ঞ। আমরা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সজাগ রেখে একাজ করি। বনদফতর, সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভ, সুন্দরবনের মানুষ বাঘ বাঁচাতে চান। তাঁরা সচেতন। ”
আরও পড়ুন : Kanti Ganguly: বাঘের আক্রমণে ২ চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে মৎস্যজীবীর, সরকারকে পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ কান্তির