Sheikh Shajahan: ‘ঠেলে খাদে ফেলে মৃত্যু নিশ্চিতের পরই ঘাতক গাড়ির চালক পালান বাইকে!’ জেলে বসেই সাক্ষীকে খুনের ছক শাহজাহানের?
Sheikh Shajahan: ভোলানাথ শেখ একজন তৃণমূল কর্মী। এক সময়ে তিনি শেখ শাহজাহানের সঙ্গী ছিলেন। এই মুহূর্তে তিনি ইডি ও সিবিআই মামলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। এদিনও যাচ্ছিলেন আদালতের পথেই। আদালতে বুধবার তাঁর সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল শাহজাহানের বিরুদ্ধেই। পথেই এই ঘটনা।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা: শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাচ্ছিলেন। পথে দুর্ঘটনার কবলে অন্যতম সাক্ষী ভোলানাথ শেখ। দশ চাকার লরির ধাক্কা গাড়িতে। মৃত্যু ভোলানাথের ছেলে ও গাড়ির চালকের। সাধারণ চোখে এটা নিছকই দুর্ঘটনা। কিন্তু এর পিছনেও একাধিক প্রশ্ন তুলছে ভোলানাথের পরিবার। তাঁর ঘনিষ্ঠরাও একাধিক বিষয়ে লিঙ্ক খুঁজে পাচ্ছেন। তাতে উঠে আসছে বিস্ফোরক তথ্য! জেলে বসেই কি তবে সাক্ষীকে খুনের ছক কষেছেন শাহজাহান?
- ঘটনাক্রম, অর্থাৎ যেভাবে দুর্ঘটনাটি ও তার পরবর্তী সময়ে যা যা হল, সেটাই যথেষ্ট সন্দেহ জাগানোর পক্ষে।
- প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল মুখোমুখি ধাক্কা মারা হয়েছিল। পরে জানা যায়, একটি দশ চাকার লরি, ভোলানাথের চার চাকার গাড়িতে পাশে ধাক্কা মারে। বাসন্তী হাইওয়েতে দুর্ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বলছে, বাসন্তী হাইওয়ে এমনিতেই দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা। কিন্তু যে জায়গায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, অর্থাৎ ন্যাজাটের বয়ারমারি পেট্রল পাম্পের কাছে, সেই এলাকা ‘দুর্ঘটনাপ্রবণ’ বলে চিহ্নিত করা নেই। ওই জায়গায় রাস্তা যথেষ্ট চওড়া। কোনও টার্নও নেই।
- স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করছেন, দশ চাকার লরি গাড়িকে একেবারে পিছন থেকে এসে পাশে এসে ধাক্কা মারে। তারপর কিছুটা দূর ধাক্কা মেরে ঠেলে খাদে ফেলে। চার চাকা গাড়ি একেবারে দুমড়ে মুছড়ে যায়। ভিতরেই আটকে পড়েন তিন জন। ঘাতক চালক লরি থেকে লাফিয়ে নামেন।
- কিছুটা দূরেই তখন একটি বাইক চলে আসে। বাইকে তিনি উঠে উধাও হয়ে যান বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের।
- তালতলা মোড় থেকে ট্রাকের গতি বেপরোয়া ছিল দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের।মালবোঝাই লরি জোরে ছোটানো যায় না। লরি ফাঁকাই ছিল। ঘটনার আগে ট্রাকটি অন্য কোনও গাড়িকে জায়গা ছাড়ছিল না। ফাঁকা লরিই কি তবে হাতিয়ার?
- দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ভোলার ছোট ছেলে ও গাড়ি চালকের। ভোলার চোট গুরুতর নয়। তবে ছেলের মৃত্যুর খবরে তাঁর বুকে ব্যথা হচ্ছে, তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
ভোলানাথ শেখ একজন তৃণমূল কর্মী। এক সময়ে তিনি শেখ শাহজাহানের সঙ্গী ছিলেন। এই মুহূর্তে তিনি ইডি ও সিবিআই মামলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। এদিনও যাচ্ছিলেন আদালতের পথেই। আদালতে বুধবার তাঁর সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল শাহজাহানের বিরুদ্ধেই। পথেই এই ঘটনা।
ভোলার পরিবার-সহ গ্রামবাসীদের একাংশের বক্তব্য, শাহজাহানের বিরুদ্ধে এহেন রেকর্ড আগেও রয়েছে, যে জেলে বসেই তিনি একাধিক প্ল্যানিং করেছে। এর আগে সন্দেশখালিতে মণ্ডল পরিবারের ওপর হামলা হয়েছে। অভিযোগ, তাতেও পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন শাহজাহানই। তাই ভোলার গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়া, তাঁর ছেলের মৃত্যু নিতান্তই কোনও সাধারণ দুর্ঘটনা বা কাকতালীয় নয়, জেলে বসে শাহজাহানও এই কাজ করতে পারেন বলে অভিযোগ উঠছে। বিজেপি নেতা সজল ঘোষ বলেন, “এটা একটা পরিকল্পিত খুন। এটা দুর্ঘটনা নয়, মার্ডার কেসকে দুর্ঘটনা সাজানোর পরিকল্পনা। ধাক্কা মারল, আর সঙ্গে সঙ্গে বাইক চলে এল, ঘাতক চালক বাইকে চলেও গেল! উধাও হয়ে গেলেন! এর নিরপেক্ষ তদন্ত হোক।”
ভোলানাথের বড় ছেলে সরাসরি এই ঘটনাকে চক্রান্ত করে ‘খুন’ বলছেন। বিশ্বজিৎ ঘোষের বক্তব্য, “এর আগেও বাবাকে মারার জন্য হুমকি দিয়েছিল। বাবাকে খুনের উদ্দেশ্যেই গাড়ি ফলো করা হচ্ছে না। কোনও দুর্ঘটনা নয়, ১০০ শতাংশ খুন। শাহজাহানের নির্দেশ কাজ করেছে সবিতা রায়, মোসলেম শেখ।” উল্লেখ্য, এই মোসলেম শেখ হলে ন্যাজাট পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি, সবিতা রায় সভাপতি। তাঁদের বিরুদ্ধে শাহজাহানের হয়ে গ্রামে একচ্ছত্র অভিযোগ চালানোর অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য এবিষয়ে মোসলেম শেখের বক্তব্য, “একাংশ শতাংশ মিথ্যা কথা। “
