দুই সন্তানকে দু’হাতে চেপে ধরেছিলেন, চোখের সামনে ভেসে যাচ্ছিলেন স্ত্রী! ঝড়খালির অভিশপ্ত রবিবার
অনিবার্যের কাছে হার মানতে হয়েছে কলকাতার বাসিন্দা অলোক দোলুইকে। স্ত্রী-দুই সন্তানকে নিয়ে ঝড়খালি ঘুরতে গিয়েছিলেন অলোক।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা: শীতের মরসুমে ছুটির সকালে হঠাৎই প্ল্যানটা হয়েছিল। ব্যস্ত জীবন থেকে কিছুটা হলেও মিলত মুক্তির স্বাদ! কিন্তু তাতে যে ‘জীবন-মুক্তিই’ হতে চলেছে, কে-ই বা তা ভেবেছিল। অনিবার্যের কাছে হার মানতে হয়েছে কলকাতার বাসিন্দা অলোক দোলুইকে। স্ত্রী-দুই সন্তানকে নিয়ে ঝড়খালি ঘুরতে গিয়েছিলেন অলোক। রবিবারে ঝড়খালির (Jharkhali) নৌকা দুর্ঘটনায় (Boat Accident) তাঁর চোখের সামনেই তলিয়ে গেলেন স্ত্রী! এখনও পাড়েই দাঁড়িয়ে স্বামী, অপেক্ষায় কতক্ষণে মিলবে দেহ!
দুই সন্তানকে কোনওক্রমে জড়িয়ে ধরেছিলেন। চোখের সামনে তখন জলে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন স্ত্রীও। ভেবেছিলেন দুই সন্তানকে কোনওক্রমে পাড়ে ঠেকিয়েই স্ত্রীর হাতটা চেপে ধরবেন। কিন্তু পারেননি। স্ত্রী ততক্ষণে ভেসে গিয়েছেন। রবিবারের রাত পেরিয়েছে। তল্লাশি চলেছে রাতভর। সোমবার সকাল পর্যন্ত শেষ পাওয়া খবরেও প্রতিমা দোলুইয়ের কোনও খোঁজ মেলেনি।
রবিবার ঝড়খালিতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নদীর পাড় ছাড়তেই যাত্রী নিয়ে উল্টে যায় ‘মা গঙ্গা’ নামে একটি নৌকা। জনা চল্লিশেক যাত্রী ছিলেন তাতে। প্রতিমা ছাড়া প্রত্যেককেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়। অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বছর পঁয়ষট্টির আসানসোলের এক অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার সুবোধ গৈতন্য। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: ঝড়খালিতে উল্টে গেল পর্যটকবোঝাই নৌকা, মৃত ইঞ্জিনিয়ার
অভিযোগ, অতিরিক্ত যাত্রী তুলেছিলেন নৌকার মালিক। যাত্রীরাই প্রথমে বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা শোনেননি। বরং আশ্বস্ত করে নৌকা ছেড়েছিলেন। পাড় ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই উল্টে যায় নৌকাটি। স্থানীয়রাই প্রথমে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। পরে ডুবুরি নামায় কোস্টাল থানার পুলিশ। নৌকার মালিককে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
অলোক কিচ্ছুটি বলতে পারেননি আজ। চোখ তাঁর ঝপসা। প্রশ্ন করার মতো মানসিকতাও ছিল না কারোর। শীতের সকালে ঠকঠক কাঁপচ্ছিলেন অলোক আর নিজের অজান্তে বলে চলেছিলেন, ‘কী হয়ে গেল ভগবান। সংসারটাই তো ভেসে যাবে ওকে ছাড়া…’।