সুন্দরবন: প্রকাশ্যেই চুরি হচ্ছিল বালি। মাতলা (Matla) নদীর বক্ষ থেকে বালি তুলে সেই বালি ট্রাকে, লরিতে করে সরবরাহ করা হচ্ছিল বেআইনি ভাবে। সেই খবর প্রকাশিত হতেই নড়েচড়ে বসল প্রশাসন। কুলতলি থানার পুলিশ (Kultali Police Station) অভিযান চালিয়ে সাদা বালি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত দশজনকে গ্রেফতার করেছে। একই সঙ্গে বালি তোলার নৌকা ও দুটি সাদা বালি বোঝাই লরি বাজেয়াপ্ত করেছে।
সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার কুলতলি। কুলতলির মাতলা নদী বক্ষ থেকে প্রকাশ্যেই দিনরাত চলছে বালি চুরি। অভিযোগ গ্রামবাসীদের। প্রতিবাদ করলেই বালি মাফিয়াদের হুমকির শিকার হতে হচ্ছে তাঁদের। প্রশাসনকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু এলাকাবাসীদের বক্তব্য, কখনও কখনও আশ্বাস মিলেছে দেখে নেওয়ার। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি কিছুই।
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, নদী বক্ষ থেকে যে বালি চুরি হচ্ছে, তা কেল্লার অম্বিকানগর কাঠখালি, রাস্তার ধারে বড় বড় বালির স্তুপ করে বিক্রি হচ্ছে। এমনকি এই বালি বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পেও কাজে লাগানো হয় বলে অভিযোগ । এছাড়াও জেলার বিভিন্ন প্রান্তে কুলতলি থেকে সেই বালি ট্রাক-লরিতে করে সরবরাহ হয়।
নদী থেকে বালি তোলার কোনও অনুমতি নেই। নিয়ম সেখানে দিনের পর দিন নদী বক্ষ থেকেই বালি তুলছে একটা চক্র। কুলতলি এলাকার প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ জন মজুর প্রতিদিন কাজ করেন। তাঁঁদের কাজ এই বালি তোলাই। প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ২৫ টি নৌকো নদী বক্ষ থেকে তুলে আনে। কিন্তু এখান থেকেই উঠছে প্রশ্ন। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কীভাবে চলছে এই বালি ব্যবসা?
এক জন শ্রমিক বলছেন, “সুন্দরবনের মাতলা নদী থেকে বালি আনা হচ্ছে। প্রায় ১৬-১৭ নৌকা বালি তুলতে যায়। প্রত্যেক নৌকার থাকে ৬-৭ জন করে। এই বালি আমরা কাঠখালি, বিভিন্ন ইট ভাঁটায় বিক্রি করি। সরকারি প্রকল্পের কাজেও ব্যবহৃত হয়।” এরপরই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, বালি তুলতে প্রশাসনের বাধার সম্মুখীন হন না আপনারা? শ্রমিকের জবাব, “প্রশাসন মাঝেমধ্যে বাধা দেয় আবার দেও-ও না।”
আরেক শ্রমিকের সোজাসাপটা উত্তর, “আমাদের যে মাঝি রয়েছে, তাঁরা বনদফতর, থানা-ফাঁড়িতে কিছু কিছু দিয়ে চালায়…” আরেক শ্রমিকের কথায়, “আগে আমাদের কয়েকটি নৌকার অনুমতি ছিল। তারপর কিছুদিন চলার বেয়াড়া থেকে ওএলটি দিয়েছিল। আমাদের অফিস স্টাফ, রেঞ্জার আশ্বাস দিয়েছিলেন ওএলটি দেওয়া হবে। কিন্তু তারপর আর কিছুই হয়নি। আমরা এইভাবে কাজ চালাচ্ছি।”
এরপরই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন মহকুমা শাসক সুমন পোদ্দার। বলেন, “নদী গর্ভ থেকে সাদা বালি তোলার জন্য কোনও রয়্যালটি কাটা যায় না। এটা বেআইনি। আগেও এরকম অভিযোগ পেয়েছিলাম। তখনই পুলিশকে জানিয়েছিলাম। ভূমি রাজস্ব দফতরকেও জানানো হয়েছিল। তখন বালি তোলা বন্ধ করা হয়েছিল। বেশ কিছুদিন বন্ধই ছিল বালি তোলা। এখনই আবার এই অভিযোগ পেলাম। এবার বিষয়টি আমরা কড়া ভাবে দেখছি।”