সুন্দরবন: গত সপ্তাহেও বাঘের আতঙ্কে কাঁপছিল সুন্দরবন। বিগত ছয় দিন ধরে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে আতঙ্কে ঘরের ভিতরে বসেছিলেন স্থানীয়বাসিন্দারা। বাঘ ধরেতে রীতিমত হিমশিম খেতে হয়েছিল বনদফতরকে। শেষে ছয়দিনের মাথায় আয়ত্তে আসেন ‘বাঘমামা’। এদিকে, গতকাল কাঁকড়া ধরতে গিয়ে কুলতলিতে ফের বাঘের হামলায় জখম হন এক মৎস্যজীবী। তাঁর নাম অমল দন্ডপাট। বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ওই ব্যক্তি। রীতিমত বাঘের মুখ থেকে ফেরত আসেন তিনি। আজ তাঁকে দেখতে যান প্রাক্তন সুন্দরবন মন্ত্রী কান্তি গাঙ্গুলী।
কান্তিবাবু বলেন, “গতকাল রাত সাতটা নাগাদ মৎসজীবীরা কাঁকড়া ধরতে যান। জলের ভিতরে ঘাপটি মেরেছিল বাঘটি। হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ে তার উপর। ব্যক্তির সোয়েটার ছিঁড়ে গিয়েছে। তার চোখে, মাথায় আর মুখে কামড়ে দিয়ে টানাটানি করতে থাকে বাঘটি। পরে লাঠি পেটা করে তাড়ানো হয় তাঁকে। ক্ষুধার্ত বাঘ খাবার না পেয়ে এই কাজ করেছে। বনদফতরের মানুষজন এখনও আসেননি। ওই ব্যক্তির দুটি চোখ নষ্ট হয়ে যাবে। সরকারের উচিৎ এদের পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ানো।”
এদিকে, বাঘের হামলায় জখম সজনেখালি বিটের অফিসার পার্থ হালদার। তাঁকে স্পিড বোটে গোসাবা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। গোসাবার গ্লাসখালি ও এমলিবাড়ি গ্রাম লাগোয়া নদীর চরে বাঘের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছেন বনকর্মীরা। সেই দলে ছিলেন বিট অফিসার পার্থ হালদারও। সেসময়ই আচমকা বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ে। থাবা লাগে তাঁর গায়ে। আকস্মিকতার ঘোর কাটিয়ে ওঠার আগেই পার্থর শরীরের মাংস খুবলে নিয়ে পালিয়ে যায় বাঘ।
প্রসঙ্গত, ক্রমেই পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে গোসাবায়। আগে বাঘটি ছিল চরঘেরি এলাকায়। চার কিলোমিটার দূরে গ্লাসখালি ও এমলিবাড়ি গ্রাম লাগোয়া নদীর চরে বাঘটিকে শনিবার সকালে দেখতে পাওয়া যায়। সাতজেলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার একাধিক জায়গায় গ্রামবাসীরা বাঘের পায়ের টাটকা ছাপ দেখতে পেয়েছেন বলে জানান। বাঘের আতঙ্কে ঘুম উড়েছে গ্রামবাসীদের। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের বন কর্মীরাl ওই এলাকার বাসিন্দারা নতুন করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেনl এদিন সকালে প্রথমে সেখানকার মৎস্যজীবীরে নজরে পড়ে বাঘের পায়ের ছাপ।
শুক্রবার সকালে গোসাবা ব্লকের অন্তর্গত লাহিড়িপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গ্রামের বিধান কলোনিতে নতুন করে বাঘের আতঙ্ক ছড়ায়। চর এলাকায় একাধিক পায়ের ছাপ দেখতে পান তাঁরা। মৎস্যজীবীরাই গ্রামের দিকে থাকা গোমর নদীর চর ধরে এগোতে থাকেন। সেখানে পায়ের ছাপ দেখতে পান বলে দাবি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন বনকর্মীরাও।
বন দফতর গ্রামের দিকে নাইলনের জাল দিয়ে ঘিরে ফেলেন। যাতে নদী সাঁতরে আবার নিজের জঙ্গলে ফেরত যেতে পারে বাঘটি, সেই ব্যবস্থা করা হয়। সজনেখালি, বসিরহাট রেঞ্জের সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের আরও বন কর্মীরা সেখানে চলে যান। ছিলেন সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের উপ ক্ষেত্র অধিকর্তা জোন্স জাস্টিন। সকালে আবার অন্যত্র দেখা যায় বাঘের পায়ের ছাপ।