জলপাইগুড়ি: পেট কেটে প্লীহা বাদ দিয়ে পেটে জমে থাকা দু’লিটার রক্ত বের করে দুর্ঘটনাগ্রস্ত রোগীকে বাঁচালেন চিকিৎসক। জটিল স্পেলেনেকটমি অপারেশনের মাধ্যমে রোগীর পেট থেকে দু’লিটার রক্ত বের করলেন জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ডাঃ (Doctor) রজত ভট্টাচার্য। ওই হাসপাতালে এই প্রথম অত্যন্ত জটিল স্পেলেনেকটমি অপারেশন হল।
মানবদেহে প্লীহা পেটের উপরিভাগের বাঁ দিকে থাকে। এটি লসিকাতন্ত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। সহজ ভাষায় একে ‘রক্তের রিজার্ভার’ও বলা হয়ে থাকে।
সম্প্রতি ধূপগুড়িতে পথ দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে জখম হন অবিনাশ রায় নামক ওই ব্যক্তি। দুই গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষের ফলে তিনি ছিটকে পড়ে যান রাস্তার পাশে মজুত করে থাকা পাথরের ওপর। মাথা-সহ গোটা শরীরে চোট লাগে তাঁর। এরপর গত ১২ দিন ধরে তিনি জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন অবিনাশ। কিন্তু রোগীর প্লীহা থেকে অনবরত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। যার ফলে পেটে জমে গিয়েছিল প্রায় ২ লিটার রক্ত! শেষ পর্যন্ত সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে জটিল অপারেশন করে অসহায় মুমূর্ষ রোগীর প্রাণ বাঁচান জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক রজত ভট্টাচার্য।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, লাগাতার চিকিৎসার ফলে অন্যান্য সমস্যা কমলেও অনবরত রক্তক্ষরণ কিছুতেই বন্দ করা যাচ্ছিল না। যার জেরে রোগীর পেট ফুলে যেতে শুরু করে। স্ক্যান করে চিকিৎসক দেখতে পান, প্লীহা থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তখন চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত নেন প্লীহা কেটে বাদ দেওয়ার।
আরও পড়ুন: বছরের প্রথম দিন বাড়ি থেকে বান্ধবীকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন, ফিরল যুবকের রক্তাক্ত নিথর দেহ!
চিকিৎসক রজত ভট্টাচার্য বলেন, পাথরের ওপর পড়ে যাওয়ায় মাথা ও বুকের পাঁজরে মারাত্মক চোট লাগে। সেই চোটের ফলে রোগীর প্লীহা ফুটো হয়ে ক্রমাগত রক্ত বের হচ্ছিল। এরপর তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, প্লীহা কেটে বাদ দিতে হবে। “সেই মোতাবেক আমি ও আমাদের হাসপাতালের মোট ৫ জনের টিম প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে ধরে জটিল অস্ত্রোপচার চালাই। প্লীহা কেটে বাদ দেওয়ার পর পেটে মজুত থাকা প্রায় দু’লিটার রক্ত বের করা হয়েছে। রোগী এখন সুস্থ আছে,” বলে জানান চিকিৎসক।
রোগীর দাদা জ্যোতিষ রায় জানালেন, “জটিল অপারেশন নার্সিং হোমে করাতে গেলে তিন লক্ষাধিক টাকা লাগত। আমরা গরীব মানুষ অত টাকা কোথায় পাব। এরপর আমরা ডাক্তার রজত ভট্টাচার্যর কাছে ছুটে গিয়ে তাঁকে অনুরোধ করি। তিনি রাজি হয়ে যান৷ এরপর গতকাল প্রায় চার ঘণ্টা ধরে অপারেশন করে আমার ভাইকে সুস্থ করে তোলেন। উনি রাজি না হলে আমরা খুব সমস্যায় পড়তাম। আমার ভাই নতুন ভাবে জীবন ফিরে পাওয়ায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।”
আরও পড়ুন: করোনা-টিকাকরণের ড্রাই রান শুরু বাংলায়, জেনে নিন কীভাবে এগোল মহড়া