উত্তর দিনাজপুর: প্রথম পক্ষের স্ত্রীরও অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল কয়েক বছর আগে। আর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় ঘর থেকেই। দুটো মৃত্যুর ক্ষেত্রেই অদ্ভূত একটা মিল খুঁজে পাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। পড়শিদের অনেকেই অভিযোগ করছেন, ‘দ্বিতীয় বউটাকেও ওঁরা খুনই করেছে…’ পণের দাবিতে এক গৃহবধূ হত্যার অভিযোগ উঠল উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে। স্বামী সহ শ্বশুর বাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। রবিবার এই ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। এই ঘটনায় রীতিমত তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রায়গঞ্জে। মৃত ওই গৃহবধূর নাম মামনি বর্মন (২৬)। স্বামী-শাশুড়ি-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। প্রত্যেকেই পলাতক। আপাতত এক জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
মৃতার পরিবার সূত্রে জানা দিয়েছে, দু’বছর আগে কাশিবাটি এলাকার বাসিন্দা অমল বর্মনের সঙ্গে বিয়ে হয় মামনির। বিয়ের পর থেকেই মামনির ওপর অত্যাচার চালাতেন তাঁর স্বামী। বাবার বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসার জন্য মারধরও করা হত বলে অভিযোগ পরিবারের। অত্যাচারের মাত্রা এতটাই বেড়েছিল যে বেশ কয়েকবার শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাবারবাড়িও চলে এসেছিলেন মামনি। পরে আবার তাঁকে বুঝিয়ে শ্বশুরবাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতেন অমল। তেমনই দাবি করছে পরিবার। দু’বাড়ির মধ্যস্থতার আবার সংসার করতে রাজি হতেন মামনি। কিন্তু সংসার করতে পারলেন কই?
এসবের মাঝেই শনিবার রাতে মামনির বাড়ির লোক জানতে পারেন, তাঁদের বাড়ির মেয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। খবর পেয়ে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বাড়ির লোক ছুটে যান। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, যতক্ষণে ওই গৃহবধূকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল, তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে শ্বাসরোধের ফলেই মৃত্যু হয়েছে ওই গৃহবধূর। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। সবথেকে উল্লেখ্য, হাসপাতাল থেকে জানা গিয়েছে, ওই গৃহবধূকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাহলে কি তাঁকে হাসপাতালে ফেলেই পালিয়ে গিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা?
রবিবার দুপুর থেকে মৃতের পরিবারের সদস্য ও গ্রামবাসীরা হাসপাতাল ও থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। মৃতার স্বামী-সহ শ্বশুর বাড়ির লোক মিলিয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্তে জানা গিয়েছে, মূল অভিযুক্ত অমলের এর আগেও বিয়ে হয়েছিল। সেই গৃহবধূরও মৃত্যু হয়েছিল অস্বাভাবিকভাবেই। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তাঁকেও খুন করা হয়েছিল। কিন্তু তখন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল। ঘটনায় ইতিমধ্যেই একজনকে পুলিশ আটক করেছে বলে জানা গেছে। মৃতার ভাই কৌশিক বর্মন অভিযোগ, শনিবার তাঁরা হাসপাতালে এসে দেখেন, তাঁর দিদিকে মৃত অবস্থায় শ্বশুরবাড়ির লোক জরুরি বিভাগের সামনে ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে। শ্বশর বাড়ির লোকেরা তাঁর দিদিকে মেরে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।