উত্তর দিনাজপুর: রাজ্যে ফের উর্ধ্বমুখী দৈনিক কোভিড গ্রাফ। উদ্বেগ বাড়াচ্ছে নয়া স্ট্রেইন ওমিক্রন (Omicron)-এ আক্রান্তের সংখ্যাও। এই পরিস্থিতিতে ‘দুয়ারে সরকার’ (Duare Sarkar) ও ‘স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড’ (Student Credit Card) বিলি কর্মসূচি বাতিল করেছে রাজ্য সরকার।
রাজ্যজুড়ে কোভিডের বাড়বাড়ন্তে যখন আংশিক লকডাউনের পথে হাঁটতে চলেছে রাজ্যের সরকার, ঠিক তখনই উত্তর দিনাজপুরের দুই বিধানসভা এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কর্মসূচীতে কোভিড বিধি উলঙ্ঘনের চিত্র দেখা গেল শনিবার।
করণদিঘি ও ইটাহার দুই ব্লকে রাজ্যের দুই ক্যাবিনেট মন্ত্রীর উপস্থিতিতেই মাস্ক উধাও কর্মীদের মুখ থেকে। ন্যূনতম শারীরিক দূরত্ব বিধিও মানা হল না। এমনকি মন্ত্রীদের অধিকাংশ সময় দেখা গেল ভরা সভায় মাস্কবিহীন মুখে বসে আছেন। রাজ্যজুড়ে মাস্ক পরা না নিয়ে যখন পুলিশি ধরপাকড় চলছে, তখন মন্ত্রীদের উপস্থিতিতেই কেন এমন ছবি? এই প্রশ্ন করতেই হকচকিয়ে গেলেন জেলা সভাপতি থেকে বিধায়করা। খানিকটা ঘুরিয়ে উত্তর দিয়ে নিজেদের মান বাঁচানোর চেষ্টা করলেও মাস্ক পরাটা যে বাধ্যতামূলক তা স্বীকারও করেন তাঁরা। দুয়ারে সরকার বাতিল ও পুনরায় লকডাউনের সম্ভাবনার মুখে দাঁড়িয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব আর রাজ্যের মন্ত্রীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব বিজেপি।
রাজ্যজুড়ে হু হু করে বাড়ছে কোভিড সংক্রমণ। পিছিয়ে নেই উত্তর দিনাজপুরও। জেলাতেও নিত্যদিন বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা কোথায়? তার ছবি কিছুদিন ধরেই তুলে ধরেছে টিভি নাইন বাংলা।
এ যেন শিব ঠাকুরের আপন দেশের মতো। সরকারি কোভিড বিধির তোয়াক্কা না করেই বিপুল জমায়েত ঘাসফুলের নেতৃত্বে। শনিবার বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান কর্মসূচী ছিল করণদিঘিতে। সেই সঙ্গে ছিল শীতবস্ত্রদানের কর্মসূচি। আবার এদিন বিকালে ইটাহারেও ছিল তৃণমূলে যোগদানের কর্মসূচি। এই দুই জায়গায় ছিলেন রাজ্যের সংখ্যালঘু দফতরের মন্ত্রী গোলাম রব্বানী ও তৃণমূলের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল। আবার ইটাহারে ছিলেন রাজ্যের আরও দুই মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ও বিপ্লব মিত্র। ছিলেন এলাকার দুই তৃণমূল বিধায়ক গৌতম পাল ও মোশারফ হোসেন।
জেলার দুই প্রান্তেই তৃণমূলের কর্মসুচীতে মাস্ক বিহীন অবস্থায় দেখা যায় মঞ্চে থাকা নেতা নেতা ও দলীয় কর্মী সমর্থকদের। আর যখন এই দুই অনুষ্ঠান চলছে, তখন অধিকাংশ সময়ই মাস্ক বিহীন মুখে বসে থাকতে দেখা যায় নেতামন্ত্রিদের। প্রকাশ্যে এই মাস্ক ছাড়া মিটিং মিছিল যখন চলছে, ঠিক তখনই কোভিডের বাড়বাড়ন্তে আংশিক লক ডাউনের সম্ভাবনার সঙ্গে দুয়ারে সরকার বাতিল ঘোষণা করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। আর এতেই উঠছে প্রশ্ন। রাজ্যের ক্যাবিনেট মন্ত্রীরা হাজির থাকলেও কী ভাবে এমন অসচেতনতার চিত্র দেখা গেল?
নীতি নির্ধারক যাঁরা, তাঁরাই যদি নিয়ম ভঙ্গ করেন, তাহলে সংক্রমণ ছড়ালে তার দায় কে নেবে? ইতিমধ্যেই এই সব প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করে কোভিড বিধির তোয়াক্কা না করে এভাবে বিপুল জমায়েত, যাতে কোভিড সংক্রমন বাড়বে এবং এতে মঞ্চে উপবিষ্ট নেতা মন্ত্রী ও দলীয় কর্মীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে বিজেপি। তবে এনিয়ে রাজনৈতিক তরজা যতই থাকুক, এই অসচেতনতা আমজনতার জীবনে যে প্রভাব ফেলতে চলেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।