উত্তর দিনাজপুর: চার মাসের শিশুকন্যাকে চারদিন ধরে খুঁজে পাচ্ছিলেন না মা। পরিবারের লোকজন হন্যে হয়ে খোঁজ করলেও পাননি শিশুটিকে। এরইমধ্যে বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে বীভৎস পচা গন্ধ বের হতে শুরু করে। বন্ধ সেপটিক ট্যাঙ্কে এমন কী পচল তা নিয়ে ভেবেই কূল কিনারা পাচ্ছিলেন না লোকজন। শনিবার ট্যাঙ্কের মুখ খুলতেই আঁতকে ওঠেন বাড়ির লোকজন। সেখানেই পড়ে রয়েছে ছোট্ট একরত্তি কন্যাসন্তান। উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখর বোচাগাড়ি গ্রামের ঘটনা। এই ঘটনা খুন বলেই অভিযোগ শিশুর পরিবারের। কিন্তু কে বা কারা এমন ঘটনা ঘটাল তা নিয়ে ধন্দে পরিবার। তদন্ত শুরু করেছে গোয়ালপোখর থানার পুলিশ।
উত্তর দিনাজপুর জেলার গোয়ালপোখর থানার গতি গ্রামপঞ্চায়েতের বোচাগাড়ি এলাকা। সেখানকার বাসিন্দা জামাল হুসেন। ভটভটি গাড়ি চালান তিনি। স্ত্রী তাহেরুন্নেসা ঘরকন্যা সামলান। তাদেরই ছোট্ট চার মাসের মেয়ে রিজওয়ানা খাতুন। পরিবারের দাবি, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায় শিশুটি। বাড়ির লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও পাওয়া যায়নি। এরপর বাড়ির শৌচালয় থেকে পচা গন্ধ পেয়ে সন্দেহ হওয়ায় সেপটিক ট্যাঙ্কের ঢাকনা সরিয়ে দেখে ভিতর ওই শিশুকন্যার মৃতদেহ পড়ে রয়েছে।
শিশুটিকে যখন উদ্ধার করা হয়, সারা গায়ে কাদা ছোপ ছোপ। ফুলে গিয়েছে শরীর। ভয়াবহ সে দৃশ্য। মেয়েকে এভাবে দেখে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করেন মা। গ্রামের লোকজনও সে দৃশ্য দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি। পরিবারের দাবি, বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কের ঢাকনা বন্ধই থাকে। এদিকে চার মাসের শিশু হাঁটতেও পারে না। তাই কেউ ওই বাচ্চাটিকে নিয়ে গিয়ে সেপটিক ট্যাঙ্কের ভিতর ফেলে দিয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যথেষ্ট রহস্য দানা বাধছে তদন্তকারীদের মনে। কোলের শিশু কীভাবে সকলের চোখের সামনে থেকে উধাও হয়ে গেল! পরিবারের লোকজনের এই ঘটনায় কাউকে সন্দেহ হয় কি না তাও জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। একইসঙ্গে এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গেও কথা বলে এই রহস্য ভেদ করার চেষ্টা চালাচ্ছে তদন্তকারীরা।
গোয়ালপোখর থানার পুলিশ শিশুর মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। মৃত শিশুর পরিবারের তরফে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। যদিও কী কারণে, কে বা কারা এই কাজ করেছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। শিশুর দাদু মফিজুদ্দিন বলেন, “আমি মঙ্গলবার ঘরের বাইরে বসেছিলাম। বাচ্চার মা রান্না করছিল। বাচ্চা দোলনায় শুয়ে ছিল কি না আমি জানি না ঠিক। সন্ধ্যার সময় ওর মা বলছে মেয়েকে খুঁজে পাচ্ছে না। আমি বললাম, গ্রামের কেউ হয়ত নিয়েছে, যাও গিয়ে দেখো। তারপর সবার বাড়িতে খোঁজ করা হল। কিন্তু কোথাও বাচ্চাকে পাইনি।”
মফিজুদ্দিন জানান, মাইকিং করে খোঁজ করা হয়। কিন্তু তাতে কোনও ফল হয়নি। মফিজুদ্দিনের কথায়, “এরপর বাথরুমের ট্যাঙ্কের মধ্যে বাচ্চাকে পাই। ঢাকনা দেওয়া ছিল। বাচ্চা তো হেঁটে যেতে পারে না। কেউ নিশ্চয়ই ওখানে ফেলে দিয়েছে।”