মুর্শিদাবাদ: বিধানসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা না হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ঢুকে পড়েছেন ভোটের মেজাজে। মঙ্গলবার তাঁর ব্যাক টু ব্যাক কর্মসূচি থেকেই সেটা পরিষ্কার। তবে পূর্ব বর্ধমানে মমতার সভা থেকেও বেশি নজর ছিল তাঁর বহরমপুরের সভায়। শুধু তো বিজেপি নয়। বাম-কংগ্রেসের পাশাপাশি এবারের ভোটে যে ‘তৃতীয় শক্তির’ উদয় হয়েছে, তাদের নিয়েও মাথা ব্যথা কম নেই শাসকদলের।
ত্রিফলা শক্তির মোকাবিলার লক্ষ্যে অধীর চৌধুরীর গড় বহরমপুরের সভা থেকে মমতার স্পষ্ট বার্তা, “আপনার একটা ভোট অন্য দিকে পড়লে সেটা কিন্তু বিজেপি কাছে পৌঁছে যাবে।” বক্তব্যে আসাদউদ্দিন ওয়েইসির মিম বা পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের নাম নেননি মমতা। তবে ঠারে ঠোরে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন, এই তৃতীয় পক্ষগুলি আদতে বিজেপির ‘বি-টিম’।
মমতার কথায়, “বিজেপি কিছু কিছু মুসলিম সংগঠনকে সাম্প্রদায়িকতার জিগির তুলে পাঠিয়ে দেয় অশান্তি করার জন্য। সেই অশান্তির মধ্যে যাবেন না। আপনার একটা ভোট অন্য দিকে পড়লে সেটা কিন্তু বিজেপি কাছে পৌঁছে যাবে। যদি বিজেপিকে চান ভোট তবে অন্য জায়গায় যেতে পারে।” সাংসদ অধীর চৌধুরীর গড়ে দাঁড়িয়ে বাম-কংগ্রেসকেও কটাক্ষ করেন তিনি। “কংগ্রেস জেতার জন্য বড় বড় কথা বলবে, ওরা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে পারে না। সিপিএম-ও বিজেপির বড় বন্ধু,” বলেন মমতা।
তৃণমূলে থাকার সময় অধীর-গড়ে কংগ্রেসে ভাঙন ধরাতে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এই দলত্যাগীকে আজকাল শাসকদলের তরফে ‘মির্জাফর’ বলেও কটূক্তি করা হয়ে থাকে। এ দিন মুর্শিদাবাদের মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রীকে বিঁধতে মমতা টেনে আনেন ইতিহাসের গল্প। সিরাজউদোল্লা আর মির্জাফরের কথা টেনে বলেন, “প্রথমজন দেশকে এতটা ভালবাসতেন যে নিজের মুকুট মির্জাফরকে দিয়ে দেন। সেদিন মির্জাফর সিরাজউদোল্লার কথা শোনেনি। দেশের সঙ্গে গদ্দারি করেছিল।” এরপরই নাম না কর শুভেন্দু-রাজীবদের মমতার নিশানা, “এখানেও দু-একজন দুষ্টু গরু যারা হাম্বা হাম্বা বুম্বা বুম্বা করে। অনেক দুর্নীতি করে এখন ভাবছে যদি ধরা পড়ি তাই বিজেপির ওয়াশিং মেশিনে চলে যাই। এগুলো সাদা নয়। এগুলো কালো কাদা।”
আরও পড়ুন: সব নিয়ে যাবে আদানিবাবুরা, আলু-সেদ্ধ ভাতও পাবে না কৃষকরা : মমতা
তৃণমূলের তোলা ‘বহিরাগত’ ইস্যুতে বিজেপি ইতিমধ্যেই দাঁত-নখ বের করে আক্রমণ ফিরিয়ে দেওয়া শুরু করেছে। তাতে অবশ্য তৃণমূল সুপ্রিমোর অবস্থানে কোনও পরিবর্তন আসেনি। মঙ্গলবার বহরপুরের সভা থেকেও মমতাকে বলতে শোনা যায়, “বিজেপি বাংলার পার্টি নয়। গুজরাটের পার্টি। এরা দিল্লিতে দাঙ্গা করার পার্টি। এরা মুখে বলে হরি হরি, আর সাধারণ মানুষকে খুন করি। আমরা বলি হরে কৃষ্ণ হরে হরে, তৃণমূল কংগ্রেস ঘরে ঘরে।”
আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে তিনি বলেন, “আমাকে চমকালে মানুষ তাদের ধমকায়, আমাকে চমকালে আমি গর্জাই, আমি বর্ষাই। যতক্ষণ বাঁচব রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো বাঁচব।”
আরও পড়ুন: ‘হিন্দুস্তানি মুসলিম হতে পেরে গর্বিত’, নমোর আবেগে আপ্লুত কংগ্রেসের আজ়াদ