
পশ্চিমবঙ্গ: বাংলায় আট দফা ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। এদিকে থেমে নেই করোনা সংক্রমণও। স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া তথ্য বলছে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন দু’শোর বেশি মানুষ। মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। এই প্রেক্ষিতে প্রশ্নের মুখে ভোটকর্মীদের করোনা-রক্ষাকবচও। বাংলার ভোটের নির্ঘণ্ট দেখে তাই সংশয় প্রকাশ করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ঠিক কী বলছেন তাঁরা?
করোনার প্রতিষেধক হাতে চলে এসেছে আগেই। গণটিকাকরণও শুরু হয়ে গিয়েছে। যাঁরা সামনে থেকে অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, জরুরি ভিত্তিতে তাঁদের টিকা দিচ্ছে সরকার। কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনও বিপুল সংখ্যক ভোটকর্মি টিকার প্রথম ডোজই পাননি! আবার প্রথম বা দ্বিতীয় ডোজ পেলেও শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরির জন্য যে সময় দরকার সেটাও নিশ্চিত করতে ব্যর্থ ভোটের নির্ঘণ্ট। এমনটাই দাবি করছেন তাঁরা।
রাজ্যে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে ভোটকর্মিদের টিকাকরণ। কিন্তু টিকা নিলেও কি রক্ষাকবচ তৈরির জন্য পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছেন ভোটকর্মিরা? বাংলায় ভোটের নির্ঘণ্ট দেখার পরে এই প্রশ্নই তুলছেন কোভিড বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক-গবেষকেরা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ৫ লক্ষ নথিভুক্ত ভোটকর্মির মধ্যে এ পর্যন্ত টিকা পেয়েছেন মাত্র ২ লক্ষ। অর্থাৎ, প্রথম দফার ভোটের আগে ৩ লক্ষ ভোটকর্মিকে টিকাদান করতে হবে। এবং তার জন্য হাতে সময় মাত্র ২৭ দিন। এর মধ্যে ভোটকর্মিদের উপর টিকাকরণ করা এবং তাঁদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি কীভাবে হবে তাই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
চিকিৎসক ও গবেষকেরা জানাচ্ছেন, করোনার প্রথম ডোজের পরে শরীরে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি হয় না। এমনকি দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর কাঙ্খিত অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়। তাই এত সংখ্যক ভোটকর্মিকে টিকা দেওয়া হলেও এই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের শরীরী ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা গড়ে উঠবে তাই নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন আইআইসিবি-সিএসআইআর-এর ইমিউনোলজিস্ট দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, করোনার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিন্তু তৈরি হয় না। শুধু প্রাইমারি ইমিউনোলাইজেশন হয়। তাই দুটো ডোজ না দেওয়া হলে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি হয় না।
আরও পড়ুন: মমতার প্রার্থী তালিকায় কোন কোন তারকা, দেখে নিন গুঞ্জনে এগিয়ে কারা
চিকিৎসক-গবেষকদের এই বক্তব্যই সংশয়ের ভিত গড়ে দিয়েছে। এরই মধ্যে আবার ষাটোর্ধ্ব এবং ৪৫-৫৯ বছরের ব্যক্তিদের টিকা দেওয়ার বিষয়টি রয়েছে। এ রাজ্যের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যা প্রায় দেড়-দু কোটি। সবমিলিয়ে এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে সুষ্ঠু ভাবে টিকা দেওয়াটাই এখন স্বাস্থ্য দফতরের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে প্রথম দফার ভোটগ্রহণের সঙ্গে যুক্ত ভোটকর্মিদের জরুরি ভিত্তিতে টিকা দেওয়া উচিত বলেও মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলছেন, যে তিন লক্ষ ভোটকর্মির টিকাকরণ প্রক্রিয়া বাকি আছে তার জন্য রাজ্যের সমস্ত টিকা বুথকে আরও সক্রিয় করতে হবে। এদিকে টিকাকরণ প্রক্রিয়ায় গতি আনতে শনিবার বিকেলেই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষগুলির সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ে আলোচনা করছেন মুখ্য সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।