টিকিট না পেয়ে ঘাসফুল ছেড়ে পদ্মে লাফ, জেলায় জেলায় ‘বহিরাগত’ প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ অব্যাহত

টিকিট না পেয়ে জেলায় জেলায় বিদায়ী তৃণমূল বিধায়কদের (TMC MLA) বিজেপি (BJP)-তে যোগদান, নির্বাচনের আগে দলবদলের এই হিড়িক কার্যত নজিরবিহীন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল

টিকিট না পেয়ে ঘাসফুল ছেড়ে পদ্মে লাফ, জেলায় জেলায় 'বহিরাগত' প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ অব্যাহত
অলংকরণ: অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Mar 08, 2021 | 5:07 PM

পশ্চিমবঙ্গ: একুশের বিধানসভা ভোটের (West Bengal Assembly Election 2021) কয়েক মাস আগে থেকেই নেতা ও বিধায়কদের দলবদল শুরু হয়েছিল। কিন্তু গত শুক্রবার তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা (TMC Candidate List) প্রকাশের পর যেন জেলায় জেলায় দলবদলের ঢেউ উঠেছে। নির্বাচনের আগেই কোথাও কোথাও কার্যত দিশাহারা অবস্থা তৃণমূলের।

মালদহ: নির্বাচনী প্রচার করতে গিয়ে মালদহবাসীর কাছে আশীর্বাদ চেয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। কিন্তু ভোটের আগেই বড় ভাঙন দেখা দিল মালদহ জেলা তৃণমূলে। হবিবপুর কেন্দ্রের তৃণমূলের ঘোষিত প্রার্থী সরলা মুর্মু এদিন দল ছেড়ে যোগ দিলেন বিজেপিতে। তিনি চেয়েছিলেন ওল্ড মালদহ কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হতে। কিন্তু তা না হওয়ায় সোমবার দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে পদ্ম শিবিরে চলে গেলেন তিনি।

মালদহের প্রভাবশালী নেতা তথা জেলার কোঅর্ডিনেটর অম্লান ভাদুড়িও এদিন বিজেপিতে যোগ দিলেন। ইংরেজবাজার পুরসভার বোর্ড অফ কাউন্সিলের সদস্যও ছিলেন তিনি। পাশাপাশি জানা গিয়েছে, মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মন্ডল সহ জেলা পরিষদের ১৪ জন সদস্য ও কর্মাধ্যক্ষ দল ছাড়তে চলেছেন বলে খবর। তাঁরাও বিজেপিতে যোগদান করতে চলেছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকেন মালদহ জেলা সভানেত্রী মৌসম বেনজির নুর। কিন্তু মালদহ জেলা পরিষদ বিজেপির দখলে চলে গেল।

উত্তর ২৪ পরগনা: প্রার্থী বদলের দাবিতে মিছিল, বিক্ষোভ ,অবরোধ ক্ষুব্ধ তৃণমূল মহিলা কর্মী সমর্থকদের। শুক্রবার বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে শ্যামল রায়ের নাম ঘোষণা করেছে তৃণমূল ৷ তারপর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রার্থী বদলের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন পোস্ট করছে ক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। বনগাঁ পৌর প্রশাসক শঙ্কর আঢ্যকে প্রার্থী হিসেবে দাবি জানিয়েছিল তারা। সোমবার সকালে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বনগাঁর ক্ষুব্ধ মহিলা তৃণমূল কর্মীরা বনগাঁর পৌর প্রশাসক শঙ্কর আঢ্যকে প্রার্থী করার দাবিতে পোস্টার ব্যানার হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করলো। যশোর রোডের রামনগর রোডের মোড়ে টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান মহিলারা।

হাওড়া: ভোটের আগে কার্যত দললবদলের হিড়িরক হাওড়াতে। এদিন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গেলেন প্রবীণ বিধায়ক জটু লাহিড়ি। পুরসভার বিদায়ী মেয়র পরিষদ সদস্য বিভাস হাজরাও যোগ দিলেন বিজেপিতে। তার আগে অবশ্য মন্ত্রী তথা ডোমজুড়ের বিধায়কের দদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো তৃণমূল নেতারা।

দক্ষিণ দিনাজপুর: এবারের ভোটে টিকিট পাননি রাজ্যের মন্ত্রী তথা তপনের বিদায়ী বিধায়ক বাচ্চু হাঁসদা। সেই বাচ্চু ও হরিরামপুরের বহিস্কৃত তৃণমূল নেতা শুভাশিস পাল ওরফে সোনা পাল আজ বিজেপিতে যোগদান করতে পারেন বলে খবর।

শিলিগুড়ি: দলের অন্দরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ তুঙ্গে, কিন্তু থোড়াই কেয়ার শিলিগুড়ির তৃণমূল প্রার্থী ওমপ্রকাশ মিশ্রর। এদিকে প্রার্থী হতে না পেরে দল ছেড়েছেন নান্টু পাল। নির্দল লড়বেন বলে ঘোষণাও করেছেন। নাম না করে পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব ও ক্রিড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাকের বিরুদ্ধে সুর চড়ান তিনি। তাঁর কটাক্ষ, শিলিগুড়ির খেলায়াড় থাকতে বাইরের প্লেয়ার এনে খেলাতে চাইছেন এরা। আর কেউ নেতা হয়ে উঠুক তা চান না। তাই নেতা তৈরির সাপ্লাই লাইন কাটতেই আমার নাম প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দিতে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র হয়েছে। এদিকে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে আসা শিলিগুড়ির প্রার্থী ওমপ্রকাশ, আড্ডা দিলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। জানালেন, শুধু নিজের কেন্দ্রেই নয়, প্রচারে যাবেন আশেপাশের কেন্দ্রেও। ওমপ্রকাশ জানান, দলের পুরানো নেতা-কর্মিরা ভরসা। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে দেখা করব। কথা বলব।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা: তৃণমূলে (TMC) টিকিট না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। আজ বিজেপিতে (Bengal BJP) যোগ দিয়ে দিলীপ ঘোষকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন মমতার এক সময়ের ছায়াসঙ্গী সোনালি গুহ (Sonali Guha)। জানালেন, “আমি তো জোড়া ফুল ছাড়িনি। জোড়া ফুলই আমার থেকে সরে গিয়েছে। আমি তো একজন রাজনৈতিক কর্মী। আমি যদি ঘরে বসে যাই। তাহলে আমি স্থবির হয়ে যাব।”

আরও পড়ুন: অনুপ্রেরণা মোদী: বিজেপিতে তনুশ্রী, সঙ্গে সোনালি, জটু, মাস্টারমশাই

উত্তর ২৪ পরগনা: তৃণমূলের (Trinamool Congress) প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হতেই জেলায় জেলায় ‘বিদ্রোহ’। এবার সেই ‘বিরোধিতা’র আঁচ উত্তর ২৪ পরগনাতেও। সেখানেও ভাঙনের সম্ভাবনা। বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। একইসঙ্গে তৃণমূল জেলা পরিষদেও ভাঙনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিজেপির পথে জেলা পরিষদের দুই সদস্য।