কাবুল : একের পর এক আতঙ্ক গ্রাস করছে আফগানিস্তানকে। প্রথমে তালিবানের আতঙ্ক। তারপর আইসিস খোরাসানের নৃশংসতার আতঙ্ক। আর এখন তার সঙ্গে আবার যোগ হয়েছে খিদের জ্বালা। খাদ্য সঙ্কটে ভুগছেন আফগানিস্তানের একটি বড় অংশের মানুষ। পূর্ববর্তী গণতান্ত্রিক সরকারের এক জনপ্রতিনিধি হাজি মহম্মদ মোহাকেক জানিয়েছেন, পশ্চিম কাবুলে এখনও পর্যন্ত খিদের জ্বালায় প্রাণ হারিয়েছে আট জন শিশু।
পশ্চিম কাবুলে মূলত সংখ্যালঘু হাজারা জনগোষ্ঠীর বাস। আর যে শিশুরা মারা গিয়েছে, তাদের বেশিরভাগই ওই হাজারা জনগোষ্ঠীর বলে জানিয়েছেন মোহাকেক। রাশিয়ান সংবাদ সংস্থা স্পুটনিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোহাকেক তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে ওই আট শিশুর মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন। লিখেছেন, দারিদ্র ও খিদের জ্বালায় প্রাণ হারিয়েছে ওই আট শিশু।
তিনি আরও জানিয়েছেন, বর্তমান তালিবান সরকার আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ন্যূনতম মান নিশ্চিত করতে ব্যর্থ। আন্তর্জাতিক মহল যাতে হাজারা গোষ্ঠী এবং আফগানিস্তানের শিয়া মুসলিমদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেছেন তিনি।
আফগানিস্তানের আর্থিক সঙ্কটের কারণে বহু বছর ধরেই প্রতিবেশী দেশগুলি অর্থ সাহায্য করে এসেছে। মোট ব্যবহৃত বিদ্যুতেরও ৭৮ শতাংশেরই জোগান দেয় প্রতিবেশী দেশগুলি। বাকি অংশের টাকা মেটাত আফগানিস্তান সরকার। কিন্তু ১৫ অগস্ট ক্ষমতা দখলের পর থেকেই বিদ্যুতের বকেয়া অর্থ মেটাচ্ছে না তালিবান সরকার।
ক্ষমতা দখল করার পরই তালিবান ভেবেছিল, সরকার চালানো খুব একটা কঠিন কাজ হবে না। কিন্তু সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতিও যে বদলে গিয়েছে, তা বুঝতে চায়নি তালিবানরা। দেশে শান্তি ফেরাতেই যেখানে হিমশিম খাচ্ছে নতুন সরকার, সেখানে বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে অর্থসঙ্কট। ক্ষমতা দখলের পর থেকেই একদিকে যেমন বিদেশ থেকে অর্থসাহায্য আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তেমনই আবার বিদেশে আফগানিস্তান সরকারের যত অ্যাকাউন্ট ছিল, তাও আটকে রাখা হয়েছে। ফলে প্রবল অর্থকষ্টের মুখে পড়েছে তালিবান সরকার।
যেখানে খাবারই জুটছে না ঠিকভাবে, সেখানে বিদ্যুতের বিল মেটানো অনেক দূরের কথা। তালিবানের ক্ষমতা দখলের আগে আফগানিস্তান সরকার বিদ্য়ুতের খরচ বাবদ প্রায় ২ থেকে ২.৫ কোটি ডলার প্রতিবেশী দেশ উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও ইরানকে দিত। কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তরের পর সেই খরচ বহনেরই দায় এসে পড়েছে তালিবানের ঘাড়ে। এ দিকে, ঘানি সরকারের মতো অর্থ সাহায্য বা আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকাও তুলতে পারছে না তারা। সেই বিদ্যুতের বিলের বোঝা বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এই টাকা না মেটালে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিবেশী দেশগুলি।