পালানোর সময় ছিল না, হুড়মুড়িয়ে জল ঢুকছিল বেসমেন্টে! হড়পা বানে মৃত্যু কমপক্ষে ৪৪ জনের
গতকাল লুইসিয়ানার ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত অঞ্চল পরিদর্শনে যান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে বলেন, " আমরা সবাই এই পরিস্থিতিতে রয়েছি। দেশের তরফে সর্বসম্মতভাবে সাহায্য করা হবে। "
নিউইয়র্ক: রোদ ঝলমলে আকাশেই শুরু হয়েছিল বৃহস্পতিবারের দিনটা, বেলা গড়াতেই বদলে গিয়েছিল সম্পূর্ণ চিত্রটাই। একটানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হতে শুরু করে গোটা শহর। বৃষ্টির দাপট ও হড়পা বানের আশঙ্কায় বুধবার রাতেই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। সত্য়িই হারিকেন ইদার দাপটে নিউইয়র্কে মৃত্য়ু হয়েছে কমপক্ষে ৪৪ জনের, এমনটাই স্থানীয় সূত্রে খবর।
রবিবার লুইসিয়ানা উপকূলে আছড়ে পড়া হারিকেন ইদায় নিউইয়র্কের বিশেষ ক্ষয়ক্ষতি হবে না বলেই মনে করা হলেও ধীরে ধীরে ঘূর্ণিঝড় আমেরিকার উত্তর পূর্ব অংশে প্রবেশ করতেই সেই ভুল ধারণা ভেঙে যায়। ভারী বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন হয়ে পড়ে গোটা শহর। একদিকে নিউ ইর্য়কের সাবওয়েতে হুড়মুড়িয়ে জল ঢুকছে, অন্যদিকে নিউওয়ার্ক বিমানবন্দর চত্বরও ভাসছে জলে। অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে বিমানবন্দরের কর্মীদের আশ্রয় নিতে হয়েছে এস্কেলটরে। অধিকাংশ জায়গাতেই গাড়িগুলি কার্যত সম্পূর্ণভাবেই জলের তলায় চলে গিয়েছে।
ইতিমধ্যেই নিউইয়র্কের বাড়িগুলিতে নীচের তলায় থাকা ঘরগুলি কোমর জলে ডুবে গিয়েছে। বৃষ্টি বা বন্যা আরও বাড়লে কী হবে, তা কল্পনাও করতে পারছে না নিউ ইর্য়কবাসী। প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে তৈরি পরিস্থিতির একাধিক ভিডিয়োও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই দৃশ্য দেখে শিউরে উঠছেন সকলে।
This is Bushwick in Brooklyn pic.twitter.com/2XZia2mp9H
— Dr. Lucky Tran (@luckytran) September 2, 2021
বৃহস্পতিবারই নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল জরুরি অবস্থার ঘোষণা করেন। মেয়র বিল ডে লাগার্ডিয়া বলেন, “ঐতিহাসিক আবহাওয়া দুর্যোগ দেখছি আমরা। রেকর্ড ভাঙা বৃষ্টি হচ্ছে, বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তাগুলির অবস্থা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।”
খারাপ আবহাওয়া ও বিমানবন্দরগুলি জলমগ্ন হয়ে পড়ায় লাগার্ডিয়া, জেএফকে ও নেওয়ার্ক বিমানবন্দরের শতাধিক উড়ান বাতিল করে দেওয়া হয়। ইদার দাপটে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিউইয়র্কের ব্রুকলিন ও কুইন্স অঞ্চল। ম্যানহ্যাটন, ব্রনক্স ও কুইন্সে যাতায়াত করার সমস্ত পথও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পার পায়নি নিউ জার্সিও। সেখানেও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
গতকাল লুইসিয়ানার ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত অঞ্চল পরিদর্শনে যান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে বলেন, ” আমরা সবাই এই পরিস্থিতিতে রয়েছি। দেশের তরফে সর্বসম্মতভাবে সাহায্য করা হবে।”
New York not ready for #climatechange impacts. We all have to get ready AND urgently reduce emissions to avoid the worst. No more delays https://t.co/ORsuTmf934
— Christiana Figueres (@CFigueres) September 2, 2021
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, হারিকেন ইদায় নিউ জার্সিতে কমপক্ষে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই হড়পা বানে গাড়ির মধ্যে আটকে পড়েছিলেন, সেখানেই জলে ডুবে তাদের মৃত্য়ু হয়েছে। কনেটিকাটেও এক প্রশাসনিক আধিকারিকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
অন্যদিকে, নিউইয়র্কেও কমপক্ষে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ১১জনই একটি বাড়ির বেসমেন্টে আটকে পড়েছিলেন। প্রবল গতিতে জল ঢোকায় তারা বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি। ওয়েস্টচেস্টারে তিনজনের ও মন্টগোমারি কাউন্টিতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
Wow. The Brooklyn Queens Expressway is completely underwater.pic.twitter.com/PnGD52Ptx3
— Dr. Lucky Tran (@luckytran) September 2, 2021
গতমাসেই হেনরি ঝড়ের সময় যে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছিল, তা গতকালই সেন্ট্রাল পার্ক অঞ্চলে একঘণ্টায় হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে যে অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে নিউ ইর্য়ক শহর-সহ পার্শ্ববর্তী এলাকায়। অভাবনীয় পরিস্থিতি এবং বন্যায় জেরে বিপর্যয়ের অবস্থা তৈরি হতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে। আরও পড়ুন: একা পারছে না তালিবান, পঞ্জশীর দখলে এ বার হাতিয়ার তুলে নিল আল কায়েদাও!