Bangladesh Fire: মা মরা মেয়ে, বড় করেছিলেন বোনকে! বিরিয়ানি খেতে গিয়ে মর্মান্তিক পরিণতি ডিআইজি কন্যার

Bangladesh Fire: চাকুরি সূত্রে তিনি দীর্ঘদিন লামিসাদের প্রতিবেশী ছিলেন। প্রায় পরিবারই হয়ে উঠেছিলেন। মা-হারা লামিসা ও তাঁর বোন ছিলেন সুদীপের নিজের মেয়ের মতই। এমন বেদনাদায়ক ঘটনায় সুদীপ নিজেও মর্মাহত। নিজের ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, "ছোট বেলায় মা হারা পরিবারে লামিশা-রা ছিল দুই বোন। হঠাৎ আগুনে আবারও বিধ্বস্ত হল পরিবারটি।"

Bangladesh Fire: মা মরা মেয়ে, বড় করেছিলেন বোনকে! বিরিয়ানি খেতে গিয়ে মর্মান্তিক পরিণতি ডিআইজি কন্যার
লামিশা ইসলাম।Image Credit source: TV9 বাংলা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 01, 2024 | 5:32 PM

ঢাকা: ছোট ছোট দুটি মেয়েকে রেখে ২০১৮ সালে অসুস্থতাজনিত কারণে মারা গিয়েছিলেন মা। নিজের অল্প বয়স হলেও ছয় বছর ধরে তাঁর ছোট বোন আর বাবাকে আগলে রেখেছিলেন লামিশা। দুই মেয়ের কথা ভেবে আর বিয়ে করেননি বাবা নাসিরুল ইসলাম-ও। পেশায় তিনি পুলিশের ডিআইজি। স্কুল-কলেজ পেরিয়ে লামিশা ভর্তি হন বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে বা বুয়েট। কিন্তু পড়াশোনা আর শেষ হল না। মেধাবী লামিশার জীবন থেমে গেল ঢাকার বেইলি রোডের ভয়াবহ  আগুনে।

বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারির রাতে আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। সেখানে দাঁড়িয়েই তিনি বলেন, “আমাদের একজন সহকর্মীর মেয়ে মারা গিয়েছেন অগ্নিকাণ্ডে”। পরে জানা যায়, সেই মেয়েটিই নিহত লামিশা ইসলাম।

মর্মান্তিক এই ঘটনা নিয়ে আবেগঘন পোস্ট করেছেন বাংলাদেশের বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী। চাকুরি সূত্রে তিনি দীর্ঘদিন লামিসাদের প্রতিবেশী ছিলেন। প্রায় পরিবারই হয়ে উঠেছিলেন। মা-হারা লামিসা ও তাঁর বোন ছিলেন সুদীপের নিজের মেয়ের মতই। এমন বেদনাদায়ক ঘটনায় সুদীপ নিজেও মর্মাহত। নিজের ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, “ছোট বেলায় মা হারা পরিবারে লামিশা-রা ছিল দুই বোন। হঠাৎ আগুনে আবারও বিধ্বস্ত হল পরিবারটি।”

তিনি পোস্টে লিখেছেন, “জীবন এত ছোট কেনো, এ ভুবনে? মো. নাসিরুল ইসলাম  অতিরিক্ত ডিআইজি (রিক্রুটমেন্ট এন্ড ক্যারিয়ার প্ল্যানিং-১) হিসেবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত। পুলিশ সার্ভিসে যোগদানের পর থেকেই নাসির স্যারকে একজন পেশাদার, নিবেদিত, দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে দেখে এসেছি। বাংলাদেশ পুলিশে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা, সততায় ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ পদ্ধতির অন্যতম রূপকার তিনি। ২০১৮ সালে হঠাৎ স্যারের সহধর্মিণী শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। স্যারের দু’জন কন্যা। তাঁরা তখন বয়সে অনেক ছোট ছিল। মেয়েদের দিকে তাকিয়ে স্যার আর বিয়ে করেননি। স্যারের দুই কন্যাই স্বাবলম্বী, আত্মপ্রত্যয়ী, মেধাবী। স্যারের স্নেহমমতায় বড় হয়ে উঠেছে তাঁরা।”

তিনি আরও লেখেন, “পুলিশ কমপ্লেক্সের শিমুল ভবনের চারতলায় আমাদের বাড়ি ছিল আর তিনতলায় স্যারের বাড়ি। মাঝে মধ্যেই লিফটে স্যার এবং তাঁর দুই মেয়ের সঙ্গে দেখা হত। একদিন হঠাৎ জানতে পারি স্যারের বড় মেয়ে লামিশা ইসলাম বুয়েটে ভর্তি হয়েছে। শুনে খুবই আনন্দিত হই। মাতৃহীন সন্তানেরা পিতার স্নেহে গর্বিত সন্তান হিসেবে সাফল্যের মুকুট ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ লাইন্স-এ ব্রিফিং শেষ করে জরুরি প্রয়োজনে শিমুল ভবনে যাই। লিফট দিয়ে ওঠার সময় লামিশার সঙ্গে দেখা হয়। তার বুয়েটে ভর্তি হওয়া নিয়ে গর্ব করি। তখনও ঘুণাক্ষরে বুঝতে পারিনি মৃত্যু তাঁকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।”

গতকালের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি লেখেন, “২৯ ফেব্রুয়ারি পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান চলছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স-এ। হঠাৎ শুনতে পাই, বেইলি রোডে বহুতল ভবনের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে এবং নাসির স্যারের কন্যা আটকে পড়েছে। সম্ভবত সে ছাদে আশ্রয় নিয়েছিল। তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছে শুনে স্বস্তিবোধ করি। পরে টিভি চ্যানেলে আইজিপি স্যারের মিডিয়া ব্রিফিং থেকে জানতে পারি যে আমাদের একজন সহকর্মীর কন্যা ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মারা গিয়েছেন। তখনও নিশ্চিত ছিলাম না ওর পরিচয় নিয়ে।”