
ঢাকা: কোনও মজবুত প্রমাণ নেই। শুধু সন্দেহের বশেই পিটিয়ে, গাছে বেঁধে পুড়িয়ে মারা হল দিপু চন্দ্র দাসকে? বাংলাদেশে হিন্দু যুবকের উপরে যে পাশবিক অত্যাচার করে হত্যা করেছে জনতা এবং তাতে যে পৌশাচিক উল্লাস দেখিয়েছে, তা বিশ্ব দেখেছে। এবার বাংলাদেশের বাহিনী, র্যাব-ই দিপু দাসকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আনল। জানাল, ময়মনসিংহের ভালুকার বাসিন্দা দিপু চন্দ্র দাসকে (২৭) চাকরি ছাড়তে বাধ্য করার পর উত্তেজিত জনতার কাছে তুলে দেন কারখানার ফ্লোর ইনচার্জ! পরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় দেহ।
দিপু দাসের হত্যাকাণ্ডে ইতিমধ্যেই সিসিটিভি ফুটেজ ও বিভিন্ন ভিডিয়ো দেখে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার, ২০ ডিসেম্বর এই কথা সাংবাদিক সম্মেলন করে জানায় র্যাব। গোটা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে র্যাবের এক কর্তা বলেন, “ঘটনার সূত্রপাত হয় বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে। কারখানার ফ্লোর ইনচার্জ দিপুকে চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করে। এরপর তিনি উত্তেজিত জনতার কাছে দিপুকে তুলে দেন। পুলিশের কাছে কেন হস্তান্তর করেনি এবং তাঁর নিরাপত্তা কেন নিশ্চিত করা হয়নি, সে কারণে কারখানার সংশ্লিষ্ট দুই কর্মীকে আমরা গ্রেফতার করেছি।”
আদৌ কি কোনও ধর্মের অবমাননা করেছিলেন দিপু? র্যাবের কর্তারা নিজেরাও জানেন না। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, তারা বলছেন, “ধর্ম অবমাননার বিষয়টি খুবই অস্পষ্ট। তিনি কী বলেছেন, এটি খোঁজার চেষ্টা করলেও কেউ এটি বলতে পারেনি। কারও সঙ্গে আগে থেকে শত্রুতা ছিল কি না, সেটি আমরা তদন্ত করে দেখব। ঘটনার সূত্রপাত কার সঙ্গে হয়েছে, তা শনাক্ত করা যায়নি। আমরা জানতে পেরেছি, কাজ করার সময় ফ্লোরেই বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয় এবং তাঁকে কোনওভাবেই আর কারখানার ভেতরে রাখা যাচ্ছিল না। ভিডিয়ো ফুটেজ দেখে আমরা আসামিদের ধরেছি। কী কারণে ঘটনা ঘটেছে, তা উদ্ঘাটন ও জড়িত সবাইকে ধরতে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।“
র্যাবের হেফাজতে থাকা কারখানার ফ্লোর ইনচার্জ আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে জানিয়েছেন যে কেন হঠাৎ সবার নিশানা হয়ে ওঠেন দিপু। তিনি বলেন, “কোম্পানির বাইরে কোনও চায়ের দোকানে দিপু হজরত মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তি করেছে-এমন খবরে কারখানার ভেতরের শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। শ্রমিকেরা দাবি জানান, তাঁকে কারখানা থেকে বরখাস্ত করতে হবে। ওই সময় কারখানার বাইরেও একদল লোক এসে জড়ো হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কারখানা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আমরা শ্রমিককে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও কারখানার ভেতরে ও বাইরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি ছিল। উত্তেজিত লোকজন দিপুকে নিয়ে গিয়ে এ ঘটনা ঘটায়।”