ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর থেকে বাংলাদেশ জুড়ে চলছে চূড়ান্ত অরাজকতা। আর তার সবথেকে বড় খেসারত দিতে হচ্ছে হিন্দু-সহ বাংলাদেশি সংখ্যালঘুদের। গত কয়েকদিনে আক্রান্ত হয়েছে একের পর এক হিন্দু মন্দির, হামলা হয়েছে হিন্দুদের বাড়িতে। হয়েছে ডাকাতি, লুঠতরাজ। এরই মধ্যে সোমবার (১২ অগস্ট) বড় জয় পেল বাংলাদেশি হিন্দুরা। দীর্ঘদিন ধরেই দুর্গাপুজোয় তিনদিনের ছুটির দাবি জানায় বাংলাদেশি হিন্দুরা। তাদের বড় অংশেরই রাজনৈতিক সমর্থন ছিল শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগের প্রতি। কিন্তু, আওয়ামি লিগের গত ১৫ বছরের শাসনেও যা করতে পারেনি বাংলাদেশি হিন্দুরা, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে তাই আদায় করে দেখাল তারা। এদিন, দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মীরা। তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) হোসেন জানিয়েছেন, দুর্গাপুজোয় তিন দিন সরকারি ছুটির সুপারিশ করা হবে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) হোসেন বলেন, দুর্গাপুজোয় দুই-তিন দিন ছুটি দিতে অসুবিধা কী? এই ছুটি তো শুধু ওনাদের জন্য নয়। ছুটিতে আমরাও উপভোগ করব, সমস্যা তো নেই। ছুটি পেলে আমরা একটু ঘুরে-টুরে আসলাম কক্সবাজার বা এখানে ওখানে। আমি তো ডিসিশন মেকার নই। আমি এই বিষয়ে সচিবকে বলেছি ওনারা যে দাবিগুলো করেছেন সেগুলো নোট করতে। ক্যাবিনেট মিটিং যখন হবে আলোচনা করব।”
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও জানিয়েছেন, হিন্দু, মুসলিম কিংবা খ্রিষ্টান যে ধর্মেরই মানুষ হোন না কেন, সকলকে সুরক্ষা দেওয়াই সরকারের দায়িত্ব। তবে, বাংলাদেশে ধর্মের ভিত্তিতে কোনও হিংসা হয় না বলে দাবি করেন তিনি। এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “মারামারি হয়, কাউকে তাড়িয়ে দিয়ে তার জমি দখলের জন্য। এটা রাজনৈতিক লোকদের দিয়ে করানো হয়। পুকুর, জমি, ভিটে দখল করবে। এটা কিন্তু সংখ্যালঘুদের সমস্যা না।”
অন্যদিকে, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের ঢাকার সভাপতি, ড. প্রভাস চন্দ্র রায় জানিয়েছেন, এদিন নয়া স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে পরিচয় করতে এসেছিলেন তাঁরা। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে তিনি কী ভাবছেন, তা জানতে এসেছিলেন। হিন্দুরা কী চায়, তা জানাতে এসেছিলেন। এম সাখাওয়াত হোসেন তাঁদের সব কথা সহানুভূতির সঙ্গে শুনেছেন বলে জানান ড. প্রভাস চন্দ্র রায় । তিনি আরও জানান, নয়া সরকার সংখ্যালঘু নির্যাতন কীভাবে শূন্যে নামিয়ে আনতে চায়। তার জন্য হিন্দুদের পরামর্শ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব পলাশ কান্তি দে জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনে সংখ্যালঘুদের উপর যে নির্যাতন হয়েছে, তার সবটাই সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানেন। তাঁরা কথা দিয়েছেন, সংখ্যালঘু নির্যাতনের সকল ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে। হিন্দু মহাজোটের পক্ষ থেকে ২০০০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত, ২৪ বছরে বাংলাদেশি সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের উপর একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবিও জানিয়েছে। সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন এবং সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের বিষয়েও কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পলাশ কান্তি দে বলেছেন, “সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন হলেই এ দল বলে ওই দল করেছে, ওই দল বলে সেই দল করেছে। যেহেতু এখন রাজনৈতিক নিরপেক্ষ একটি সরকার রয়েছে, তারাই পারবে বিগত ২৪ বছরে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনে কারা জড়িত ছিল তাদের নাম প্রকাশ করতে। ওনারা বলেছেন চেষ্টা করবেন।” তিনি আরও বলেন, “বিগত ২৪ বছরে কোনও পুজো হিন্দুরা শান্তিপূর্ণভাবে করতে পারেনি। দুর্গাপূজার প্রতিমা ভাঙচুরের মধ্য দিয়েই আমাদের পূজা শুরু করতে হয়। এসব বিষয়ে কথা বলেছি। এবার মন্ত্রণালয় কঠোরভাবে এসবের মনিটরিং করবে। দুর্গাপূজায় ছুটি তিনদিন করা যায় কিনা, সেটা এবার থেকে ওনারা দেখবেন। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক সরকারের আমলেই সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন হয়েছে। আমরা আশা রাখি বর্তমান সরকারের আমলে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন হবে না।”
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)