ঢাকা: ‘আপনি দেশে আসুন। নাগরিকত্ব তো চলে যায়নি। তবে গন্ডগোল পাকাবেন না। এসব করে কোনও লাভ হবে না।’ সোমবার (১২ অগস্ট), সরাসরি শেখ হাসিনাকে হুঁশিয়ারি দিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, হাসিনার দল আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ করার কোনও পরিকল্পনা নতুন সরকরের নেই। হাসিনার পরিবর্তে অন্য কাউকে সামনে রেখে, নতুন করে দল গোছানোর পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামি লিগ নেতৃত্বকে। বাংলাদেশ গঠনে আওয়ামি লিগের বড় অবদান আছে স্বীকার করেও, আওয়ামি লিগ নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, “একটা অনুরোধ করি, এমন কিছু করবেন না যে আপনাদের জীবন বিপন্ন হয়।” বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামি লিগ ও শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ নিয়ে ঠিক কী বললেন তিনি?
পার্টি পুনর্গঠন করুন
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, এখনও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে আওয়ামি লিগের নেতাদের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়নি। তাই, লোক জড়ো করে ঝামেলা পাকানোর বদলে, তাদের উচিত দল পুনর্গঠনে মন দেওয়া। তিনি বলেন, “দলকে পুনর্গঠন করুন, রাজনৈতিক দল যেভাবে থাকে, নির্বাচন এলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, জনগণ ভোট দিলে ভোটে যাবেন। আপনারা দল গুছিয়ে নিন, আপনাদের দলকে তো কেউ নিষিদ্ধ করেনি। যে কোনও দল নিষিদ্ধ করা বাজে সংস্কৃতি।” তিনি আরও জানান, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ লোক মারা গিয়েছিল। সেই ৩০ লক্ষ লোকের আত্মত্যাগ ভুলে আওয়ামি লিগ দেশটাকে এক ব্যক্তির হাতে তুলে দিয়েছিল। দেশের লোক তা তাড়াতাড়ি ভুলবে না। তাই এখন আওয়ামি লিগ নেতাদের পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। যাঁরা জনগণের হাতে ধরা পড়ছে, তাদের রক্ষা করা যাচ্ছে না।
আওয়ামি লিগকে নষ্ট করার অধিকার আওয়ামি লিগেরও নেই
তিনি আরও বলেন, তাঁরা উসকানি দিলে আওয়ামি লিগ বাংলাদেশে আর টিকতে পারত না। কিন্তু, তাঁরা হিংসা চান না। কারণ, প্রত্যেকেই বাংলাদেশের মানুষ। আওয়ামি লিগের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ব্যক্তিগত স্বার্থে আপনারা এত বড় একটা দলকে নষ্ট করবেন না। আওয়ামি লিগ আমাদের গর্ব। একে নষ্ট করার অধিকার আপনাদের নেই। আওয়ামি লিগ একটা বড় রাজনৈতিক দল। এখানে ভাল ভাল নেতা আছেন। এই দল একসময় মধ্যবিত্তর ধর্মনিরপেক্ষ দল ছিল। মুসলিম লিগ ছিল উচ্চবিত্তর। মধ্যবিত্তর দল ছিল আওয়ামি লিগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দেশ স্বাধীন করেছেন। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়। তাঁর নামে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, স্বাধীনতা হয়েছে। সেই দল এভাবে ভেঙে পড়ে যাবে যে নেতা–কর্মীদের লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়াতে হচ্ছে!”
শেখ হাসিনাকে স্বাগত
ক্ষমতাচ্যুত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে স্বাগত জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “আপনি আসবেন, আপনার দেশ। আপনি আসছেন না কেন? নাগরিকত্ব তো যায়নি। ২১ বছর প্রধানমন্ত্রিত্ব করেছেন। আপনি স্বেচ্ছায় চলে গিয়েছেন, কেউ তো যেতে বলেননি। স্বেচ্ছায় আসেন, ভালো থাকবেন, আবার আসবেন। আমরা সবাই আপনাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু গন্ডগোল পাকিয়ে কোনো লাভ হবে না। বরং লোকজন আবার খেপে উঠবে।
প্রতিবিপ্লবে হাজার হাজার লোকের রক্তের প্রয়োজন
আওয়ামি লিগকে প্রতিবিপ্লবের পরিকল্পনা ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “কেউ যদি মনে করেন যে আবার একটা প্রতিবিপ্লব করে ক্ষমতায় আসবেন, তা করতে হলে হাজার হাজার লোকের রক্তের প্রয়োজন। যদি আপনারা সেই দায়িত্ব নিতে চান, তাহলে আমার কিছু করার নেই। কোনো রাজনৈতিক দল নয়, দেশের তরুণ প্রজন্ম এবার বিপ্লব করেছে। তাঁরা তাঁদের জীবন দিয়েছেন, যেটা আপনারা কোনোদিন দিতে পারতেন না। পুলিশের গুলি খাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের কোনো দুঃখ নেই। তাঁরা প্রতিবিপ্লবকারীদের মোকাবিলা করবেন। অনুরোধ করছি, দয়া করে দেশকে স্বাধীন রাখেন।”
৭ দিনের মধ্যে অস্ত্র জমা দিন
তিনি আরও জানিয়েছেন, অসামরিক মানুষদের হাতেও নিষিদ্ধ রাইফেল পাওয়া গিয়েছে। এই রাইফেল পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর হাতে ছিল। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে, সকলকে সাত দিনের মধ্যে অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। জমা না দিলে, অবৈধ অস্ত্র রাখা এবং সরকারি অস্ত্র লুঠের অভিযোগ দায়ের করা হবে। এর জন্য আন্তর্জাতিক আদালতেও যেতে পারে বাংলাদেশের নতুন সরকার। নিজেরা অস্ত্র জমা না দিতে চাইলে, অন্য কোনও ব্যক্তির মাধ্যমেও অস্ত্র জমা দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)