
নয়া দিল্লি: বাংলাদেশে বিচার হচ্ছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina)। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, যা শেখ হাসিনা নিজেই তৈরি করেছিলেন, সেখানেই আজ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ মামলায় শুনানি চলছে। হাসিনার কী সাজা হবে, তার দিকে যখন গোটা বিশ্বের নজর, তখন ভারতের উদ্বেগ একটু হলেও বেশি, কারণ বর্তমানে এ দেশেই রয়েছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।
২০২৪ সালে জুলাই-অগস্ট মাসে অগ্নিগর্ভ হয়েছিল বাংলাদেশ। কোটা সংস্কার বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু। হাসিনার ‘রাজাকার’ মন্তব্য সেই আগুনে যেন ঘি ঢালে। এরপর ছাত্র-গণআন্দোলন হাসিনা সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে উদ্যত হয়। ঢাকা সহ গোটা বাংলাদেশেরই ছাত্র-যুবরা পথে নামে। আন্দোলনকারীদের উপরে গুলি চালানোর ঘটনা বিদ্রোহকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। এই পরিস্থিতিতে প্রবল জনরোষ ও আন্দোলনের মুখে পড়ে গত বছরের ৫ অগস্ট বাংলাদেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা।
ভারতে আশ্রয়-
বাংলাদেশ থেকে শেখ হাসিনা সোজা আসেন ভারতে। সেই থেকে ভারতের কূটনৈতিক আশ্রয়েই রয়েছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ থেকে একাধিকবার হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর দাবি করা হলেও, হাসিনা ফেরেননি। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারতের কাছে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ। ভারত সেই বার্তা পাওয়ার কথা স্বীকারও করে। তবে ভারত সেই চিঠির কোনও জবাব দেয়নি বলেই চলতি বছরের মার্চ মাসে জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূস।
ভারতের তরফে এখনও এই বিষয়ে কোনও সরকারি বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী বলেছেন, “বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ট্রাইবুন্য়াল শেখ হাসিনা তৈরি করেছিলেন মূলত রাজাকারদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করার জন্য। পরবর্তীকালে সেই ট্রাইব্যুনালই যে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে, তা ভাবেননি হাসিনা। আজকের রায়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের সাজা হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। দেশের সর্বত্র মিলিটারিকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়াও বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং বাংলাদেশ পুলিশের প্রাক্তন আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের প্রাক্তন আইজি রাজসাক্ষী হয়েছেন। বোঝাই যাচ্ছে যে হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের সাজা হবে। তবে বর্তমানে ভারতে রয়েছেন শেখ হাসিনা। তাঁকে দেশে আত্মসমর্পণ করে আপিল করতে হবে, যা সম্ভব নয়। দেশে গেলে কী হবে, তা বোঝাই যাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “ভারত সরকারের কাছে এটা গুরুদায়িত্ব। ভারতের উপরে এবার বাংলাদেশ চাপ দেবে যেহেতু আদালত রায় দিয়েছে। ভারতকে এবার একটু ভাবতে হবে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি রয়েছে। বাংলাদেশ সেই চুক্তিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করে, তাই দেখার। এই নিয়ে টানাপোড়েন চলবে। এর মধ্যেই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন রয়েছে। ভারত এখন শেখ হাসিনাকে অন্য় দেশে পাঠিয়ে নিষ্কৃতি পাওয়ার মতো জায়গা নেই।”