ঢাকা: বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতন এবং নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের গঠনের পর থেকেই ওপার বাংলা থেকে লাগাতার হুমকি আসছে। কখনও কলকাতা দখল, কখনও আবার বাংলা, বিহার, ওড়িশা এবং সেভেন সিস্টার্স দখলের কথা। মৌলবাদী নেতাদের এইসব হুঙ্কারে নিরুত্তাপ ইউনূস সরকার। কিন্তু হুমকি যখন ইউনূসের ডান হাত দেন, তখন তা হালকাভাবে নিলে চলে না। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পোস্ট ঘিরেই তুমুল বিতর্ক।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি মাহফুজ আলম। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা তিনি। তাঁর কোনও মন্ত্রক বরাদ্দ নেই, অর্থাৎ তিনি প্রধান উপদেষ্টার অফিস থেকে সমস্ত দফতরেই নজরদারি করেন। আমেরিকাতেও একটি অনুষ্ঠানে মাহফুজ আলমকে বাংলাদেশে জুলাই-অগস্টে হওয়া “পরিকল্পিত বিপ্লবের প্রধান মাথা” বলে পরিচয় করিয়েছিলেন।
সেই মাহফুজ আলম বিজয় দিবসের রাতে ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেন। দুই ঘণ্টা বাদে সেটি ডিলিটও করে দেন বিতর্কের মুখে পড়ে। ততক্ষণে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল মাহফুজের পোস্ট। কী বলেছিলেন তাতে? মাহফুজের দাবি, অখণ্ড বাংলা স্বপ্ন তাদের। ভারত, পাকিস্তান রাজনীতির কারণে বাংলা খণ্ড খণ্ড হয়েছে। তার কথায়, “বিজয় এসেছে, তবে সামগ্রিক নয় ।মুক্তি এখনও বহুত দূরে। হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত জনপদ পুনরুদ্ধার ব্যতিত পোকায় খাওয়া পূর্ব পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশ নিয়ে আমরা মুক্তিকে ছুঁতে পারব না।”
তিনি আরও বলেন, “এ রাষ্ট্রের জন্মদাগ তথা ভারত নির্ভরতা ও ভারতের আধিপত্য মুক্ত রাখতে ৭৫ আর ২৪-র ঘটাতে হয়েছে। দুই ঘটনার ব্যবধান ৫০ বছর। কিন্তু আদতে কিছুই পরিবর্তন হয়নি। নতুন ভূগোল ও বন্দোবস্ত লাগবে। একটি খণ্ডিত ভূমি, একটা জন্মদাগ নেওয়া রাষ্ট্র দিয়ে হয় না।”
সহজ কথায় বলতে গেলে, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, জলপাইগুড়ি, সেভেন সিস্টার্স অর্থাৎ ত্রিপুরা, মণিপুর সহ উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিকে দখল করে অখণ্ড বাংলা তৈরির কথা বলেছেন। মাহফুজ আলমের কথায়, এই ম্যাপ তৈরি না হলে পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন হবে না।
মাহফুজের এই দাবি সরাসরি ভারতের সার্বভৌমত্ব নিয়েই প্রশ্ন তোলে। ভারত সরকারের তরফে এখনও মাহফুজের এই মন্তব্য নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। তবে বাংলাদেশ থেকেই মাহফুজের মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করা হয়।
এ প্রসঙ্গে গণঅধিকারের সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, “একটা নাবালকও জানে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করলে আমাদের কী অবস্থা হবে। অসম, ওড়িশা, বিহার দখলের হুমকি দিয়ে ভারতকে বলার সুযোগ করে দিলেন। কারণ মাহফুজ আলম সরকারের অংশ। তিনি ইউনূসের পর সবথেকে ক্ষমতাবান। তার মানে তিনি প্রধান উপদেষ্টা সহ সব পদে রয়েছেন। সেই পদে বসে এই ধরনের মন্তব্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।”
ভারত-বাংলাদেশের সামরিক ক্ষমতার বাস্তব চিত্রটা তুলে ধরে তিনি বলেন, “ভারতের সঙ্গে গোলাগুলি কি সম্ভব ? ভারতের সঙ্গে তর্ক করতে পারি , প্রতিবাদ করতে পারি। ভারত এত বড় রাষ্ট্র, তাদের সঙ্গে লড়াই সম্ভব নয়। বরং অন্য কোন দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা যায়, তা ভাবা উচিত। বাংলা আমার, ওড়িশা আমার- এই সব বললে ভারত ছাড়বে না । মাহফুজ যা করেছেন, তা অত্যন্ত ক্ষতিকর।”