ঢাকা: হাসিনা বিদায়ের পর একমাস কেটে গিয়েছে। ক্রমশ দাঁতনখ বের করছে ভারত বিরোধী শক্তিগুলি। ক্রমে কোনঠাসা হচ্ছেন মহম্মদ ইউনুস। ক্রমে প্রভাব বাড়ছে ইসলামী কট্টরপন্থীদের। বাংলাদেশকে পুরোপুরি ইসলামি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্র চলছে। ইসলামীদের রবীন্দ্রনাথ পছন্দ নয়। এদিকে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত তাঁরই লেখা। তাই এবার জাতীয় সঙ্গীত বদলের ডাক উঠল ইউনুসের বাংলাদেশে। তবে, মৌলবাদীরা চাইলেই তো হল না। শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর), সারা দেশ জুড়ে মৌসবাদীদের এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানালেন সেই দেশের বামপন্থী সংগঠন উদীচী। আর তাদের এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সামিল হলেন লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি নাগরিক।
একাত্তরে বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয়, তখন পাক হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করেছিল বাংলাদেশের রাজাকার বাহিনী। পাক সেনাকে, স্বাধীনতাকামী মানুষদের ঘরবাড়ি চিনিয়ে দিত তারা। মুক্তিযোদ্ধাদের চিনিয়ে দিত। এই বাহিনীর নেতা গোলাম আজমই পরে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জামাতে ইসলামি নামে এক রাজনৈতিক দলের। স্বাধীন বাংলাদেশে জামাতের প্রধান বা আমির পদেও ছিলেন তিনি। তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আজমি ছিলেন বাংলাদেশের সেনার এক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। দীর্ঘদিন তাকে গুম করে আটকে রেখেছিল হাসিনা সরকার। হাসিনার পতনের পর, ইউনুস সরকার মুক্তি দিয়েছে তাঁকে। গত মঙ্গলবার, সেই আব্দুল্লাহিল আমান আজমিই সাংবাদিক সম্মেলন করে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বদলের দাবি জানান।
তাঁর মতে, ‘আমার সোনার বাংলা…’ গানটি নাকি বাংলাদেশের স্বাধীনতার অস্তিত্বের পরিপন্থী। তাই, বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বদলানো উচিত। শুধু রবি ঠাকুরের লেখা গান নিয়েই আপত্তি নয়, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের যে সংবিধান তৈরি হয়েছিল, সেই সংবিধানও বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। সংবিধানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এরই প্রতিবাদে, শুক্রবার বাংলাদেশ জুড়ে একই সময়ে সমবেতভাবে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার ডাক দিয়েছিল বাংলাদেশের বামপন্থী লেখক-শিল্পীদের সংগঠন উদীচী। এদিন সকালে, ঢাকার প্রেস ক্লাবের বিপরীতে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা তুলে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন সংগঠনের শিল্পীরা। সঙ্গে ছিল দেশাত্মবোধক গানও। উদীচীর এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সামিল হয় বাংলাদেশের আরও বেশ কয়েকটি সংগঠন। দেশের সব জেলা শাখাতেও উদীচীর শিল্পীরা জাতীয় সঙ্গীতে কণ্ঠ মেলান।
উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি, অধ্যাপক বদিউর রহমান বলেন, “একাত্তরের পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র হচ্ছে জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের প্রস্তাব। এই প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য করতে পারলে পরবর্তী সময়ে এই গোষ্ঠী আরও অন্যান্য সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে। যা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি।” তিনি আরও বলেন, “আমরা দায়বদ্ধ মানুষের প্রতি। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অর্জন। মুক্তিযুদ্ধের উপর যখনই কোনও আঘাত আসবে, আমরা তার প্রতিবাদ করব। আমাদের জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকা কারও দান নয়। লাখো শহিদের রক্তে আমরা তা পেয়েছি। এই অর্জনকে কোনোভাবেই কলঙ্কিত করা যাবে না। যখনই কেউ মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীতকে আঘাত করতে চাইবে, তখনই প্রতিবাদ করব।”
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)