
ঢাকা: সামরিক দখলে বাংলাদেশ। সোমবার (৫ জুলাই), প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। সঙ্গে আছেন তাঁর বোন শেখ রেহানা। হাসিনা দেশ ছাড়ার পর, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বৈঠক করে, বাংলাদেশি সেনাপ্রধান জানান, সেনার তরফে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। সূত্রের খবর দিল্লি থেকে তিনি লন্ডনে পাড়ি দিতে পারেন। কিন্তু, কোন পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে হল হাসিনাকে? এর সূত্রপাত ঘটেছিল ১ জুলাই, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। পরের একমাসে কী কী ঘটল? আসুন জেনে নেওয়া যাক এক নজরে –
৫ জুন: আদালতের রায়
৫ জুন বাংলাদেশ হাইকোর্টের রায়ে, বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা ফিরেছিল। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার সব রকম কোটা বাতিল করে দিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন কয়েকটি বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। তার ভিত্তিতেই কোটা বাতিলের সেই সরকারি সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেয় বাংলাদেশি হাইকোর্ট।
১ জুলাই: অবরোধ শুরু
আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে, জুলাইয়ের শুরু থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাস্তা ও রেললাইন অবরোধ করে। তারা দাবি করে, সরকারি চাকরির কোটা পদ্ধতির সংস্কার করতে হবে। তাদের অভিযোগ ছিল, কোটা পদ্ধতি ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগের অনুগামীদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট।
১৬ জুলাই: তীব্র হিংসা
চিন থেকে ফিরে কোটা বিরোধী আন্দোলন নিয়ে শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতিরা চাকরি পাবে না তো কি, রাজাকারদের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে?” এতেই ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করে। ঢাকায় বিক্ষোভকারী এবং সরকারপন্থী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়। ওইদিনই ছয়জনের মৃত্যু হয়েছিল। জবাবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ করে দিয়েছিল হাসিনার সরকার।
১৮ জুলাই: টিভি কার্যালয়ে আগুন, কারফিউ, সেনা মোতায়েন
এরপর থেকে প্রতিদিনই বাড়তে থাকে মৃতর সংখ্যা। ছাত্রছাত্রীদের শান্তি বজায় রাখার আবেদন করেন শেখ হাসিনা। কিন্তু, আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করে এবং প্রথমবার হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবি ওঠে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের সদর দফতর-সহ বিভিন্ন সরকারী ভবন, মেট্রো স্টেশনে ভাঙচুর করা হয়, আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি সামাল দিতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারফিউ জারি করা হয় এবং সেনা মোতায়েন করা হয়।
২১ জুলাই: সুপ্রিম রায়ে কোটা বাতিল
বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা ফিরে আসার বিরুদ্ধে রায় দেয়। রায় মোটামুটি আন্দোলনকারীদের সন্তুষ্ট করলেও, ততদিনে ২০০-র বেশি মানুষের প্রাণ চলে গিয়েছে। আরও শয়ে শয়ে মানুষ আহত হয়েছেন। যেভাবে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী, সেনা ও আওয়ামি লিগ ও তার বিভিন্ন শাখার সদস্যরা সশস্ত্র অবস্থায় আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের উপর হামলা চালিয়েছে, তাতে আদালতের রায়ে সংরক্ষণ বাতিল হলেও সরকারের বিরুদ্ধে আরও ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হয়।
৩ অগস্ট: ফের আন্দোলন
ফের উত্তপ্ত হয় বাংলাদেশ। এবার আন্দোলনকারীরা এক দফা দাবি তোলে – হাসিনা সরকারের পদত্যাগ চাই। আর এবার শুধু ছাত্রছাত্রীরা নয়, সাধারণ মানুষও অংশ নেয় এই আন্দোলনে। একই সঙ্গে ডাক দেওয়া হয় অসহযোগ আন্দোলনের।য
৪ অগস্ট: বিক্ষোভকারীদের পাশে সেনা
৪ অগস্ট থেকে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। আর এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে জেলা-উপজেলায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয় পুলিশ, আওয়ামি লিগ সমর্থকদের। সারা দিনে, ১৪ জন পুলিশ কর্মী-সহ মোট ৯৮ জনের মৃত্যু হয়। হত্যার নিন্দা করে সেনা প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান প্রাক্তন সেনাপ্রধান, জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া। বর্তমান সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান জানান, ‘সশস্ত্র বাহিনী জনগণের পাশে আছে’।
৫ অগস্ট: হাসিনার পতন
এদিন, ‘চূড়ান্ত প্রতিবাদ’ হিসেবে ঢাকায় বিশাল মিছিল করার আহ্বান জানান অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। তাদের ডাকে ঢাকার রাস্তায় দেখা যায় লক্ষ লক্ষ মানুষকে। তাঁরা গণভবনের দিকে মিছিল করে এগোতে থাকেন। এরমধ্যে সেনা প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। তারপর, প্রধানমন্ত্রীর পদ থকে ইস্তফা দিয়ে ঢাকা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে আসেন হাসিনা। এরপর, বিএনপি, জাতীয় পার্টি-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে, এক অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সেনা।