AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Bangladesh: ‘ওরে ডাক্তার বানাইতে যে কী কষ্ট করেছি, আর ও হইল জঙ্গি’, থামছে না বাবার কান্না

Bangladesh Moulvibazar: বাংলাদেশ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিটের মতে, তারা ‘ইমাম মাহমুদ কাফেলা’ নামে এক নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। এই গ্রেফতারির খবরে কেঁপে গিয়েছে সোহেলের পরিবার। তাঁর বাবা বলেছেন, "ওরে ডাক্তার বানাইতে আমি যে কী কষ্ট করেছি। আর ও হইল জঙ্গি।"

Bangladesh: 'ওরে ডাক্তার বানাইতে যে কী কষ্ট করেছি, আর ও হইল জঙ্গি', থামছে না বাবার কান্না
বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া এলাকায় খোঁজ মিলল নয়া জঙ্গি সংগঠনের Image Credit: Twitter
| Edited By: | Updated on: Aug 13, 2023 | 8:09 PM
Share

ঢাকা: কৃষিজীবী পরিবার থেকে ডাক্তার হয়েছিল সোহেল তানজিম। গর্বে বুক ভরে গিয়েছিল বাবার। গ্রামের লোকে বলেছিল, গোবরে পদ্মফুল ফুটেছে। শনিবার সকালে, বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া এলাকার এক নির্জন পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত, এক জঙ্গি আস্তানা থেকে খোঁজ পাওয়া গিয়েছে সোহেল তানজিমের। সোহেলকে ধরতে না পারলেও, ওই জঙ্গি আস্তানা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর স্ত্রী-সহ মোট ১০ জনকে। বাংলাদেশ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিটের মতে, তারা ‘ইমাম মাহমুদ কাফেলা’ নামে এক নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। এই গ্রেফতারির খবরে কেঁপে গিয়েছে সোহেলের পরিবার। তাঁর বাবা বলেছেন, “ওরে ডাক্তার বানাইতে আমি যে কী কষ্ট করেছি। আর ও হইল জঙ্গি।”

ছোটবেলা থেকেই ভাল ছাত্র হিসেবে নাম ছিল সোহেলের। তার বাবা হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাস করেছিল সে। তবে, ২০২২ সালে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল হেলাল উদ্দিনের। জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িত থাকার সন্দেহে তাকে গ্রেফতার করেছিল বাংলাদেশ পুলিশ। পরে, জামিনে বেরিয়ে খাজা ইউনুস আলি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকরি করা শুরু করেছিল সোহেল। ছেলের গতিবিধির উপর কড়া নজর রাখতে শুরু করেছিলেন হেলাল উদ্দিন। খারাপ পথে গেলে নানা ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন। আশা করেছিলেন ছেলে শুধরে যাবে। আড়াই মাস আগে মাইশা ইসলাম নামে ২০ বছরের এক তরুণীকে বিয়ে করেছিলেন সোহেল তানজিম। ফেসবুকে আলাপ হয়েছিল তাদের। পরিবারের এই বিয়েতে মত ছিল না। বিয়ের পর থেকে সোহেল এবং মাইশা আলাদা থাকতেন।

জুলাই মাসের শেষে হঠাৎ একদিন হাসপাতাল থেকে ফোন করে জানানো হয়েছিল, চার দিন ধরে হাসপাতালে আসছেন না সোহেল। তাঁর বন্ধু ও সহকর্মীরা তাঁকে অনেকবার ফোন করেছেন, কিন্তু কোনও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁর স্ত্রী মাইশার ফোনও বন্ধ। দু-তিন দিন ধরে খোঁজাখুঁজি করে সোহেলকে না পেয়ে, ৩১ জুলাই পুলিশে খবর দিয়েছিলেন হেলালউদ্দিন। সোহেলরা যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন, তিনি সেখানেও গিয়েছিলেন। প্রতিবেশিরা জানান, ২৬ জুলাই সোহেল ও মাইশাকে জামাকাপড়, বাসনপত্র, বিছানা-বালিশ নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেছেন তাঁরা।

এই ঘটনার তদন্তে নেমে, পুলিশ খোঁজ পায় বাংলাদেশে এক নতুন জঙ্গি সংগঠন তৈরি হয়েছে, ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’। ৫ অগস্ট মধ্যরাতে ঢাকার মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে মহম্মদ ফরহাদ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, কুলাউড়ায় একটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকার জঙ্গি শিবিরের খবর পাওয়া যায়। সেই সূত্র ধরে বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস বিরোধী শাখা, সহকারী কমিশনার শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে এক সপ্তাহ ধরে কুলাউড়া এলাকায় অনুসন্ধান চালায়। এরপর গতকাল শুরু করা হয় ‘অপারেশন হিলসাইড’। এই অভিযানে ওই জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে চারজন পুরুষ ও ছয়জন মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের একজন মাইশা। সোহেল তানজিমও ওখানে ছিলেন, কিন্তু পুলিশ আসার খবর পেয়েই পালিয়ে যায়। এই অভিযানে ৩ কেজি বিস্ফোরক, ৫০টি ডেটোনেটর, ৩ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা এবং জঙ্গি প্রশিক্ষণের বিভিন্ন সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়।

রবিবার (১৩ অগস্ট) বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মৃত্যুর পর পুরস্কার মিলবে বলে লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করত ইমাম মাহমুদ। সে শিখিয়েছিল, জিহাদের প্রথম ধাপ হলো গৃহ ত্যাগ। জিহাদের প্রস্তুতি নিতেই ইমাম মাহমুদের নেতৃত্বে ওই স্থানে জড়ো হয়েছিল তারা। কুলাউড়ার টাট্রিউলি গ্রামে ৫০ শতক জমি কিনে ওই জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির তৈরি করা হয়েছিল। হেলাল উদ্দিনের আক্ষেপ, “অনেক আশা ছিল ছেলে অনেক বড় চিকিত্সক হবে। তাকে ঘটা করে বিয়ে করাব। হেলিকপ্টারে করে ছেলে–বউকে বাড়িতে নিয়ে আসব। আমার সে আশা পূরণ হয়নি। ছেলে আমার মানসম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে।”