জেনেভা: দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউর তোড় কিছুটা কমেছে। তার মধ্যেই চোখ রাঙাচ্ছে তৃতীয় ঢেউ। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন দেশে দ্বিতীয় ঢেউ এনেছিল ডবল মিউট্যান্ট স্ট্রেন। অর্থাৎ বি.১.৬১৭ যাকে পরবর্তীকালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নাম দেয় ডেল্টা। এ বার সেই ডেল্টা স্ট্রেনকেই বিশ্বের সবচেয়ে সংক্রামক স্ট্রেনের তকমা দিল হু (WHO)।
সাংবাদিক বৈঠকে হু-র ডিরেক্টর জেনারেল টেডরস আধানম জানান, সারা বিশ্বে ছড়াচ্ছে এই ডেল্টা স্ট্রেন। এর আগেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন জানিয়েছিলেন, বিশ্বের সবচেয়ে দাপুটে স্ট্রেন হওয়ার পথে ডেল্টা। ইতিমধ্যে ৭৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ডেল্টা। তাই দ্রুত গরিব দেশগুলির হাতে টিকা তুলে দেওয়ার আর্জি জানান টেডরস আধানম। টিকা বৈষম্যের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, “অনেক দেশের ধারণা আফ্রিকার দেশগুলি টিকার ব্যবহার করতে পারবে না। এই মনোভাবে পরিবর্তন আসা উচিত।” তাঁর মতে, উন্নত দেশগুলির এই কাজ বৈষম্যকে বারবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আপদকালীন বিশেষজ্ঞ মাইক রায়ান উন্নত দেশগুলির মনোভাবে প্রশ্ন তুলে বলেন, “আমরা ভ্যাকসিন তুলে দিচ্ছি না। তারা ভালভাবে ব্যবহার করতে পারবে কি না সেই সন্দেহে, অতিমারি আবহে এটা কি মানা যায়?” গরিব দেশগুলি যাতে করোনা টিকা পায়, তাই উন্নত দেশগুলি কোভ্যাক্স ও গাভি তৈরি করেছিল। গত ফেব্রুয়ারি থেকে এর মাধ্যমে একাধিক কম উন্নত দেশে ৯ কোটি ভ্যাকসিনের ডোজ়ও পৌঁছেছিল। কিন্তু ভারত করোনা টিকা রফতানি নিষিদ্ধ করার পর থেকেই গাভি বা কোভ্যাক্সে জোগান নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সিনিয়র উপদেষ্টা ব্রুস অলওয়ার্ড জানান, এই মাসে অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা, সেরাম ইনস্টিটিউট ও জনসন অ্যান্ড জনসনের একটিও টিকা কোভ্যাক্সে যায়নি। তাই পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ।
কী এই ডেল্টা স্ট্রেন?
ডেল্টা স্ট্রেন হল বি.১.৬১৭। এটি মূলত ডবল মিউট্যান্ট স্ট্রেন। গত বছর অক্টোবরে এটি ভারতে ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ভারতে করোনা দ্বিতীয় ঢেউয়ের পিছনে আসল কারণ ডেল্টাই। ডেল্টা হল দুটি স্ট্রেনের মিশ্রণ। ই৪৮৪কিউ (E484Q) ও এল ৪২৪আর (L424R) এই দুই স্ট্রেন মিলে তৃতীয় স্ট্রেন ডেল্টা তৈরি হয়েছে। যা আগের থেকে বেশি ক্ষতিকারক।
উল্লেখ্য, ডেল্টা স্ট্রেন ফের নিজের মিউটেশন ঘটিয়ে ডেল্টা প্লাস স্ট্রেন গঠন করেছে। আগের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে যে এন৫০১ওয়াই মিউটেশন হয়েছিল, তার সঙ্গে নতুনভাবে কে৪১৭এন মিউটেশনও হয়েছে, অর্থাৎ নতুন ডেল্টা প্লাসে ভাইরাসের দুটি অভিযোজিত রূপই রয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ’, গরিব দেশগুলিকে টিকা দেওয়ার কাতর আবেদন হু-র