ঢাকা: সকাল থেকেই শোনা গেল ঢাকের বাদ্য ও শঙ্খধ্বনি-উলুধ্বনি। চলল উচ্চস্ব চণ্ডীপাঠও। তবে তাতেও আতঙ্ক, আশঙ্কার মেঘ কাটল না। বুধবার (৯ অক্টোবর) সকাল ৬টায় মণ্ডপে মণ্ডপে বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের দিয়ে বাংলাদেশে শুরু হল দুর্গাপূজো। বাংলাদেশে সাধারণত শারদীয়া উৎসবকে ঘিরে ধর্ম-বর্ণ নির্বিষেশে সকলেই উৎসবে মেতে ওঠেন। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। গত অগস্ট মাসে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। তারপর, ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়েছেন সংখ্যালঘু হিন্দুরা। গত দুমাসে হাংলার সংখ্যা প্রায় ২০০০। হামলা হয়েছে বেশ কয়েকটি মন্দিরেও। দুর্গাপুজোকে ঘিরেও রয়েছে মৌলবাদীদের হুমকি, হুঁশিয়ারি। তাই, কাঁসর-ঢাক বাজিয়ে দুর্গাপুজো শুরু করলেও রয়েছে চাপা আতঙ্কও। দুর্গাপুজোর স্বাভাবিক প্রাণচাঞ্চল্যকে ছাপিয়ে গিয়েছে ভয়।
তাই জৌলুসও অনেকটাই ম্লান। এবার বাংলাদেশে প্রায় দেড় হাজারের মত মন্ডপ কম হয়েছে। তবে রাজধানী ঢাকায় সামান্য বেড়েছে মন্ডপের সংখ্যা। সারা দেশে মোট ৩১,৪৬১টি মন্দির ও মণ্ডপে হচ্ছে দুর্গাপুজো। আয়োজকরা মহম্মদ ইউনুস প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন। শান্তিপুর্ণ দুর্গোৎসব উৎযাপন করতে চেয়েছেন। প্রতিবারের মতো এবারেও যেন পুজোয় সময়টা আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করতে পারেন, সেটা নিশ্চিত হোক চেয়েছেন। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সদস্য, রঞ্জন কর্মকার বলেছেন, “এই বছর, আমরা নমো-নমো করে দুর্গাপুজোর আয়োজন করছি, কোনও উদযাপন হবে না।”
ইউনুস প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। দুর্গোৎসবে শান্তি বজায় রাখতে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবক দল। মন্ডপে মন্ডপে মোতায়েন করা হয়েছে সেনাও। পুলিশ কর্তারা জানিয়েছেন, নির্বিঘে পুজো সম্পন্ন করতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যদিও সব ধরণের প্রস্তুতি থাকলেও আতঙ্ক আর শঙ্কা দীর হচ্ছে না বাংলাদেশি হিন্দুদের মন থেকে।
কীকরে যাবে? গত জুলাই-অগস্টে বাংলদেশি ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলন’ ছিল বৈষম্য দূর করতে। সেনা প্রহরায় পুজো করতে হলে, প্রশ্ন উঠবেই বৈষম্য কি সত্যিই দূর হয়েছে? ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকেই যে বাংলাদেশে উত্থান ঘটেছে মৌলবাদী শক্তির। তারা চেষ্টা করেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে। প্রকাশ্যে দুর্গাপুজো করারও বিরোধিতা করেছে তারা। পুজোয় ছুটি দেওয়া, মাইকে মন্ত্রোচ্চারণ – সবেতে আপত্তি জানিয়েছে। দুর্গাপুজোকে সর্বজনীন উৎসব বলতেও আপত্তি আছে তাদের। হাসিনার সময়ে যা তারা বলত গোপনে, তাই আজ বলছে বুক ফুলিয়ে। তাই, দুর্গার বোধনের পরও অভয় পাচ্ছেন না বাংলাদেশি হিন্দুরা। শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে, সবটা শান্তিতে মিটবে তো?