AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

দাবানলের মতো ছড়াচ্ছে বিক্ষোভ! এবার ৪০০০ ন্যাশনাল গার্ড, ৭০০ নৌসেনা মোতায়েন ট্রাম্পের

সোমবারও বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশকে কোথাও কোথাও রবার বুলেট ফায়ার করতে হয়েছে। প্যারামাউন্টের কাছে মুখোশ পরে পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর চালানোয় অভিযুক্তকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকাভুক্ত করেছে।

দাবানলের মতো ছড়াচ্ছে বিক্ষোভ! এবার ৪০০০ ন্যাশনাল গার্ড, ৭০০ নৌসেনা মোতায়েন ট্রাম্পের
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 10, 2025 | 1:13 PM

আশঙ্কাই সত্যি হল! লস অ্যাঞ্জেলসে বিক্ষোভ থামাতে সেনা ডাকতেই হল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। পেন্টাগন সূত্রে খবর, ট্রাম্পের নির্দেশ মোতাবেক আরও ২০০০ ন্যাশনাল গার্ড ও ৭০০ মেরিনস নামানো হচ্ছে সাদার্ন ক্যালিফের্নিয়ায় ‘শান্ত’ বলেই পরিচিত এই শহরের রাস্তায়। গত শুক্রবার থেকে এই শহরের রাস্তার দখল নিয়েছে প্রতিবাদীরা। আন্দোলন এখন আর শুধু লস অ্যাঞ্জেলসেই সীমাবদ্ধ নেই, অস্টিন, ডলাস, টেক্সাসের মতো শহরেও ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। অবৈধভাবে মার্কিন মুলুকে বসবাসকারী অভিবাসীদের তাড়াতে ট্রাম্প প্রশাসনের ধরপাকড়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন ক্রমশ ডালপালা ছড়াচ্ছে টাম্পা, ফ্লোরিডা, বস্টন, হিউস্টন, ম্যাসাচুসেট্সেও।

‘ICE’ বা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে আগেই ২০০০ ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছিল। ট্রাম্পের বক্তব্য, অবিলম্বে স্থানীয় গভর্নর ও মেয়রকে গ্রেফতার করে জেলে ঢোকানো উচিত। দুজনকেই ‘অপদার্থ’, ‘অযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্য, “মেয়র ও গভর্নরের দুজনেরই উচিত আমার সামনে হাতজোড় করে বলা, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আপনি মহান! আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমরা আপনার তুলনায় কিছুই না।”

পাল্টা শহরের রাস্তায় ট্রাম্পের সেনা নামানোর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম। তাঁর পাল্টা বক্তব্য, হঠকারী ও একনায়কের মতো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেনা ডাকার আগে সাংবিধানিক নিয়ম মাফিক তাঁর কাছ থেকে অনুমতি নেননি ট্রাম্প, অভিযোগ স্থানীয় গভর্নরের। মেয়র ক্যারেন বাস অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভের আগুনে ট্রাম্পের সেনা নামানোর সিদ্ধান্ত যেন ঘি হিসেবে কাজ করেছে। ট্রাম্প হঠকারী পদক্ষেপ না করলে এই আন্দোলন এতটা ব্যাপক হত না বলেই দাবি মেয়রের।

এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বনাম গভর্নর ও মেয়রের বাগযুদ্ধের মধ্যেই লস অ্যাঞ্জেলসে ক্রমশ দাবানলের মতো অভিবাসী উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। প্রথমদিকে এই আন্দোলন মূলত শহুরে বস্তি এলাকা থেকে শুরু হলেও, এখন গোটা শহর জুড়েই পরিস্থিতি কার্যত পুলিশ-প্রশাসনের নাগালের বাইরে।

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে মেক্সিকোর পতাকা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিবাদের প্রতীক। বেশ কয়েকটি জায়গাতেই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদেও ব্যবহার করা হচ্ছে মেক্সিকোর পতাকা। সেটা আবার ট্রাম্প বা মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের না-পসন্দ।

জেডি ভান্স বলেছেন, ‘দাঙ্গাকারীরা আমেরিকার মাটিতে বিদেশি পতাকা ওড়াচ্ছেন।’ হোয়াইট হাউস বিবৃতি দিয়েছে, ‘অভিবাসীরা মার্কিন মাটিতে বিদেশি পতাকা উড়িয়ে দাঙ্গায় ইন্ধন জোগাচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনকে অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কারে বাধা দিচ্ছে।’ কিন্তু বিবিসি সূত্রে খবর, প্রতিবাদীদের মধ্যে এমন অনেকে রয়েছেন যাঁরা আদতে আমেরিকারই বাসিন্দা। তাঁরা ট্রাম্পের ‘পাগলামি’, ‘একনায়কতন্ত্র’-র বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন। ক্যালিফর্নিয়া স্টেট্ ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক অ্যালেক্সান্দ্রো বলছেন, ‘জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিক এমন অনেক মেক্সিকান-আমেরিকান বিক্ষোভকারীর কাছে এই পতাকা তাদের ঐতিহ্যের প্রতি গর্বের প্রতীক।’

এদিনও আন্দোলনকারীরা বেশ কয়েকটি গুগলের চালক-বিহীন গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। শহরে একটা বড় অংশেই চালকবিহীন গাড়ি পরিষেবা গুগল আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে। টোকিও এলাকাতে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের নতুন করে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে। পুলিশকে লক্ষ্য করে আতশবাজি ছোড়া হয়। পাল্টা পুলিশও বিক্ষোভকারীদের হটাতে মরিচ স্প্রে করে। কোথাও পায়ে হেঁটে, কোথাও গাড়িতে চেপে ২৪ ঘন্টাই শহরে পুলিশ রুটমার্চ করছে।

সোমবারও বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশকে কোথাও কোথাও রবার বুলেট ফায়ার করতে হয়েছে। প্যারামাউন্টের কাছে মুখোশ পরে পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর চালানোয় অভিযুক্তকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকাভুক্ত করেছে। তাকে ধরিয়ে দিতে পারলে মার্কিন প্রশাসনের তরফে ৫০ হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। এত বিক্ষোভের মধ্যেও অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের ধরপাকড় জারি রয়েছে। জেডি ভান্স হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এইসব বিক্ষোভে ট্রাম্পকে দমানো যাবে না। প্রয়োজনে প্রশাসন দ্বিগুণ শক্তি প্রয়োগ করবে।

পুলিশের সদর দফতরের বাইরে বিক্ষোভকারীদের আটকাতে পুলিশ আজও রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে। এখন সাংবাদিকদেরও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট ব্যারিকেডের পিছনে আটকে রাখছে পুলিশ। সামনে বাইক বা পুলিশের গাড়ির সাহায্যে তৈরি করা হচ্ছে সেই ব্যারিকেড। গতকালই একজন সাংবাদিক ও এক চিত্রসাংবাদিক পুলিশের রবার বুলেটে জখম হন। লস অ্যাঞ্জেলসের মেয়রের অভিযোগ, ট্রাম্প নিজের দমন নীতি প্রয়োগ করে তাঁদের শান্ত শহরকে একটা পরীক্ষাগার বা ‘টেস্ট কেস’-এ পরিণত করেছেন। এই শহর চিরকালই অভিবাসীদের শহর এবং আমরা সেটা নিয়ে গর্ব করি, বলছেন স্থানীয় মেয়র।