ফ্রান্সে পড়ুয়াদের জন্য বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন, কোথায় দাঁড়িয়ে ভারত?

নারীদের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া ঋতুস্রাব। তার জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন (Sanitary Napkin) অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

ফ্রান্সে পড়ুয়াদের জন্য বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন, কোথায় দাঁড়িয়ে ভারত?
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 25, 2021 | 1:19 PM

প্যারিস: ‘পিরিয়ড পোভার্টি’, শব্দটা খুব সহজ একটা শব্দ নয়। নারীদের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া ঋতুস্রাব। তার জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন (Sanitary Napkin) অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু বিশ্বের একাধিক প্রান্ত রয়েছে, যেখানে এখনও স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহারের কোনও প্রচলনই নেই। এখনও সেই অঞ্চলগুলির ভরসা কাপড়। স্যানিটারি ন্যাপকিনের জন্য খরচ করার টাকা হয়ত তাঁদের কাছে নেই, আর থাকলেও তা ব্যবহার করার প্রবণতা নেই। যার জন্য বাধে অনেক দূরারোগ্য ব্যাধি। সেই ‘পিরিয়ড পোভার্টি’ মুছে ফেলতেই উদ্যোগ নিল ফ্রান্স সরকার।

ইমানুয়েল ম্যাক্রঁর সরকার মঙ্গলবার জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে ‘পিরিয়ড পোভার্টি’ দূর করতে সব ধরনের পিরিয়ড পণ্য বিনামূল্যে বিতরণ করবে সরকার। সে দেশের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী ফেডরিক ভিদাল জানিয়েছেন, খুব সম্প্রতি পড়ুয়াদের থাকার জায়গা ও স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যাম্পন, স্যানিটারি ন্যাপকিন-সহ অন্যান্য দ্রব্যের মেসিন বসাবে সরকার। তিনি জানিয়েছেন, পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই দেশজুড়ে পিরিয়ড পণ্য বিনামূল্যে বিতরণ করার ব্যবস্থা করতে চাইছে ম্যাক্রঁর সরকার।

নভেম্বর মাসে স্কটল্যান্ড বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে সব ধরনের পিরিয়ড পণ্য বিনামূল্যে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল। ইংল্যান্ডেও সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে বিনামূল্যে পিরিয়ড পণ্য দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। একই পথে খুব সম্প্রতি হাঁটতে চলেছে নিউ জিল্যান্ডও। স্কটল্যান্ড, ফ্রান্স, নিউ জিল্যান্ড, ইংল্যান্ড যখন এই পথে হাঁটছে, তখন ভারত কোথায় দাঁড়িয়ে? এ দেশেও তো একাধিক এমন অঞ্চল রয়েছে, যেখানে ঋতুস্রাবের জন্য ব্যবহৃত হয় কাপড়। সে ক্ষেত্রে কোন পথে এগোচ্ছে ভারত?

২০১৫-১৬ সালের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য বলছে পশ্চিমবঙ্গের ৫৪ শতাংশ মহিলা যাদের বয়স ১৫ থেকে ২৪-এর মধ্যে তাঁরা ঋতুস্রাবের সময় সুস্বাস্থ্যকর পদ্ধতি ব্যবহার করেন। গ্রামীণ বাংলায় এই হার মাত্র ৪৭.৬ শতাংশ। সারা ভারতে ৫৭.৬ শতাংশ মহিলা ঋতুস্রাবের সময় সুস্বাস্থ্যকর পদ্ধতি ব্যবহার করেন। গ্রামীণ এলাকায় এই হার ৪৮.২ শতাংশ। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখনও ভারতকে এই বিষয়ে অনেকটা এগোতে হবে। সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা উচিত সরকারের। যদি ফ্রান্স, স্কটল্যান্ডের মতো একই পথে ভারত হাঁটে তাহলে এই সমস্যা দূর হতে পারে।

অধ্যাপক সিমন্তিনী মুখোপাধ্যায় এই বিষয়ে জানান, ভারতেও এই ধরনের পদক্ষেপ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ ভারত এই বিষয়ে এখনও অনেকটা পিছিয়ে। তা স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট দেখলেই বোঝা যায়। তিনি এ-ও বলেন, “প্রত্যেক স্কুলে বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে খুব একটা খরচ হবে না বলেও মনে হয়।” এই বিষয়ে অধ্যাপক মন্দ্রিতা ঘোষ জানান, এই বিষয়ে সরকারের সচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার। এখনও গ্রামের এমন অনেক অঞ্চল রয়েছে, যেখানে মহিলারা দিন মজুরের কাজ করেন, সে ক্ষেত্রে কাপড় ব্যবহার করায় তাঁদের ইউটিআই সংক্রমণের সুযোগ বেড়ে যায়। এই বিষয়ে যদি সচেতনতা বৃদ্ধি করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা যায়, তাহলে নিঃসন্দেহে তা উপকারী হবে। স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি নিয়ে আরও অনেক বেশি করে সচেতনতা বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলেও জানান মন্দ্রিতা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অমিতাভ সরকারেরও একই মত। তাঁর কথায়, “শুধু সরকারি স্কুল-কলেজ নয়, বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও এই বিষয়ে পদক্ষেপ করা দরকার।”

আরও পড়ুন: নীরব মোদী ভারতে ফিরছেন কি না আজই জানাবে ব্রিটেনের আদালত