Fuel Price Hike: লাফিয়ে বাড়ছে জ্বালানির দাম, এবারের তেল-সঙ্কট কি ইতিহাসকেও ছাপিয়ে যাবে?

Fuel Price Hike: করোনার পর একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। ঝোঁপ বুঝে কোপ মেরেছে, তেল উত্‍পাদকদের সংগঠন ওপেক। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম সেঞ্চুরি ছাপিয়ে ক্রমশই এগিয়ে চলেছে।

Fuel Price Hike: লাফিয়ে বাড়ছে জ্বালানির দাম, এবারের তেল-সঙ্কট কি ইতিহাসকেও ছাপিয়ে যাবে?
ছবি- প্রতীকী চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 31, 2022 | 9:10 PM

প্র দী প চ ক্র ব র্ত্তী

অনেকেই বলে থাকেন, এই যুগে ‘তেল না দিলে’ নিজের কাজ হাসিল করা কঠিন। তাই যে কোনও ক্ষেত্রেই অপ্রয়োজনীয় তৈলমর্দনকে অনেকেই বাঁকা চোখে দেখেন। সামাজিক জীবনে বা রান্নাঘর, অতিরিক্ত তেল ব্যবহার কিন্তু সমস্যায় ফেলতে পারে। তবে বিশ্ব অর্থনীতিতে এই তেলই কিন্তু সব থেকে বেশি দামী। রক্ত যেমন মানবদেহে অপরিহার্য, ঠিক তেমনই জাতীয় বা আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে জ্বালানি তেলের গুরুত্ব ব্যাপক। যেভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে, তাতে যাদের গাড়ি আছে এবং ঘন ঘনই পেট্রোল পাম্পে তেল ভরতে যেতে হয়, তাদের ক্ষেত্রে তেলের মিটারের উর্ধ্বগতিক পাশে টাকার অঙ্ক দেখে রক্তচাপও বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি এমনই যে এখন আর মাস মাইনেতে সংস্কার চালানোই দুষ্কর। ক’দিন পর পরিস্থিতি হয়ত এমন দিকে যখন গাড়ির তেল কিনতে, ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিটে হাত দিতে হবে।

করোনার পর একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। ঝোঁপ বুঝে কোপ মেরেছে, তেল উত্‍পাদকদের সংগঠন ওপেক। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম সেঞ্চুরি ছাপিয়ে ক্রমশই এগিয়ে চলেছে। তার ওপর ইউক্রেনে সেনা ঢুকিয়ে ঘোলা জল আরও গুলিয়ে দিয়েছে রাশিয়া। জ্বালানির অগ্নিমূল্যে জ্বলছে গোটা বিশ্ব। উন্নয়নশীল দেশগুলির অধিকাংশই জ্বালানির জন্য অন্যের ওপর নির্ভরশীল। জোগানের অভাবে আকাশ ছুঁয়েছে চাহিদা। শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। সেদেশের বিদেশী মুদ্রার ভাঁড়ার তলানিতে। দিনে দশ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। অন্যদিকে কিউবায় গ্যাস স্টেশনগুলির সামনে লম্বা লাইন। সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে গাড়ি। কিউবা থেকে মাত্র ৯০ মাইল দূরত্বে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি, আমেরিকা। অর্থনীতির গোপন নথি বলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেলের ভাণ্ডারগুলি আমেরিকার নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। তা সত্ত্বেও জ্বালানি আমদানি করতে হচ্ছে জো বাইডেনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। জ্বালানি সঙ্কট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া বাজারেও প্রভাব ফেলেছে। মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে। তারওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই রাশিয়ার থেকে তেল কেনার সিদ্ধান্তে অনড় ভারত সহ একাধিক দেশ। বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব কমছে ডলারের। ডলারের মতোই কঠিন পরিস্থিতিতে ইউরো এবং পাউন্ড নির্ভর অর্থনীতিও।

ইউক্রেন আক্রমণের পর রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রায় গোটা পশ্চিম ইউরোপ। কিন্তু, জ্বালানির জন্য প্রথম বিশ্বের অনেক দেশই রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। নীতিগতভাবে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমানো হয়েছে ঠিকই, তবে বিকল্প জোগান না থাকায় গোটা ইউরোপে জ্বালানি সঙ্কট মাথা তুলতে শুরু করেছেন। এই মুহূর্তে কোনও দেশই স্বস্তিতে নেই। শক্তিক্ষেত্রে এই সঙ্কট মনে করিয়ে দিচ্ছে অতীতের বিপর্যয়গুলিকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পাঁচের দশকে প্রথম সঙ্কটের মুখোমুখি হয় বিশ্ব। ১৯৫১ থেকে ১৯৫৪ অবধি ইরানে তীব্র তেল সঙ্কট দেখা গিয়েছিল। ইরান সরকার তেল সম্পদের জাতীয়করণ করে। বিশ্বের তেল বাজারে তিনটি অর্থবর্ষ ধরে এর কুপ্রভাব দেখা গিয়েছিল। বিশ্বে পরবর্তী জ্বালানি সঙ্কট হয় সাতের দশকে, তবে এবার ইরান নয় পারস্য উপসাগরের আর এক প্রতিবেশি সৌদি আরবে তীব্র তেল সঙ্কট দেখা গিয়েছিল। ওপেক সদস্য আরব দেশগুলি এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।

ইজরায়েলের বন্ধু দেশগুলিতে তেল রফতানি করতে রাজি হয়নি আরব বিশ্ব। এর জেরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম প্রায় ৩০০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। সাতের দশকে আবার বিশ্ববাজারে জ্বালানি সঙ্কটের অভিশাপ আছড়ে পড়েছিল। এবারও ইরানের কারণে সেই তেল সঙ্কট দেখা গিয়েছিল। ১৯৮০ সালে ইরানে ইসলামিক বিপ্লব হয়। তারপরেই ইরানের সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল পশ্চিমী বিশ্ব। এর জেরে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রায় ১০০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। ১৯৯০ সালে ইরাক, কুয়েত দখল করলে ফের তেলের সঙ্কট হয়। দীর্ঘ ৯ মাস এই সঙ্কট স্থায়ী ছিল। ২০০০ সাল থেকে দশ বছর একাধিক কারণে অপরিশোধিত তেলের দাম ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পেয়েছিল। তার মধ্যে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপনাস্ত্র সঙ্কট, ইজরায়েল লেবানন যুদ্ধ, ইরানের পরমাণু সঙ্কট, হ্যারিকেন ক্যাটরিনা ও বিশ্বজোড়া আর্থিক মন্দা এই সঙ্কট বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছিল। ২০২০ সালে রাশিয়া ও সৌদি আরবের তেল প্রতিযোগিতাও অপরিশোধিত তেলের বাজারদর বাড়িয়ে দিয়েছিল। তবে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে এবারের তৈরি হওয়া সঙ্কট সেই সব পুরানো ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে পারে।

আরও পড়ুন আগা গোড়া: অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি ইমরান খান, কেন এই পরিস্থিতি?