আগা গোড়া: কিছুতেই গদি ছাড়বেন না ইমরান! তিন মাসেই হবে পাকিস্তানের ‘ভাগ্য নির্ধারণ’

Imran Khan: বিশ্লেষকদের মতে পরিস্থিতি যদি ভোট অবধি যায় তবে ইমরান খানের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী কারণ সংখ্যার বিচারে বিরোধী দলগুলি ইমরানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে।

আগা গোড়া: কিছুতেই গদি ছাড়বেন না ইমরান! তিন মাসেই হবে পাকিস্তানের 'ভাগ্য নির্ধারণ'
গ্রাফিক্স: টিভি৯ বাংলা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 04, 2022 | 8:04 PM

ঘোরতর বিপাকে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তাঁর রাজনৈতিক জীবন বড়সড় প্রশ্ন চিহ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে। কারণ মনে করা হচ্ছে ইমরান খানকে যে কোনওভাবেই প্রধানমন্ত্রীর পদ খোয়াতে হবে। ইতিমধ্যে ২৮ মার্চ পাক সংসদে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ হয়েছে। পাকিস্তানের বিরোধীদলগুলি ঐক্যবন্ধভাবে পাক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেছে। আগামী ৩ এপ্রিল অনাস্থা প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে পাক জাতীয় সংসদে ভোটাভুটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ডেপুটি স্পিকার এই প্রস্তাবকে “সংবিধান বিরোধী” আখ্যা দিয়ে খারিজ করে দেন। আপাতত পাকিস্তানের পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়েছে ইমরান খানের নির্দেশে। আগামী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি কার্যনিবাহী প্রধানমন্ত্রী বেছে নেওয়ার জন্য শাসক ও বিরোধী দলের মতামত চেয়েছেন। তবে কোন কোন ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে আজকের এই পরিস্থিতির মুখোমুখি ইমরান খান? এক নজরে দেখে নেওয়া যাক… (সর্বশেষ পাওয়া তথ্য প্রথম দিকে)

যড়যন্ত্রের অভিযোগ ইমরানের:

অনাস্থা প্রস্তাব আনার পর থেকেই দাবি করেছিলেন তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে। সরকারকে গদিচ্যুত করতে ‘বিদেশি শক্তি’র হাতও রয়েছে। রবিবার পাক সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল ও সংসদ ভেঙে দেওয়ার পরই মুখ খুললেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। রবিবারই তিনি দাবি করেন, মার্কিন কূটনীতিবিদ ডোনাল্ড লু-ই তাঁর ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের সরকার পতনের পরিকল্পনা করেছিলেন। অনাস্থা প্রস্তাব আনাও তাঁরই পরিকল্পনা।

প্রধানমন্ত্রী নন ইমরান!

পাকিস্তানের ক্যাবিনেট সচিবালয়ের তরফে ইমরান খানকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। যদিও এর প্রেক্ষিতে ইমরান খানের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

সুপ্রিম কোর্টে গেল বিরোধীরা:

এত সহজে হার মানতে নারাজ বিরোধীরাও। সংসদ ভেঙে দেওয়ার পরই তারা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। দেশের শীর্ষ আদালতের তরফে সমস্ত আবেদনকারীদের নোটিস পাঠানো হয়েছে। সংসদ ভেঙে দেওয়া ও অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল করে দেওয়ার বিরোধিতায় যে পিটিশনগুলি দাখল করা হয়েছে, আজ, সোমবার অবধি তার শুনানি  স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে।

তিন মাসের মধ্যেই হবে নির্বাচন:

ইমরান খানের সুপারিশ মেনেই প্রেসি়ডেন্ট আরিফ আলভি পাক সংসদ ভেঙে দেন। এরপরই সরকারের তরফে জানানো হয়, আগামী তিন মাসের মধ্যেই নির্বাচন করা হবে। সেখানেই বেছে নেওয়া হবে দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রী কে হবেন।

আগাম নির্বাচনের দাবি ইমরানের:

অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ হওয়ার পরই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ইমরান খান। তিনি বলেন, “সরকার পতনের জন্য যে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, তা ভেস্তে গিয়েছে। জনগণের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত তারা কী চায়। টাকা দিয়ে মানুষ কেনার জেরেই এমনটা হয়েছে। ওই টাকা ভাল কিছুর জন্য রাখুন। আমি জাতিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে অনুরোধ করছি। আপনারা এই জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবেন, দুর্নীতিবাজ বা বিদেশিরা নয়।”

খারিজ অনস্থা প্রস্তাব:

৩ এপ্রিল পাকিস্তানের সংসদে আস্থা ভোট হওয়ার কথা থাকলেও, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দেন পাক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ডেপুটি স্পিকার কাশিম খান সুরি। জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যুতে এই প্রস্তাব খারিজ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

জাতির উদ্দেশে ভাষণে কী বললেন ইমরান খান?

গতকাল রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। জাতির উদ্দেশে ভাষণে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেন পাক প্রধানমন্ত্রী। ইমরান খান জানিয়েছেন, দেশে বিদেশী শক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত তিনটি কাঠের পুতুল রয়েছে যাঁরা নির্দিষ্ট একজনকে ক্ষমতায় বসাতে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরাতে চাইছে। তাঁদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে ইমরান বলেন, তাঁরা কিছুই করতে পারবেন না, কারণ তিনি ইস্তফা দেবেন না। চ্যালেঞ্জের সুরে ইমরান জানিয়েছেন, তিনি জীবনে হারতে শেখেননি তাই এবারও তিনি শেষ বল অবধি খেলেবেন। এদিনের ভাষণ থেকে তিনি ঈশ্বরকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার, নাম না করে ইমরান বারবার আমেরিকাকেও নিশানা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেছিলেন, তবে কাশ্মীর নিয়ে ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করায় তিনি মন্তব্য করতে বাধ্য হয়েছেন।

শেষ পাওয়া খবর

গতকাল জাতির উদ্দেশে ইমরান খানে ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল। প্রথম থেকেই তিনি জানিয়ে আসছিলেন, তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে হঠাতে টাকা দিয়ে সংসদ সদস্যদের সমর্থন আদায় করা চেষ্টা করছে। এবং এক পিছনে বিদেশী শক্তির মদত রয়েছে। গতকাল প্রমাণসহ সব চক্রান্ত ফাঁস করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ইমরান খান। গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল, সম্ভবত তিনি পদত্যাগ করতে পারেন। কিন্তু কাল জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়া কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তিনি তা বাতিল করেন। আজ তাঁর ভাষণ দেওয়ার কথা। ইমরান খান জাতির উদ্দেশে ভাষণ কী বলেন, সেটাই এখন দেখার।

পাক সংসদে সংখ্যার হিসেব

৩৪২ আসনের পাক সংসদে সংখ্যার বিচারেও পিছিয়ে রয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এককভাবে ১৫৫ টি আসনে জিতলেও সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৭২ জন সদস্য ইমরান খানের দলের ছিল না। সেই সময় এমকিউএম, বিএপির মতো দলগুলির সরকার গঠন করতে ইমরানকে সমর্থন করে। সরকার বাঁচাতে ইমরানের ১৭২ জনের সমর্থন প্রয়োজন, কিন্তু তাঁর হাতে এখন ১৫৫ জন সংসদ সদস্য রয়েছে। সেখানে বিরোধীদের হাতে ১৬৩ জন সাংসদের সমর্থন রয়েছে এবং ইমরানের জোটসঙ্গী এমকিউএমের ৭ সংসদ সদস্যও অনাস্থা ভোটে বিরোধীদের আনা প্রস্তাবকেই সমর্থন করবেন বলেই জানিয়েছেন।

পাক সেনা প্রধান জেনারেল বাজওয়ার ভূমিকা

পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে ইমরানের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য পাক সেনা বাহিনী তথা সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়ার বড় হাত রয়েছে। অনেকেই দাবি করেন আগেই ইমরান খান সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু সেনার সমর্থন সেই সময় থাকার কারণে সরকার বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিলেন ইমরান। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই প্রধান ফইজ হামিদকে সেই পদ থেকে সরিয়ে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকেই সংঘাতের শুরু। অনেকেই মনে করেন বিরোধী দলগুলিকে একত্রিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল পাক সেনা বাহিনী। এমনকী অনাস্থা বিষয়ক চিত্রনাট্যও পাক সেনার রচনা।

ক্ষমতা বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টা ইমরানের

ক্ষমতা বাঁচানোর জন্য মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন ইমরান। যে পাক সেনাবাহিনীর সহায়তায় একসময় তিনি ক্ষমতায় এসেছিল, সেই সেনা বাহিনী এক সময় ইমরান খানের চরম বিরোধী হয়ে উঠেছিল। সেনা প্রধান জেনারেল বাজওয়ার সঙ্গে দেখা করেও ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলেন পাক ক্রিকেট দলে প্রাক্তন অধিনায়ক। কিন্তু সেনাবাহিনী তাঁকে পদত্যাগ করতে বলে। শরিক নেতাদের মানভঞ্জনেও কম চেষ্টা করেননি ইমরান, তবে সেখানেও তিনি ব্যর্থ তাঁর সরকারের প্রধান শরিক এমকিউএমও বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছে।

ইমরানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও সম্মিলিত বিরোধীরা

২০১৮ সালে ইমরান খান যখন সরকারে এসেছিল, তখন তিনি ‘নতুন পাকিস্তান’ বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই সময় পাকিস্তারে আর্থিক পরিস্থিতি খুব একটা ভাল ছিল না। ক্ষমতা এসে পরিস্থিতি চাঙ্গা করতে ৪ জন অর্থমন্ত্রী নিয়োগ করেছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী। তবে বিরোধীদের দাবি দেশের আর্থিক অবস্থার তো কোনও উন্নতি হয়নি বরং আর্থিক পরিস্থিতি আরও তলানিতে পৌঁছে গিয়েছে। এমনকী আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএমফ পাকিস্তানকে অর্থ সাহায্যের ঘোষণা করলেও সরকার তাদের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ার কারণে তারা টাকা দিতে অস্বীকার করে। এমনকী ইমরান সরকারের বিদেশ নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। ইমরান যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন সেই সময় বিরোধী দলগুলি বিভক্ত ছিল এবং প্রধান বিরোধী নেতাদের ওপর দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। তবে বর্তমানে তারা সবাই ইমরানের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ।

আরও পড়ুন TV9 Explained: পাকিস্তানে জটিল রাজনৈতিক অঙ্ক! কেন এই পরিস্থিতি হল ইমরান খানের?

আরও পড়ুন Imran Khan: খুন করা হতে পারে ইমরানকে! আল্লার ওপরেই ভরসা করছেন পাক প্রধানমন্ত্রী