Samantha Smith: আমেরিকা-রাশিয়ার মধ্যে ভয়াবহ পরমাণু যুদ্ধ থামিয়ে দিয়েছিল একটি মেয়ের চিঠি
Samantha Smith: মাত্র ১০ বছরের একটি মেয়ে। চিঠি লিখতে ভালবাসে। সেই চিঠি কি না বিশ্বযুদ্ধ থামিয়ে দিল? এই ইতিহাস অনেকেরই এখনও অজানা। মালালা, গ্রেটা থানবার্গের ঢের আগে সামান্থা স্মিথ মিলিয়ে দিয়েছিল দুই যুযুধান পক্ষকে। আজ সেই ইতিহাসকেই ফিরে দেখা।

পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাইকে ২০১২-য় তালিবানরা মাথায় গুলি করেছিল। কারণ, সে কন্যাসন্তানদের পড়াশোনার দাবিতে সরব হয়েছিল। ২০১৮-য় গ্রেটা থানবার্গ পরিবেশ বাঁচানোর আর্তি তুলে বিখ্যাত হয়। এই দু’জনেই যখন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের নজরে আসে তাদের বয়স তখন ১৫-র আশপাশে। কিন্তু এই দু’জনের ঢের আগে, ১৯৮২-তে মাত্র ১০ বছরের এক মার্কিন কন্যা বিশ্বজুড়ে সংবাদপত্রের শিরোনামে জায়গা করে নেয়। ঠান্ডা যুদ্ধের আবহে আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে কার্যত পরমাণু যুদ্ধ থামিয়ে দেয় তার ছোট্ট একটা চিঠি। মেয়েটির নাম সামান্থা রিড স্মিথ (Samantha Reed Smith)। জন্ম জুন মাসে, ১৯৭২-এ। বেঁচে থাকলে আগামী মাসে তার বয়স হত ৫৩ বছর।
কী ঘটেছিল? কীভাবে দুই মহাশক্তিধর দেশের যুদ্ধ থামিয়ে দেয় মাত্র ১০ বছরের সামান্থা?
জানতে ফিরে যেতে হবে আশির দশকে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট তখন রোনাল্ড রেগান। অন্যদিকে, অবিভক্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের মসনদে তখন য়ুরি অ্যান্ড্রোপভ। দুই দেশের মধ্যে বিবাদ চরমে পৌঁছেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যমে তখন প্রায় রোজই খবর হচ্ছে, এই বুঝি পরমাণু যুদ্ধ শুরু হয় হয়! ১৯৮২-র নভেম্বরে টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে নয়া রুশ নেতা য়ুরি অ্যান্ড্রোপভকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই দেশই পরমাণু হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মা বাড়িতে ম্যাগাজিন নিতেন। সামান্থার নজরে আসে সেই খবর। ছবি দেখে চেনে সোভিয়েতের কমিউনিস্ট পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি য়ুরি অ্যান্ড্রোপভকে। সামান্থা চিঠি লিখতে খুব ভালবাসত। মাত্র ৫ বছর বয়সেই রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে চিঠি লিখে তাঁর প্রশংসা করেছিল। পরমাণু যুদ্ধের ফলে কী কী ক্ষতি হতে পারে, কীভাবে মার্কিনিরা সাবধানে থাকবেন সে খবর দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে ছোট্ট সামান্থা।
বাবা-মাকে জানায়, সোভিয়েত নেতা য়ুরি অ্যান্ড্রোপভকে চিঠি লিখবেন। ম্যানচেস্টারের ক্লাস ফাইভে পড়া মেয়ের কথা শুনে প্রথমে মা-বাবা হেসেই উড়িয়ে দেন। কিন্তু মেয়ের জোরাজুরিতে শেষে তাকে একটি চিঠি লিখতে দেন। ভাবেন, জেদের বশে হয়তো মেয়ে বলছে, পরে ভুলে যাবে। আর এই চিঠিকেই বা পড়বে? ১৯৮২-র চিঠিতে সামান্থা রুশ নেতাকে লেখেন–
‘আমার নাম সামান্থা স্মিথ, আমার বয়স ১০। তোমার নতুন পদের জন্য অভিনন্দন। কিন্তু আমি চারদিকে দেখছি, শুনছি নাকি আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে পরমাণু যুদ্ধ হবে? সত্যি কি তোমরা দু’জনে একে অপরের বিরুদ্ধে পরমাণু যুদ্ধ শুরু করবে? যদি তুমি যুদ্ধ না চাও তাহলে অন্তত এটা জানাও যে কীভাবে এই পরিস্থিতি সামলানোর কথা ভাবছো? আচ্ছা সব প্রশ্নের উত্তর না দিতে চাইলে শুধু এটা বলো তুমি এই বিশ্বকে বা আমার দেশকে কবজা করতে চাও কেন? ঈশ্বর এই দুনিয়া তৈরি করেছে যাতে আমরা সকলে একসঙ্গে মিলেমিশে শান্তিতে থাকতি পারি, ঝগড়ার জন্য নয়।’
নাছোড়বান্দা মেয়ের আবদার মেনে বাবা সেই চিঠি পোস্টও করে দেন। তিনিও হয়তো এটাই ভেবেছিলেন, ছোট এক মেয়ের চিঠি নিশ্চয় কেউ খুলেও দেখবে না। কিন্তু ১৯৮৩-তে রুশ সংবাদপত্র প্রাভাডা-য় আচমকাই প্রকাশিত হয় সামান্থার চিঠি। ব্যাস! হইচই পড়ে যায় মার্কিন গণমাধ্যমে। সামান্থার চিঠির উত্তর দেন খোদ রুশ নেতা য়ুরি অ্যান্ড্রোপভ। লেখেন, ‘সত্যি পরমাণু অস্ত্র খুবই বিপজ্জনক। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো, আমাদের দেশের নীতি নয়, কারও বিরুদ্ধে প্রথম পরমাণু হামলা চালানোর।’ একইসঙ্গে চিঠিতে খুদে সামান্থার ব্যাপক প্রশংসা করে তাকে মা-বাবার সঙ্গে মস্কোতে আসার আমন্ত্রণও জানানো হয়। ১৯৮৩-র জুলাইতে সপরিবারে সামান্থা দু সপ্তাহের জন্য সোভিয়েত যায়। ঘুরে দেখে মস্কো, লেনিনগ্র্যাড। রাশিয়ার ছোট ছোট শিশুদের ক্যাম্পে ঘুরে আসার পর আমেরিকায় ফিরে যখন মার্কিন টিভিতে সাক্ষাৎকার দিচ্ছে সামান্থা, ততদিনে গোটা দুনিয়া জেনে গেছে তার কীর্তির কথা। তবে ফিরে আসার পর কেউ কেউ সামান্থাকে রুশ চর বলতেও ছাড়েনি। কিন্তু আমেরিকার মানুষ ততদিনে সামান্থাকে টিভিতে দেখতে, তার কথা শুনতে ভালবেসে ফেলেছে। আগামী বছরে তাকে আমেরিকার goodwill ambassador হিসাবে নিয়োগ করা হয়।
বাবার সাহায্যে সামান্থা এই অভিজ্ঞতার কথা লেখে তার বই – Journey to the Soviet Union (1985)। ১৯৮৩-র ডিসেম্বরে জাপানের কোবে-তে International Children’s Symposium -এ বক্তব্য রাখতে গিয়ে সামান্থা বলে, ‘মার্কিন নেতারা তাঁদের নাতি-নাতনিকে দুই সপ্তাহ সোভিয়েত ও সোভিয়েতের নেতারা তাঁদের নাতি-নাতনিদের দু সপ্তাহে আমেরিকাতে রেখে যাক। দুই দেশের নেতারা নিশ্চয় তাদের নাতি-নাতনিদের উপরে বোমাবর্ষণ করবেন না।’ ১৯৮৪-র ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন টিভি চ্যানেলে সামান্থা বিশেষ শো উপস্থাপনা শুরু করে, যার নাম Samantha Smith Goes to Washington: Campaign ’84। তারপর একে একে আরও শোয়ের অফার আসতে থাকে সামান্থার কাছে। যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির প্রতীক হয়ে ওঠে ছোট্ট সামান্থা স্মিথ। একটু শ্যুটিং সেরে ১৯৮৫-র অগাস্টে লন্ডন থেকে ফেরার সময় আচমকাই সামান্থা ও তার বাবার প্লেন দুর্ঘটনার মৃত্যু হয়। সামান্থার মৃত্যুর পর তার সম্মানে সোভিয়েত পোস্টাল স্ট্যাম্প, একটি হিরে এমনকী একটি রুশ উপগ্রহের নামও সামান্থার নামে রাখা হয়। মৃত্যুর পর সামান্থার মা তার নামে Samantha Smith Foundation তৈরি করে যে সংস্থা বিশ্বশান্তি, মানবতা ও দুঃস্থদের জন্য কাজ করে।
প্রতিবেদনটি সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে লেখা।





